১৯৭১ সালে যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, সেই শত্রুরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। তারা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অটুট রাখবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ‘জুলাই বিপ্লবের’ যোদ্ধাদের কোনো ঝুঁকির মুখে পড়তে দেবে না, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন দলটির নেতারা।
গণতন্ত্রের পতাকা নিয়ে ২৫ ডিসেম্বরই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: মির্জা ফখরুল
গোলাম আযম ও নিজামীকে ‘সূর্যসন্তান’ আখ্যা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত অপমান করেছে জামায়াত: মির্জা আব্বাস
মঙ্গলবার,(১৬ ডিসেম্বর ২০২৫) বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এবং রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ষড়যন্ত্র নস্যাতের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘স্বাধীনতার শত্রুরা যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে একাত্তর সালে অবস্থান নিয়েছিল, আজকে তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিকামী ও গণতন্ত্রকামী মানুষ তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়ে অবশ্যই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।’
স্বাধীনতাবিরোধীদের অপতৎপরতা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, জামায়াতে ইসলামী একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের মহিমান্বিত করার চেষ্টা করছে। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, গোলাম আযম ও মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে ‘সূর্যসন্তান’ আখ্যায়িত করে মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত অপমান করেছে জামায়াত।
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘জামায়াত একাত্তরে স্বাধীনতাবিরোধী ছিল, এখনও তারা সেই অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’ একাত্তরের ওই স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশকে বিপাকে ফেলতে চায় বলেও অভিযোগ তার। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা বিরোধীরা ১৯৪৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত কখনো দেশের শান্তি কামনা করেনি। তারা তখনও দেশের স্বাধীনতা চায়নি, এখনও চায় না। বর্তমানে নানা কৌশলে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা চায় দেশে অশান্ত পরিবেশ তৈরি হোক এবং দেশ বিপাকে পড়ুক।’ ৭১ এবং ২৪ যার যার অবস্থানে সমহিমায় বিরাজমান, তাই ৭১-এর সঙ্গে ২৪-এর কোনো তুলনা চলে না বলেও মন্তব্য তার।
দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মঈন খান সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইকে আরও বেগবান করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বরই দেশে ফিরবেন বলে আবারও নিশ্চিত করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, তারেক রহমান জাতীয়তাবাদী পতাকা ও গণতন্ত্রের পতাকা নিয়ে দেশে আসছেন এবং তার আগমনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ জেগে উঠবে। তার দেশে আসা গণতন্ত্রের সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ‘জুলাই বিপ্লবের’ যোদ্ধাদের আশ্বস্ত করে বলেন, বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ২৪-এর জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং তাদের কোনো ঝুঁকির মুখে পড়তে দেবে না।
এর আগে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে বিএনপি মহাসচিব দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের সমাধীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এ সময় তারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করেন। খালেদা জিয়াকে তিনি (বিএনপি মহাসচিব) ‘দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ ও ‘গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে অভিহিত করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, সদস্য সচিব মোস্তফা জামানসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।