image

পাকিস্তানিদের ‘একগুঁয়েমির’ কারণেই যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল: জামায়াত আমির

মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

পাকিস্তানিদের ‘একগুঁয়েমির’ কারণেই একাত্তরে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী আমাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছিল। তাই দেশের মানুষ তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল। ’৬৯ এর গণআন্দোলনের হাত ধরে ’৭০ এর সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল। এই নির্বাচনের পর পাকিস্তানি শাসনগোষ্ঠীর একগুঁয়েমির কারণে নির্বাচিত দল ও জনপ্রতিনিধিরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তারা তাদের রাজনৈতিক অধিকার পাননি। সেদিন জনগণের ভোটের প্রতি সন্মান দেখাতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই একটি যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।’

মঙ্গলবার,(১৬ ডিসেম্বর ২০২৫) সকালে বিজয় দিবস উপলক্ষে যুব ম্যারাথন অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর আমির এই মন্তব্য করেন। শফিকুর রহমান বলেন, ‘এদেশের ছাত্র-শ্রমিক, কৃষক-জনতা এক কাতারে শামিল হয়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বুক ভরা আশা ও চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে এই প্রিয় দেশটি সব ধরনের বৈষম্য হাত থেকে মুক্তি পাবে, সমাজে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে, দেশ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হবে, জাতি হিসেবে গর্ব করে বুক ফুলিয়ে আমরা চলাফেরা করতে পারবো; যারা সেদিন নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা এমনটাই জাতিকে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ যেদেশটির বিপুল সংখ্যক মূল্যবান জীবন, সম্পদ আর ইজ্জদের ত্যাগ কোরবানির বিনিময়েও অর্জিত হয়েছিল। শাসকগোষ্ঠী জনগণের সঙ্গে কথা রাখেনি। সেদিন যারা লড়াই করেছিলেন, জীবন দিয়েছিলেন, আহত-পঙ্গু হয়েছিলেন তাদের সবার প্রতি আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’

‘তারা দেশে জমিদারে পরিণত হয়েছিলেন’

জামায়াত আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘তারা জাতিকে ভুলে গিয়ে একটি পরিবার, গোষ্ঠী এবং সর্বোচ্চ একটা দলকে তারা বাংলাদেশের মালিক এবং জমিদারে পরিণত করেছিলেন। বাকি সমস্ত মানুষকে তারা দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছিলেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র খতম করে দিয়েছিলেন। মিডিয়ার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলেন। মানুষের মাথার অধিকার তারা কেড়ে নিয়েছিলেন, ভোটের অধিকারও তারা কেড়ে নিয়েছিলেন। এককথায় আমাদের জনজীবনে মানুষ হিসেবে যে সমস্ত মানবিক অধিকার আছে, সবগুলো সেদিন দলিত-মথিত হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পুলিশ ছিল, সেনাবাহিনী ছিল, আধা সামরিক বাহিনী ছিল, সাহায্যকারী আনসার ছিল; দল-গোষ্ঠী লালন করার জন্য সেদিন একটি জল্লাদ বাহিনী গঠন করা হয়েছিল, যার নাম ছিল রক্ষীবাহিনী। এই জল্লাদ বাহিনীর হাতে মানুষের জীবন ও সম্পদকে অবলীলায় তুলে দেয়া হয়েছিল। যখন যাকে ইচ্ছা, তাকে খুন করা হয়েছে। মানুষগুলো সামান্যতম বিচার পাওয়ার কোনো অধিকার সেদিন ছিল না। মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করা হয়েছে। সম্মানশীল পরিবারের মেয়েদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল। ঘর থেকে মা-বোনরা বের হতে চাইতেন না। এরকম একটা বিভীষিকাময় অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর ছেলেরা ব্যাংক ডাকাতিতে লিপ্ত হয়েছিল।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য বিশ্ব থেকে এই যুদ্ধবিধবস্ত দেশের জন্য যে সমস্ত রিলিফ সামগ্রী তা বাংলাদেশে আসার আগেই বিদেশের মাটিতে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ হাটে-ঘাটে তাদের লাশ পড়ে থেকেছে। এই লাশ দাফন করার মতো কোনো ব্যবস্থা সেদিন ভালোভাবে ছিল না। প্রাণ হারিয়েছে। সেদিন আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম ঢাকার লাশগুলো দাফনের ব্যবস্থা করেছিল।’

