দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে আজ দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। তাকে বরণ করে নিতে রাজধানী ঢাকার পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় প্রস্তুত করা হচ্ছে গণসংবর্ধনার মঞ্চ এবং নেয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, লন্ডন থেকে রওনা হয়ে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি শেষে আজ বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। তার সঙ্গে একই বিমানে ফিরছেন সহধর্মিণী জুবাইদা রহমান, কন্যা জাইমা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রহমান সানি ও মিডিয়া টিমের সদস্যসহ অন্যান্যরা।
বিমানবন্দরে অবতরণের পর দলীয় সিনিয়র নেতারা তাকে স্বাগত জানাবেন। এরপর তিনি বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ৩০০ ফিট এলাকার গণসংবর্ধনা মঞ্চে যোগ দেবেন। সংবর্ধনা শেষে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন। এরপর গুলশানে তার জন্য নির্ধারিত বাসভবনে ফিরবেন।
বুধবার, (২৪ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুরের পর সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে রাজধানীর কুড়িল থেকে ৩০০ ফিট পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে নানা রঙের ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। কুড়িল মোড় থেকে কিছুটা দূরে সড়কের উত্তরপাশে তৈরি করা হয়েছে ৪৮ ফুট বাই ৩৬ ফুটের বিশাল মঞ্চ। মঞ্চের মূল কাঠামোর কাজ শেষ হলেও সাজসজ্জার কাজ চলছে। মঞ্চের দুইপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য তাবু স্থাপন করা হয়েছে এবং ল্যাম্পপোস্টে মাইক লাগানো হয়েছে। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছ থেকে এই সংবর্ধনা আয়োজনের লিখিত অনুমতিও পেয়েছে বিএনপি।
ঢাকা উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান সংবাদকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমন এবং তাকে স্বাগত জানাতে আমার সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমাদের সব কার্যক্রম প্রায় শেষ অবস্থায়। এখন পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে কোথাও কোনো খুত রয়ে গেল কিনা। ইতোমধ্যে ৭ শতাধিক মাইক লাগানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সূত্র জানিয়েছে, বুলেটপ্রুফ গাড়ি ও বিশেষ বাহিনী তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত তাকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা দেয়া হবে। পুলিশের বিশেষ শাখা, সোয়াট টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং ডগ স্কোয়াড নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। পাশাপাশি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামের নেতৃত্বে চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) ও দলীয় স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবেন। ইতোমধ্যে তারেক রহমানের ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো এলসি ২৫০ মডেলের একটি ‘হার্ড জিপ’ এবং একটি বুলেটপ্রুফ বাস ইতোমধ্যে দেশে পৌঁছেছে এবং বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।
দলটির শীর্ষ নেতার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যেও নতুন করে রাজনৈতিক উত্তাপ, উচ্ছ্বাস ও প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। তাকে স্বাগত জানাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনার আগেই তৃণমূল নেতাকর্মীরা নিজেরাই যানবাহন ভাড়া করে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসা নিশ্চিত করতে বিএনপি ৭টি রুটে বিশেষ ট্রেন ভাড়ার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ৫০ লাখের বেশি মানুষের সমাগম হতে পারে। নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে ১০টি রুটে বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ দিয়েছে। রুটসমূহের মধ্যে রয়েছে- কক্সবাজার, জামালপুর, টাঙ্গাইল, ভৈরববাজার, জয়দেবপুর, পঞ্চগড়, খুলনা, চাটমোহর, রাজশাহী ও যশোর। এসব রুট থেকে বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। এ কারণে স্বল্প দূরত্বের তিনটি লোকাল ট্রেনের যাত্রা ২৫ ডিসেম্বরের (আজ) জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীরা বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, কুড়িল সংলগ্ন এলাকায় নেতাকর্মীরা ‘মা-মাটি ডাকছে, তারেক রহমান আসছে’, ‘বীরের বেশে তারেক রহমান, আসবে এবার বাংলাদেশে’ স্লোগানে এলাকা মুখর করে তুলছেন। টাঙ্গাইল ও পটুয়াখালীসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা কর্মীরা জানিয়েছেন, তারা তাদের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখার প্রত্যাশায় ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে আগেভাগেই ঢাকায় উপস্থিত হয়েছেন।
২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান এবং ২০০৮ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে তার এই প্রত্যাবর্তনে উজ্জীবিত বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
অর্থ-বাণিজ্য: নির্বাচনের প্রার্থীদের জন্য শনিবার সব ব্যাংক খোলা থাকবে