গোয়েন্দা তদন্তে উঠে এসেছে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড ছিল একটি সুপরিকল্পিত ও ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত মিশনের ফল। বিদেশ থেকে ফিরে একটি ‘শুটার টিম’ গঠন করা হয়। লক্ষ্য বাস্তবায়নে আগে ভুক্তভোগীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলা হয় এবং মাত্র সাত দিনের মধ্যেই চালানো হয় প্রাণঘাতী হামলা।
হত্যার মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় মূল অভিযুক্ত শুটার ফয়সাল। একই সঙ্গে পরিকল্পনা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ আলামতও গায়েব করা হয়।
গোয়েন্দাদের তথ্যমতে, হাদি ও শুটার ফয়সালের প্রথম পরিচয় হয় ইনকিলাব মঞ্চের কালচারাল সেন্টারে। শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা নজরদারিতে উঠে এসেছে—হত্যার আগে কীভাবে ফয়সাল হাদিকে অনুসরণ করে এবং ধাপে ধাপে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।
গত ৪ ডিসেম্বর রাত ৮টা ১৮ মিনিটে বাংলামোটরের ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে আসেন শুটার ফয়সাল ও তার সহযোগী কবির। প্রায় ছয় মিনিটের ওই বৈঠকে ফয়সাল হাদির সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেন। গোয়েন্দারা বলছেন, এটিই ছিল ঘনিষ্ঠতা তৈরির প্রথম ধাপ।
এরপর ৯ ডিসেম্বর রাতে ফয়সাল ফের কালচারাল সেন্টারে যান। এবার তার সঙ্গে ছিলেন আলমগীর। এ বৈঠকে নির্বাচনী প্রচারণার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে হাদির টিমে ঢুকে পড়েন ফয়সাল। পরদিন ১০ ডিসেম্বর সেগুনবাগিচায় হাদির নির্বাচনী প্রচারণায় সরাসরি অংশ নেন তিনি।
প্রচারণায় অংশ নেওয়ার পরই হাদিকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন ফয়সাল। মিশন বাস্তবায়নের জন্য নরসিংদী, সাভার ও মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় রেকি চালান তিনি। ১১ ডিসেম্বর হামলার প্রস্তুতি হিসেবে ওঠেন পশ্চিম আগারগাঁওয়ে বোনের বাসায়। হামলার দিন ভোরে উবারে করে যান হেমায়েতপুরের একটি রিসোর্টে।
রিসোর্টের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার ভোর ৫টা ২২ মিনিটে ফয়সাল ও আলমগীরের গাড়ি হেমায়েতপুরের গ্রিন জোন রিসোর্টে প্রবেশ করে। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া ও তার বোন। সেখানে হাদির একটি ভিডিও দেখিয়ে ফয়সাল জানান, তিনি হাদির মাথায় গুলি করার পরিকল্পনা করেছেন এবং এতে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হবে। ঘটনার পর সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখার কথাও বলেন তিনি।
সকাল ৮টা ৫৪ মিনিটে বান্ধবীকে নিয়ে রিসোর্ট থেকে বের হন ফয়সাল। বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন আলমগীর। উবারে করে বান্ধবীকে বাড্ডায় নামিয়ে দেওয়ার পর বেলা ১১টা ৫ মিনিটে আগারগাঁওয়ের বাসা থেকে মোটরসাইকেলে বের হয়ে সরাসরি যান হাদির সেগুনবাগিচার প্রচারণায়। সকাল পৌনে ১২টার দিকে সেখানে পৌঁছান ফয়সাল।
প্রচারণা শেষে দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে হাদি মতিঝিলের উদ্দেশ্যে রওনা হলে শুটার পেছন থেকে তার অটোরিকশা অনুসরণ করতে থাকেন। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে হাদিকে বহন করা অটোরিকশা মতিঝিলের জামিয়া দারুল উলুম মসজিদের সামনে পৌঁছায়। সেখানে আলমগীর মোটরসাইকেল পার্ক করলে দুজন নেমে আবারও প্রচারণায় যুক্ত হন।
নামাজ শেষে দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে হাদি সেখান থেকে রওনা হলে শুটাররাও পিছু নেয়। দৈনিক বাংলা মোড় দিয়ে ডান দিকে ঘুরে পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে ঢুকে পড়ে তারা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ফাঁকা জায়গা খুঁজে বেড়ানোর পর দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে খুব কাছ থেকে হাদিকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোড়ে ফয়সাল।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু হয়।
পরে তার মরদেহ দেশে এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে তাকে দাফন করা হয়।
সারাদেশ: খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: ‘সিইও অব দ্য ইয়ার’ সম্মাননা অর্জন করলো বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: নগদের মাধ্যমে মেট্রোরেলের কার্ড রিচার্জ সুবিধা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: ২০২৫ সালে পছন্দের তালিকায় ইনফিনিক্সের যেসব স্মার্টফোন
সারাদেশ: বরুড়ায় কৃষি উপকরণ বিতরণ