জামায়াত আমির বলেন, ‘কিন্তু সারা বাংলার চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা সোনার বাংলা গড়ার কথা বলে তারা বাংলাকে শ্মশান বাংলায় পরিণত করেছিলেন। মাত্র পৌনে ৪ বছরের দুঃশাসন মানুষকে তটস্থ করে তুলেছিল। এরপরে তাদের কার্যক্রমের পরিণতি হিসেবে দুনিয়া থেকে তারা বিদায় নিয়েছিলেন।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘যারা একাত্তরে রনাঙ্গণে বুক চিতে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল, সেই সৈনিকরা কেন সেদিন ক্ষেপে গিয়েছিল? এর উত্তর আওয়ামী লীগকে খুঁজতে হবে, জাতিকে নয়। আমরা আশা করেছিলাম, বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি থেকে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে যে ফ্যাসিবাদ এক নায়কতন্ত্র কায়েম হয়েছিল, যার পরিণতি স্বচক্ষে দেখেছে এদেশের মানুষ; এটা থেকে আওয়ামী লীগ শিক্ষা নেবে। ওই যে কথা আছে, কয়লা ধুইলেও ময়লা যায় না। সাবান আর সার্ফ এক্সেলযা দিয়ে ধোননা কেন কয়লা আরও কুঁচকুঁচে কালো হয়। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।’

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল, তখন তারা শুধু ছোপ ছোপ রক্ত আর কাড়ি কাড়ি লাশ উপহার দিয়েছে। ছিয়ানব্বই সালে নির্বাচনের আগে তারা দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছিল। মানুষ তাদের ক্ষমা করে রায় দিলেও ক্ষমতার চেয়ারে বসেই তারা ফিরেছিল পুরনো চেহারায়। তারাই আবার ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় বসেই বিডিআর হত্যা, শাপলা চত্বরে নৃশংসতা করেছে। ২০১৮ সালে একটি প্রতীকে ভোট দেয়ায় নোয়াখালীর সুবর্ণচরে একজন নারীর ওপর বর্বরতা চালানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘খুন-ধর্ষণ আর আয়নাঘরের রাজনীতি করায় তাদেরকে পালাতে হয়েছে। এখন ফ্যাসিবাদী শক্তি পালিয়ে গিয়েও দেশবাসীকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না।’ শফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য বিশ্ব থেকে এই যুদ্ধবিধবস্ত দেশের জন্য যে সমস্ত রিলিফ সামগ্রী তা বাংলাদেশে আসার আগেই বিদেশের মাটিতে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ হাটে-ঘাটে তাদের লাশ পড়ে থেকেছে। এই লাশ দাফন করার মতো কোনো ব্যবস্থা সেদিন ভালোভাবে ছিল না। প্রাণ হারিয়েছে। সেদিন আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম ঢাকার লাশগুলো দাফনের ব্যবস্থা করেছিল।’

‘বস্তাপচা রাজনীতি ফেলে দিতে হবে’

শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘রাজনীতি হতে হবে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে। আমরা শান্তির বাংলাদেশ চাই। যেখানে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ থাকবে না। যুব সমাজের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। অতীতের বস্তাপচা রাজনীতি পায়ের নিচে ফেলে দিতে চাই। আমরা নতুন ধারার রাজনীতি করবো। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নতুন বাংলাদেশের মোড়ক উন্মোচন হবে।’

বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব ম্যারাথনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এ ম্যারথনে জামায়াতের আমিরসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াতের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। ম্যারাথনটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে শুরু হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভেনিউয়ে গিয়ে শেষ হয়।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা ছিলেন।

‘রাজনীতি’ : আরও খবর

» সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন শরীফ ওসমান বিন হাদির অবস্থা স্থিতিশীল, তবে নতুন অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুত নন

সম্প্রতি