অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে একটি ‘অপশক্তির উত্থান’ হয়েছে, গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহে সেই শক্তির ‘স্বরূপ’ স্পষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে গণমাধ্যমের ‘সর্বাত্মক সহযোগিতা’ চেয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এখন জাতীয় স্বার্থে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য আপনাদের (গণমাধ্যম) সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।’
সমাজের দর্পণ গণমাধ্যম আজ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে, সাংবাদিকদের দর্পণ যেন চূর্ণ না হয়: সালাহউদ্দিন আহমেদ
ফ্যাসিবাদের ঘন কালো অন্ধকার পার হলেও এখনও শঙ্কা কাটেনি: রুহুল কবির রিজভী
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্য হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির নীতিনির্ধারণী এই নেতা বলেন, সরকারের দুর্বলতার কারণেই দেশে ‘মবতন্ত্র’ বা ‘মবোক্রেসি’ প্রশ্রয় পাচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের (ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট) পূর্বাভাস থাকার পরও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাসময়ে ব্যবস্থা না নেয়ায় সরকারের কর্মকা- নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
রোববার,(২১ ডিসেম্বর ২০২৫) সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক ও প্রধানদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সালাহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে গণমাধ্যমের সম্পাদক ও শীর্ষ সাংবাদিকদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ স্পষ্ট করে বলেন, ‘যে অপশক্তির উত্থান আমরা লক্ষ্য করেছি। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত। সেটার একটা স্বরূপ, চেহারা এবং কর্ম গত কয়েকদিন আমরা লক্ষ্য করেছি। এই অপশক্তির মোকাবিলা করতে জাতীয় ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে।’ জাতীয়ভাবে সবাই এ বিষয়টাতে যাতে সচেতন হতে পারে সেজন্য সংবাদপত্র এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছিলাম ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র)। কিন্তু কেন হয়ে যাবে মবোক্রেসি (মবতন্ত্র)? তাকে কেন লালন করতে দেয়া হবে?’ তিনি স্পষ্ট করে বলেন, সরকারের দুর্বলতার কারণেই ‘মবতন্ত্র’ প্রশ্রয় পেয়েছে এবং এটি কঠোর হাতে দমন করা প্রয়োজন। বিএনপি এই দেশে আর মবোক্রেসি দেখতে চায় না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, পত্রিকা দুটিকে যেভাবে জ্বালিয়ে ও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ‘বার্ন ডাউন টু দ্য গ্রাউন্ড’ সেই দৃশ্য সারা বিশ্ব দেখেছে, যা জাতির জন্য লজ্জার। তিনি বলেন, ‘জাতি হিসেবে এটা কোনোভাবে আমরা শুধু দুঃখ প্রকাশ করে সমাপ্ত করতে পারবো না।’
এ ঘটনায় সরকারের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এ রকম একটা প্রেডিকশন ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টে থাকে... আমরাও জেনেছি সে ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট। কিন্তু সেটা আমলে নেয়া হলো না কেন?’ ঘটনাস্থলে পৌঁছতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিলম্বের কারণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। সালাহউদ্দিন বলেন, ‘শুনেছি এক-দুই ঘণ্টা পর তারা রেসপন্স করেছে। সেটা কেন?’
আগামী ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তারেক রহমান দীর্ঘ ১৮ বছর বাধ্য হয়ে কষ্টকর নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তার প্রত্যাবর্তনকে আমরা গণতন্ত্র শক্তিশালী করার জন্য কাজে লাগাতে চাই। ব্যক্তিকে শক্তিশালী করার কোনো উদ্দেশ্য আমাদের নেই।’ তিনি আরও জানান, জনগণ আশা করছে তারেক রহমানের ফেরার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও মজবুত হবে।
গণমাধ্যমকে সমাজের দর্পণ হিসেবে উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘এই মুহূর্তে সমাজের সেই দর্পণ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকদের দর্পণ যেন চূর্ণ না হয়।’ তিনি সাংবাদিকদের পেশাদারিত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকলেও দেশের স্বার্থে সবাইকে নিরপেক্ষ ও আপসহীন থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ফ্যাসিবাদের ঘন কালো অন্ধকার পার হলেও এখনও শঙ্কা কাটেনি। তিনি সতর্ক করে বলেন, মতামত ও বক্তব্যের কারণে কারোর ওপর হামলা হওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
মতবিনিময় সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, হাফিজ উদ্দিন আহমদ এবং বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আহমেদ পাভেল উপস্থিত ছিলেন।
গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান, ইনকিলাব সম্পাদক আ ক ম বাহাউদ্দীন, কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ, দৈনিক খবরের কাগজ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, আজকের পত্রিকা সম্পাদক কামরুল হাসান, নয়াদিগন্তের সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, দৈনিক যুগান্তরের নির্বাহী সম্পাদক এনাম আবেদীন প্রমুখ।