আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনে বিএনপির মনোনয়নের নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরা এ নিয়ে আছেন দোটানায়।
আসনটিতে ব্যবসায়ী নেতা ও ক্রীড়া সংগঠক মাসুদুজ্জামান মাসুদের নাম ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল বিএনপি। তবে দলটির নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খানও দাবি করছেন, দল তাকে মনোনীত করেছে আসনটিতে। যদিও দলীয়ভাবে এর কোনো ঘোষণা না হওয়াতে এ নিয়ে পরিষ্কার নন দলটির তৃণমূলের নেতারাকর্মীরা।
এখন দুইজন সম্ভাব্য প্রার্থীই অনুসারীদের নিয়ে নিয়মিত কর্মসূচি চালাচ্ছেন। এতে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
গত ৩ নভেম্বর প্রথম দফায় ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
সেদিন নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদের নাম ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দল প্রার্থী ঘোষণা করলেও মনোনয়ন বঞ্চিতরা প্রকাশ্যে মাসুদের বিরোধিতা শুরু করেন। মনোনয়ন বঞ্চিত চার নেতা একজোট হয়ে ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারণায় অংশ নেন। এমনকি মাসুদের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনও করেন তারা।
বিদ্রোহী নেতারা হলেনÑ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আল ইউসুফ খান টিপু, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও শিল্পপতি আবু জাফর আহমেদ বাবুল।
যদিও পরে দলের নির্দেশনা মেনে আবু আল ইউসুফ খান টিপু ধানের শীষের ঘোষিত প্রার্থী মাসুদুজ্জামানের পক্ষে কাজ করা শুরু করেন। কিন্তু বাকি তিন নেতা এখন মাসুদের বিরুদ্ধে একাট্টা।
ঢাকায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনার পর গত ১৬ ডিসেম্বর এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ‘নিরাপত্তাজনিত শঙ্কার’ কথা জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানেরা ঘোষণা দেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ। কিন্তু দলীয় নেতাকর্মীরা এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান।
তারা মাসুদকে ফেরাতে টানা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভাও করেন। গত শুক্রবার তারা নগরীর তল্লায় অবস্থিত মাসুদুজ্জামানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
একপর্যায়ে মাসুদুজ্জামান দলীয় কর্মীদের চাপে নির্বাচনী মাঠে ফিরতে বাধ্য হন। শুক্রবার বিকেলে নেতাকর্মীদের সামনে নির্বাচনে ফেরার ঘোষণা দেন।
নাটকীয়তার নতুন মোড় নেয় তার পরদিন সাখাওয়াত হোসেন খানের এক দাবির পর। দলটির এ নেতা দাবি করেন, দল তাকে কেন্দ্রে ডেকে আসনটিতে নির্বাচন করার নির্দেশনা দিয়েছে।
তিনিই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এখন বিএনপির প্রার্থী।
সাখাওয়াত শনিবার মনোনয়ন ফর্মও সংগ্রহ করেছেন। এবং তার অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাখাওয়াত বলেন, ‘শুক্রবার (গত) নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে আমাকে নির্বাচন করার কথা বলেছে। আমি শনিবার (গত) নমিনেশন পেপার নিয়ে এসেছি। প্রার্থী হিসেবে আমিসহ ১০০ জন দলের প্রশিক্ষণও নিয়েছি। দল আমার ওপর যে দায়িত্ব দিয়েছে আমি তা যথাযথভাবে পালন করবো।’
কিন্তু সাখাওয়াতের বিষয়ে দলের কোনো প্রকাশ্য ঘোষণা না থাকায় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে আদতে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কে! বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজনও দেখা যাচ্ছে। দলটির একটি অংশ দৃঢ়ভাবে মাসুদুজ্জামানের পক্ষে থাকলেও অন্য একটি পক্ষকে সাখাওয়াতকে ‘যোগ্য প্রার্থী’ দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করতে দেখা যায়।
অনেকে আবার ক্ষোভও প্রকাশ করেন। সাখাওয়াত হোসেনের প্রার্থিতা পাওয়া বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মনোনয়ন বঞ্চিত মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘ইনসাফের মায়ের মৃত্যু হয়েছে! যেখানে ইনসাফ নেই, সেখানে বলার কিছুই থাকে না। মেয়র প্রার্থী দেয়া হয়েছিল, এমপি প্রার্থী দেয়া হয়েছে। ত্যাগ ও যোগ্যতা একজনেরই, বাকি সব কলুর বলদ। গাধার মতো খাটবে একজন, আর ফলাফল দেয়া হবে আরেকজনকে।’
আরেক বঞ্চিত শিল্পপতি আবু জাফর আহমেদ বাবুল স্থানীয় এক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মনোনয়ন পরিবর্তন নিয়ে এখন পর্যন্ত দলীয় কোনো নির্দেশনা আসে নাই। আর এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। মনোনয়ন পরিবর্তন হলে তো একটা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিবে। যেমন মাসুদের নাম একটা আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে আসছে, আমরা এটা সবাই শুনছি।’
এদিকে নেতাকর্মীদের ‘বিভ্রান্ত’ ও ‘বিচলিত’ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এক বার্তায় মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘অফিসিয়াল নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত দলের প্রার্থিতা অপরিবর্তিত রয়েছে। কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’
সারাদেশ: খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: ‘সিইও অব দ্য ইয়ার’ সম্মাননা অর্জন করলো বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী