প্রার্থীদের নিয়ে বিএনপির ম্যারাথন বৈঠক, পোলিং এজেন্ট ও সোশাল মিডিয়া নিয়ে বিশেষ নির্দেশনা
বৈঠকে প্রার্থীদের দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ ও নির্বাচনী বিধিবিধান মেনে চলার কথা বলা হয়েছে
তারেক রহমানের দেশে ফেরার আগেই নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম গুছিয়ে নিচ্ছে দলটি
আজ মিত্রদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জোরেশোরে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে দলের হাইকমান্ড। গতকাল বুধবার থেকে শুরু হওয়া এই বৈঠক আগামীকাল পর্যন্ত চলবে। দিনব্যাপী এই বৈঠক বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলীয় সূত্র ও উপস্থিত প্রার্থীদের মতে, বৈঠকটি মূলত একটি নির্বাচনী কর্মশালা, যেখানে প্রচারণায় ভিন্নতা আনা এবং কৌশলগত প্রস্তুতির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। যদিও সংসদ নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় ভিন্নতা আনার কথা আগেই জানিয়েছিল বিএনপি। সেজন্য বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ এমন ব্যক্তিদের নিয়ে বিশেষ কমিটিও গঠন করেছে দলটি। নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গুলশানে একটি নতুন অফিস নেয়া হয়েছে।
নির্বাচনকে আরও গতিশীল করতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক মিত্র দলগুলোর সঙ্গেও আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত করতে চায় বিএনপি। আজ অথবা আগামীকালের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানিয়েছে দলটি। দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে খাটো করে না দেখে জনআকাক্সক্ষা পূরণে প্রার্থীদের নির্বাচনী কৌশল ও দায়িত্ব সম্পর্কে বৈঠকে ধারণা দেয়া হচ্ছে। বৈঠকে বিএনপির বিরুদ্ধে ধর্মভিত্তিক একটি দলসহ বিভিন্ন মহলের অপপ্রচার ও কুৎসা রটনা মোকাবিলার ওপর জোর দেয়া হয়েছে বলে জানান সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
বিএনপিকে ‘চাঁদাবাজদের দল’ হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টার জবাবে মেজর হাফিজ বলেন, দলের গবেষণা দল বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করে দেখেছে, এসব অভিযোগের বড় অংশই মিথ্যা। তিনি আরও বলেন, প্রার্থীদের একই বার্তা দেয়া হচ্ছে যেন দলের ঐক্য সুদৃঢ় হয়। মেজর হাফিজ আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করে বলেন, জনগণ এবারও বিএনপিকেই বেছে নেবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থীদের প্রতি রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ‘৩১ দফা’ এবং জনসম্পৃক্ত অতিগুরুত্বপূর্ণ ‘৮ দফা’ কর্মসূচি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেয়ার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্রীড়া, পরিবেশ, যুবকদের কর্মসংস্থান এবং ধর্মীয় নেতাদের জন্য উন্নয়ন সেবা এই আটটি বিষয় কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা সহজ ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে বলা হয়েছে।
দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচনী মাঠের প্রস্তুতি আরও সুসংগঠিত করতে প্রার্থীদের কাছে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য ও তালিকা চেয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছে, প্রতিটি নির্বাচনী আসনের জন্য মনোনীত একজন ইলেকশন এজেন্ট। পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম এমন দু’জন ব্যক্তির নাম। সংসদীয় এলাকার জন্য একজন ‘সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার’-এর তথ্য। কেন্দ্রভিত্তিক ব্যবস্থাপনা ও ডিজিটাল প্রচারণাকে শক্তিশালী করার অংশ হিসেবে এসব দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, পদবি, স্থায়ী ঠিকানা, সচল হোয়াটস্অ্যাপ নাম্বার ও ছবি জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রথম দিন গতকাল বুধবার পঞ্চগড়-১ আসন থেকে শুরু করে ১০৭ জন প্রার্থীর সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার, (১৮ ডিসেম্বর ২০২৫) বেলা ১১টা থেকে দ্বিতীয় দফায় আরও ১০০ জন প্রার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় করে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।
সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। কর্মশালা পরিচালনা ও বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল এবং জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা রেহান আসাদ।
বৈঠক শেষে একাধিক প্রার্থী তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানান, এটি তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঢাকা-১৮ আসনের প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী ও ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘বৈঠকে মূলত আমাদেরকে দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনী বিধিবিধান মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া মনোনয়নপত্র পূরণে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি সেসব বিষয়ে ধারণা দেয়া হয়েছে।’
গাইবান্ধা-৩ আসনের ডা. মাইনুল হোসেন সাদিক এবং পঞ্চগড়-২ আসনের ফরহাদ হোসেন আজাদ জানান, ৮ দফাকে সাধারণ মানুষের কাছে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের নির্দেশনা পেয়েছেন তারা। এছাড়া নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলাসহ দলের কৌশল অবলম্বনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিএনপি এ পর্যন্ত ৩০০ আসনের মধ্যে ২৭২টিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য গুলশানে নতুন অফিস নেয়া হয়েছে এবং বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ঋণ বা আইনি জটিলতায় থাকা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বিকল্প প্রার্থীও ঠিক করে রাখা হয়েছে। আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান দেশে ফেরার আগেই নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম গুছিয়ে নিচ্ছে দলটি।