মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত চক্র ‘বিজয়ের নতুন ইতিহাস’ রচনার অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ক্ষমতাচ্যুত আগের সরকারের ‘অপরিণামদর্শী অপচেষ্টার’ কারণে পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তারেক বলেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই হবে, এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।
সোমবার,(১৫ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজধানী ঢাকায় বিএনপি আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার শুরুতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
সভায় ফেব্রুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে তারেক বলেন, ‘ভয়ের কোনো কারণ নেই নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই হবে।’ নির্বাচনী প্রচারণায় নিজে অংশ নেবেন বলেও ঘোষণা দেন তিনি। নির্বাচন বানচালে ভীতির পরিবেশ তৈরি প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি বিজয় দিবসের এই গৌরবজনক সময় দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, যারা স্বাধীনতা প্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণকে ভয় দেখাতে চায় তারা অবশ্যই ব্যর্থ হবে ইনশাআল্লাহ।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘পরাজিত চক্রকে মোকাবিলায় প্রতিশোধ প্রতিহিংসার পরিবর্তে বিজয়ের সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। এজন্য স্বনির্ভর, সমৃদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই হোক এবারের বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।’ তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে, যতদিন পর্যন্ত এ রাষ্ট্রের জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করা না যাবে ততদিন পর্যন্ত স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র টেকসই ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো যাবে না।
৫৪তম বিজয় দিবসের আগের দিন এ বিষয়ক আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বারবার বিকৃত হওয়ার কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘পতিত, পলায়নপর একটি চক্র শুধুমাত্র নিজেদের হীন দলীয় স্বার্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়েছিল। স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে চেষ্টা করেছিল। অনেক ক্ষেত্রে দলীয় ইতিহাসে তারা পরিণত করেছিল।’সেই ধারাবাহিকতায় এখনও চক্রান্ত অব্যাহত থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পতিত চক্রের অপরিণামদর্শী অপচেষ্টার কারণে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এখন আবার মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত একটি চক্র বিজয়ের নতুন ইতিহাস রচনার অপচেষ্টা তারা করছে।’
জনগণকে ক্ষমতাহীন করে রাষ্ট্রযন্ত্র কখনোই ক্ষমতাশীল হয়ে উঠতে পারে না মন্তব্য করে তারেক বলেন, ‘জনগণকে ক্ষমতাবান করার পূর্ব শর্তই হচ্ছে জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, জনগণ জবাবদিহিমূলক সরকারপ্রতিষ্ঠা এবং এ কারণেই বিএনপির সব সময় রাষ্ট্র এবং সরকারের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতেই যে কোনো মূল্যে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে সব সময় দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে।’
তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কেবলমাত্র একটি পরীক্ষামূলক বা অভিজ্ঞতা অর্জনের নির্বাচন নয়। এই নির্বাচন অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এবারের নির্বাচনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাদ-আশা-আকাক্সক্ষা স্বার্থ এবং সম্ভাবনা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, যুব দলের নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান বক্তব্য দেন।