image

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেও এনডিএফের ১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা

মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ১১৯টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি-জেপি এবং আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির একাংশের নেতৃত্বে গঠিত এই জোট নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।

ঢাকার বনানীর হোটেল শেরাটনে মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)-এর এক সংবাদ সম্মেলনে নাম ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে এনডিএফের প্রধান মুখপাত্র ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে বলে দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল। তবে গত কয়েক মাস ধরে তিনি যে ভাবে পিছনের শক্তি প্রয়োগ করে কিছু দল ও ব্যক্তিকে সহায়তা করছেন, তাতে এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, "আমরা আশা করছিলাম তিনি একটা ভালো নির্বাচন দেবেন। এরপরে তিনি যখন চলে যাবেন, আমরা সবাই তাকে শ্রদ্ধার সাথে মনে রাখব। আমি এই ব্যাপারে এখন সন্দিহান, যে তিনি পারবেন কিনা। তারেক রহমান আসছেন, কী পরিবেশ হবে, এটা কি চর দখলের মত নির্বাচন হবে? না নিরপেক্ষ হবে? দেশে বিদেশে সমাদৃত হবে? এমন একটি নির্বাচন হবে কিনা সেই সংশয় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মধ্যে এখন আছে।"

তিনি সরকারের কাছে সকল দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে এনডিএফের সমন্বয়ক গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, দেশের বর্তমান অবস্থায় নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকলে নির্বাচন কীভাবে সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, "নিরাপত্তার সাথে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আগামী সংসদে যেতে চাই। আমরা কেউ হাডি হতে চাই না।"

জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় দুইটি পত্রিকা অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ঘটনাস্থলে পুলিশ না আসা এবং সাংবাদিকদের জীবননাশের আশঙ্কার মধ্যে থাকার বিষয়টি গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় আঘাত। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "এই পরিস্থিতিতে ভালো নির্বাচন হবে?"

জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, প্রধান উপদেষ্টা উৎসবমুখর ও সুন্দর নির্বাচনের আশ্বাস দিলেও বাস্তবতা ভিন্ন। তিনি দাগি আসামিদের নামে গ্রামের নিরীহ লোকজনকে আটক এবং লাইসেন্সকৃত অস্ত্র সহ গানম্যান প্রদানের অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, "এছাড়া যে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, দেশে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? আমরা আরও কয়েক দিন দেখব।"

সংবাদ সম্মেলনে এনডিএফের উপদেষ্টা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ জোটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মুজিবুল হক চুন্নু ৩০০ আসনের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১১৯টি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন।

জোটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী:

· চট্টগ্রাম-৫: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (এনডিএফ চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান)

· পিরোজপুর-২: আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (জেপি চেয়ারম্যান)

· পটুয়াখালী-১: এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার (জাতীয় পার্টির মহাসচিব)

· ঢাকা-১০: কাজী ফিরোজ রশিদ (জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান)

· কিশোরগঞ্জ-৩: মুজিবুল হক চুন্নু

· মাদারীপুর-৩: শেখ শহিদুল ইসলাম (জেপির মহাসচিব)

· মানিকগঞ্জ-২: গোলাম সারোয়ার মিলন (এনডিএফের প্রধান সমন্বয়ক)

· ফরিদপুর-২: শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর (সাবেক এমপি)

· বরিশাল-৬: নাসরিন জাহান রতনা

· ঢাকা-১৩: শফিকুল ইসলাম সেন্টু

· নারায়নগঞ্জ-৩: লিয়াকত হোসেন খোকা

· টাঙ্গাইল-৭: জহিরুল ইসলাম জহির

· জামালপুর-২: মোস্তফা আল মাহমুদ

· সাতক্ষীরা-১: সৈয়দ দিদার বখত

· ময়মনসিংহ-৮: ফকরুল ইমাম

· ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২: জিয়াউল হক মৃধা

· নোয়াখালী-১: আবু নাসের অহেদ ফারুক (জাতীয় ইসলামী জোটের চেয়ারম্যান)

· ঢাকা-১৭: তপু রায়হান (প্রয়াত জহির রায়হানের ছেলে) এবং শেখ হাবিবুর রহমান (তৃণমূল বিএনপির অবসরপ্রাপ্ত মেজর)

· শেরপুর-১: আবু লায়েস মুন্না (বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের চেয়ারম্যান)

জাতীয় পার্টির অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন:

· কুমিল্লা-৮: নুরুল ইসলাম মিলন

· বগুড়া-৬: নুরুল ইসলাম ওমর (সাবেক এমপি)

· সিলেট-২: ইয়াহ ইয়া চৌধুরী (সাবেক এমপি)

· নীলফামারী-৩: রানা মোহাম্মদ সোহেল (সাবেক এমপি, অবসরপ্রাপ্ত মেজর)

· কুড়িগ্রাম-২: পনির উদ্দিন আহম্মেদ (সাবেক এমপি)

· ফেনী-১: নাজমা আক্তার (সাবেক এমপি)

· চট্টগ্রাম-১২: সিরাজুল ইসলাম চৌধরী (সাবেক এমপি)

· চট্টগ্রাম-৭: নজরুল ইসলাম (সাবেক এমপি)

· টাঙ্গাইল-৫: আব্দুস সালাম চাকলাদার (সাবেক এমপি)

· জামালপুর-৪: মামুন অর রশীদ (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান)

· চট্টগ্রাম-৯: সোলায়মান আলম শেঠ (সাবেক এমপি)

· নেত্রকোণা-৩: জসিম উদ্দিন ভুইয়া

· পাবনা-১: সরদার শাহজাহান

· নোয়াখালী-৪: মোবাবর হোসেন আজাদ

· বরিশাল-৩: ফকরুল আহসান শাহজাদা

· লক্ষীপুর-১: বেলাল হোসেন

· ঢাকা-১৬: আমানত হোসেন আমানত

· ঢাকা-১৪: জাহাঙ্গীর আলম পাঠান

· ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩: শাহ জামাল রানা

· সাতক্ষীরা-২: মাতলুব হোসেন লিয়ন

· শেরপুর-১: ইলিয়াস উদ্দিন

· পঞ্চগড়-১: আবু সালেক

· বরিশাল-১: সেরনিয়াবাদ সেকান্দার আলী

· ঠাকুরগাঁও-১: রেজাউর রাজী স্বপন চৌধুরী

· নীলফামারী-৪: রাশেদুল ইসলাম

· লালমনিরহাট-২: নিগার সুলতানা রানী

· রংপুর-৪: আব্দুস সালাম

· গাইবান্ধা-১: শফিকুল ইসলাম বাদশাহ মিয়া

· জয়পুরহাট-১: আওলাদ হোসেন

· রাজশাহী-১: বরুন সরকার

· রাজশাহী-৩: কামরুজ্জামান

· রাজশাহী-৫: আসাদুজ্জামান

· রাজশাহী-৬: ইকবাল হোসেন

· সিরাজগঞ্জ-৩: আব্দুর রাজ্জাক

· সিরাজগঞ্জ-৪: এস এম হাসেম রাজু

· পাবনা-৬: তরিকুল ইসলাম স্বাধীন

· কুষ্টিয়া-৪: সাজ্জাদ হোসেন সেনা

· যশোর-৩: শফিকুল ইসলাম

· যশোর-৬: আব্দুল লতিফ রানা

· মাগুরা-১: সুমন ঘোষ

· মাগুরা-২: আলমগীর সিকদার

· বাগেরহাট-১: এস এম আল যোবায়ের

· বরগুনা-১: মাইনুল হাসান রাসেল

· পটুয়াখালী-২: মহসিন হাওলাদার

· পটুয়াখালী-৪: আনোয়ার হোসেন হাওলাদার

· বরিশাল-৪: গাজী সোহেব কবির

· ঝালকাঠি-২: এম এ কুদ্দুস খান

· ঝালকাঠি-১: সেলিমা খান

· পিরোজপুর-৩: সেকান্দার আলী মুকুল বাদশা

· টাঙ্গাইল-৩: আব্দুল হালিম

· টাঙ্গাইল-৮: রেজাউল করীম

· ঢাকা-৯: ইদি আমিন এপোলো

· ঢাকা-১১: এস এম আমিনুল হক সেলিম

· ঢাকা-১২: হাজী নাসির উদ্দিন সরকার

· শরীয়তপুর-১: মাসুদুর রহমান মাসুদ

· শরীয়তপুর-২: ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ

· শরীয়তপুর-৩: ম ম ওয়াসিম

· জামալপুর-৪: মোখলেসুর রহমান বস্তু

· ময়মনসিংহ-৪: জাহাঙ্গির আহমেদ

· কুমিল্লা-৩: আলমগীর হোসেন

· কুমিল্লা-১১: এইচ এম এন শফিকুর রহমান

· ফেনী-২: জাফর আহমেদ রাজু

· নোয়াখালী-৩: ফজলে এলাহি সোহাগ মিয়া

· কক্সবাজার-১: শামসুল আলম

· কক্সবাজার-৩: মো. তারেক

· নোয়াখালী-৫: সাইফুল ইসলাম স্বপন

· নোয়াখালী-৬: নাসির উদ্দিন বায়জিদ

· লক্ষীপুর-২: শেখ মোহা. ফায়িজ উল্লাহ স্বপন

· চট্টগ্রাম-২: জহিরুল ইসলাম রেজা

· চট্টগ্রাম-৩: এম এ সালাম

· কক্সবাজার-৪: এম এ মঞ্জুর মাস্টার

· ঢাকা-১৮: শেখ মোহাম্মদ আলী

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহিদুল ইসলাম ছাড়া জেপির অন্য প্রার্থীরা হলেন:

· কুড়িগ্রাম-৪: সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, রুহুল আমিন

· ঝালকাঠী-২: মাহিন হোসেন

· ঝালকাঠী-১: এনামুল ইসলাম রুবেল

· ঠাকুরগাঁও-৩: আসাদুজ্জামান (জনতা পার্টি বাংলাদেশ)

· কুমিল্লা-৫: শওকত মাহমুদ

· শেরপুর-১: আবদুল্লাহ

· নারায়ণগঞ্জ-৪: গোলাম মোর্শেদ রনি (জাতীয় ইসলামী মহাজোট)

· ঝিনাইদহ-২: কে এম জাহাঙ্গীর (তৃণমূল বিএনপি)

· চট্টগ্রাম-৯: দীপক কুমার পালিত

· বরিশাল-৬: টি এম জহিরুল হক তুহিন

· খুলনা-৪: ইঞ্জিঃ শেখ শাহীন রহমান

· ঢাকা-১৮: লায়ন আফরোজা বেগম

· মেহেরপুর-২: শাহ জামিল আমিরুল (বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট)

· খুলনা-১: মির্জা আজম (বাংলাদেশ স্বাধীন পার্টি)

· কুমিল্লা-৫: হুমায়ুন কবির

· চাঁদপুর-৩: মুনির হোসেন

· ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩: শরীফ শাকি

· টাঙ্গাইল-২: এম আর করিম (অ্যাপ্লাইড ডেমোক্রেটিক পার্টি)

· নওগাঁ-৫: সেলিম রেজা

· নড়াইল-১: এস এম আশিক বিল্লাহ (ডেমোক্রেটিক পার্টি)

· ঢাকা-১৫: এস এম খায়রুজ্জামান

· গাইবান্ধা-৪: আতাউর রহমান বিল্লাহ (জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট)

· ঢাকা-১০: লস্কর হারুন অর রশীদ (নাগরিক পার্টি)

· ঝালকাঠি-২: এ আর এম জাফর উল্লাহ চৌধুরী (গণতান্ত্রিক আন্দোলন)

· ফেনী-৩: খোকন চন্দ্র মজুমদার (লিবারেল গ্রিন পার্টি)

· নওগাঁ-৬: সরদার মোহাম্মদ আব্দুস সত্তার (জাতীয় জোট)

· হবিগঞ্জ-৪: সিরাজুল ইসলাম

· টাঙ্গাইল-৮: মোস্তফা কামাল বাদল

· বরগুনা-১: জামাল হোসাইন (বাংলাদেশ জাতীয় দল)

· চট্টগ্রাম-১০: বিলকিস সুলতানা

· ঝিনাইদহ-২: মিজানুর রহমান মিজু (জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি)

· চট্টগ্রাম-১৩: জয় প্রকাশ নারায়ন রক্ষিত

· মানিকগঞ্জ-৩: মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিস (জাসদের-শাহজাহান সিরাজ গ্রুপ)

· বরিশাল-৪: আব্দুল জলিল (বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ)

· শরীয়তপুর-১: নূর মো. মনির (সার্বজনীন দল)

গত ৮ ডিসেম্বর আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ২০ দলের সমন্বয়ে এনডিএফ জোট গঠনের ঘোষণা দেন। জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি (আনিসুল), জাতীয় পার্টি-জেপি, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জাতীয় ইসলামিক মহাজোট, জাতীয় সংস্কার জোট, বাংলাদেশ লেবারপার্টি, স্বাধীন পার্টি, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি, বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি, বাংলাদেশ সর্বজনীন দল, বাংলাদেশ জনকল্যাণ পার্টি, অ্যাপ্লায়েড ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং বাংলাদেশ জাতীয় লীগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

‘রাজনীতি’ : আরও খবর

» নারায়ণগঞ্জ-৫: বিএনপির প্রার্থিতা নিয়ে নাটকীয়তার পর বিভ্রান্তি

সম্প্রতি