দীর্ঘ ১৮ বছর লন্ডনে নির্বাসিত জীবন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরঅেছন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে দলটির পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ঘোষণা করা হয়েছে ‘আমার ভাবনায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক অভিনব রিল-মেকিং কর্মসূচি। একই সঙ্গে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গুলশানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের একটি নতুন কার্যালয় চালু করেছে বিএনপি।
মঙ্গলবার,(১৬ ডিসেম্বর ২০২৫) গুলশানের নতুন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘আমার ভাবনায় বাংলাদেশ: জাতীয় রিল-মেকিং প্রতিযোগিতা’ কর্মসুচির ঘোষণা দেন তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন। মাহাদী আমিন জানান, এই প্রতিযোগিতা ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে তারেক রহমানের ফেরার দিন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। দেশ-বিদেশের যেকোনো বয়সী মানুষ এতে অংশ নিতে পারবেন। প্রতিযোগীদের নির্ধারিত ১১টি থিমের যেকোনো একটি বিষয়ে ১ মিনিটের ভিডিও বা রিল তৈরি করতে হবে। ভিডিওর ধরণ হতে পারে একক বক্তব্য, স্যাটায়ার, গান, সংলাপ, ডকুমেন্টারি, অ্যানিমেশন বা ছবির সমন্বয়।
প্রতিযোগিতার থিমগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, পরিবেশ, আমি যেমন দেশ চাই, ক্রীড়া, ইমাম ও মুয়াজ্জিনের সম্মান, প্রবাসী এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। বিজয়ীদের মধ্যে সেরা ১০ জন তারেক রহমানের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতার সুযোগ পাবেন। বিচার প্রক্রিয়ায় জনমতের ভিত্তিতে ৩০ শতাংশ এবং জুরি বোর্ডের সিদ্ধান্তে ৭০ শতাংশ নম্বর নির্ধারণ করা হবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে গুলশানের একটি ভবনে বিএনপির নতুন কার্যালয় চালু করা হয়েছে। চার তলাবিশিষ্ট এই ভবনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ দোতলায় ব্রিফিং রুম ও বিভিন্ন বিভাগের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও সেখানে একটি গবেষণা সেলও রাখা হয়েছে। মাহাদী আমিন জানান, এটি বিএনপির একটি নতুন কার্যালয়, যেখান থেকে আগামী নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, একে শুধুমাত্র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কার্যালয় বলা ঠিক হবে না।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান দেশে ফিরে গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসায় উঠবেন। এই বাড়িটি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তৎকালীন সরকার খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দিয়েছিল। ইতোমধ্যে বাসার সংস্কারকাজ শেষ পর্যায়ে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সিসিটিভি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা ছাউনি বসানো হয়েছে। এছাড়া গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয় এবং নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তার জন্য আলাদা চেম্বার প্রস্তুত করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার আবারও জানিয়েছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইকে আরও বেগবান করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বরই দেশে ফিরবেন। তিনি বলেন, তারেক রহমান জাতীয়তাবাদী পতাকা ও গণতন্ত্রের পতাকা নিয়ে দেশে আসছেন এবং তার আগমনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ জেগে উঠবে। তার দেশে আসা গণতন্ত্রের সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিমানবন্দরে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তাকে সংবর্ধনা জানাবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতার অপেক্ষায় আছে দেশবাসী। সেদিন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সড়কের দুই পাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নিয়ে প্রিয় নেতাকে অভ্যর্থনা জানাবে। আমরা সেই প্রস্তুতির কাজ করছি।’ এবিষয়ে গতকাল সোমবার গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের যৌথ সভা হয়। এতে তারেক রহমানকে কীভাবে অভ্যর্থনা দেয়া হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শাইরুল কবির খান বলেন, ‘আমরা যারা দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছি তারা এখন অধীর আগ্রহে সময় গুনছি কখন আমাদের বহুদলীয় গণতন্ত্রের মানসপুত্র আধুনিক স্বনির্ভর রাষ্ট্র নির্মাণে স্বপ্নদ্রষ্টা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ঢাকার মাটিতে পা রাখবেন।’
তিনি আরও বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি তাকেই ঘিরে। ইনশাআল্লাহ দেশের মানুষ যেমন প্রত্যাশা করছে, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের নেতা ‘হারানো গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, জিয়াউদ্দিন হায়দার, সাইমুম পারভেজ এবং মিডিয়া সেলের সদস্য শাইরুল কবির খান।