একাত্তোরে বুদ্ধিজীবী হত্যায় ‘পার্শ্ববর্তী দেশকে’ দায়ী করেছেন বিএনপির এক নেতা। বিএনপির ওই নেতার দাবি একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের জন্য আল-বদর বা আল-শামস বাহিনী নয় বরং ‘পার্শ্ববর্তী দেশের’ লোকজনই দায়ী। বিষয়টি নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য বিষয়টি বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নজরে আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল রোববার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপু এই বিতর্কিত দাবি করেন। সোমবার, (১৫ ডিসেম্বর ২০২৫) বিএনপি নেতার এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ালে শুরু হয় আলোচনা ও সমালোচনা।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব টিপু তার বক্তব্যে দাবি করেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য একটি রাজনৈতিক দলকে দায়ী করা হলেও তা সঠিক ইতিহাস নয়। তিনি বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর তো কোনো আল-বদর, আল-শামস আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেন নাই। হত্যা করেছিল (তারা), যারা সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হবে কি হবে না বা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করতে চেয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেদিন পার্শ্ববর্তী কোনো এক দেশের লোকেরা পূর্ব-পাকিস্তান ও পশ্চিম-পাকিস্তানের মধ্যে যে যুদ্ধ বেঁধেছিল সেটাকে টার্গেট করে আমাদের বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যা করা হয়েছিল।’
বক্তব্যে বিএনপির ওই নেতা জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যখন আপনাদের দোষারোপ করে ইতিহাস লেখা হয়, আপনারা কেন সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন না?’ তিনি আরও বলেন, ইতিহাসের পাতায় তাদের বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তাই ইতিহাস সংশোধনের দাবি তাদেরই জানানো উচিত।
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত পৃথক আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারও একই সুরে কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ভারতীয় সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ইতিহাসের নানা তথ্য ও সত্য সামনে আসায় প্রমাণ হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ড ভারতীয় সেনা ও গোয়েন্দাদের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল।’
নারায়ণগঞ্জের সভায় উপস্থিত অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা বিএনপি নেতার এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। এনসিপি নেতা আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, ‘টিপু ভাই যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন আমরা তখন অবাক হয়েছি। প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসকে ধারণার ওপর ভিত্তি করে আপনি প্রশ্ন তুলতে পারেন না।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের দায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এবং এ নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই।
গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল ইসলাম সুজন বলেন, যারা এ বিষয়ে বিতর্ক তৈরি করছে, তারা সচেতনভাবে ইতিহাসের মিথ্যাচার করছে।
সোমবার, বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে আবু আল ইউসুফ খান টিপু দাবি করেন, এটি তার ব্যক্তিগত মতামত, দলীয় নয়। তিনি বলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবীদের চিনতো না। তখন যুদ্ধটাকে আরও উসকে দিতে এবং দেশকে মেধাশূন্য করতে তৃতীয় একটি পক্ষ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে।’
তবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত না। এবং দলও এই কনসেপ্টের সঙ্গে একমত না।’ তিনি আরও জানান, বিষয়টি দলের সিনিয়র নেতাদের নজরে আনা হয়েছে এবং তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।