জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও ‘ইনকিলাব মঞ্চের’ আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতারা। একইসঙ্গে হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থিতিশীলতা এবং গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটি। বিএনপি নেতারা সব পক্ষকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার, শাস্তি এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে: তারেক রহমান
একটি স্বার্থান্বেষী মহল দেশের সংকটময় সময়কে পুঁজি করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে: মির্জা ফখরুল
হাদির সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল না, তাকে হত্যার মূল উদ্দেশ্য দেশকে অস্থিতিশীল করা: মাহদী আমিন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গণসংযোগকালে চলন্ত রিকশায় থাকা অবস্থায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। গুলিটি তার মাথায় লাগে। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়, পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
হাদির মৃত্যুতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে শোক প্রকাশ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, হাদি ছিলেন এক সাহসী রাজনৈতিক কর্মী এবং নির্ভীক কণ্ঠস্বর, যিনি সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেন। তারেক রহমান উল্লেখ করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে হাদি জুলাইয়ের যোদ্ধাদের অধিকার রক্ষা ও জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
তারেক রহমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার, শাস্তি এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করে প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে আর কোনো ঘটনা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে।
হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই ঘটনাকে পুঁজি করে পরিকল্পিতভাবে ‘প্রথম আলো’ ও ‘ডেইলি স্টার’ কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার,(১৯ ডিসেম্বর ২০২৫) ভোরে ফেইসবুক পোস্টে মির্জা ফখরুল এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শহীদ হাদির মৃত্যুতে শোকার্ত জাতি যখন সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করছে, তখন ডেইলি স্টার, প্রথম আলোসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং বরেণ্য সাংবাদিক নূরুল কবীরসহ আরও অনেকের ওপর হীন হামলা সংঘটিত হলো।’ মির্জা ফখরুল হামলাকারীদের ‘দেশের শত্রু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের সংকটময় পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে যারা এমন কাজ করে তারা দেশের শত্রু।’
সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, হাদির আততায়ীর বিচার এবং প্রতিটি ‘মব সন্ত্রাসের’ বিচার করতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এ দেশের প্রতিটি নাগরিকের জানমালের দায়িত্ব বর্তমান সরকারের এবং সরকারকে এই ঘটনার পুরো দায়িত্ব নিতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন শুক্রবার সকালে এক ফেইসবুক পোস্টে বলেন, শহীদ ওসমান হাদির সঙ্গে কারও ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল না; তাকে হত্যার মূল উদ্দেশ্য দেশকে অস্থিতিশীল করা। তিনি প্রশ্ন তোলেন, মৃত্যু সংবাদের সঙ্গে সঙ্গে যারা জ্বালাও-পোড়াও এবং গণমাধ্যমে হামলা শুরু করেছে, তারা আসলে কার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করছে? তিনি লাশের রাজনীতি ও মবের সংস্কৃতির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এটি কোনোভাবেই গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে না।
হাদির মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে ছাত্রদল। সংগঠনের সহদফতর সম্পাদক মো. নাজমুচ্ছাকিব স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, হাদি রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদের পতনের পরে সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করতে দীর্ঘ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। হাদি হত্যার সঙ্গে জড়িত ঘাতক ও পরিকল্পনাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে ছাত্রদল।