image

আই হ্যাভ এ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অ্যান্ড ফর দ্য কান্ট্রি’—বাস্তবায়নে সহযোগিতা চাইলেন তারেক রহমান

বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

দেশ ও দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে তা বাস্তবায়নে দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশে ফেরার পর পূর্বাচলের সংবর্ধনা সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদবিরোধী নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের ঐতিহাসিক বক্তব্যের সঙ্গে মিল রেখে তিনি বলেন, ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি’।

বৃহস্পতিবার পূর্বাচলের সংবর্ধনা মঞ্চে সমবেত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন,“প্রিয় ভাই-বোনেরা, মার্টিন লুথার কিং… নাম শুনেছেন না আপনারা? নাম শুনেছেন তো আপনারা? মার্টিন লুথার কিং, তার একটি বিখ্যাত ডায়লগ আছে, আই হ্যাভ এ ড্রিম।

আজ এই বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আপনাদের সকলের সামনে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন সদস্য হিসেবে আপনাদের সামনে আমি বলতে চাই, আই হ্যাভ এ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি।”

তিনি বলেন, দেশের মানুষের স্বার্থে, উন্নয়ন ও ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য প্রণীত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সারাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।

“এই জনসমুদ্রে যত মানুষ উপস্থিত আছেন, এই সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শক্তি যত মানুষ উপস্থিত আছেন, প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমার লাগবে, প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমাদের লাগবে।”

তারেক রহমান বলেন, জনগণ পাশে থাকলে এবং সহযোগিতা করলে ইনশাআল্লাহ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

১৫ মিনিটের বক্তৃতা শেষে আবার মাইকের কাছে ফিরে এসে তিনি বলেন,“মনে রাখবেন, উই হ্যাভ এ প্ল্যান। উই হ্যাভ এ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অ্যান্ড ফর দ্য কান্ট্রি। ইনশাআল্লাহ আমরা সেই প্ল্যান বাস্তবায়ন করব।”

২০০৮ সালে কারামুক্ত হয়ে লন্ডনে চলে যাওয়ার পর প্রায় দেড় যুগ নির্বাসিত জীবন কাটান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৪৩ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান।

বিমানবন্দর থেকে গাড়িবহর নিয়ে তারা পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়কের দিকে রওনা হন, যেখানে তাকে সংবর্ধনা দিতে সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

‘প্রিয় বাংলাদেশ’ সম্বোধনে বক্তব্য শুরু করে তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে যেমন এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, তেমনি ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতাসহ সর্বস্তরের মানুষ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছে।

তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা চায়, যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত হোক।

সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই দেশে পাহাড়ি ও সমতলের মানুষ আছে, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে।

সবার জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন,“যে বাংলাদেশে একজন নারী, একজন পুরুষ, একজন শিশু—যেই হোক না কেন—নিরাপদে ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরে আসতে পারে।”

দেশের জনসংখ্যাগত বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, চার কোটির বেশি তরুণ, প্রায় পাঁচ কোটি শিশু, ৪০ লাখ প্রতিবন্ধী এবং কয়েক কোটি কৃষক-শ্রমিক রয়েছেন। এসব মানুষের প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তারেক রহমান বলেন,

“যেকোনো মূল্যে আমাদের এই দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে, যেকোনো বিশৃঙ্খলাকে পরিত্যাগ করতে হবে, যেন শিশু, নারী, পুরুষ—সবাই নিরাপদ থাকে।”

তিনি স্মরণ করেন ১৯৭১ সালের শহীদদের, বিগত ১৫ বছরে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে গুম-খুনের শিকার মানুষদের এবং ২০২৪ সালের আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী তরুণদের।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদির নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন,

“ওসমান হাদি শহীদ হয়েছে। সে চেয়েছিল গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক।”

শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবাইকে ধৈর্যশীল ও শান্ত থাকতে হবে এবং তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বের দায়িত্ব নিতে হবে।

বিভিন্ন আধিপত্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্রের কথাও উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেকোনো উস্কানির মুখে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

শেষাংশে আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, আল্লাহর রহমত ও সাহায্য থাকলে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ন্যায়পরায়ণতার আদর্শে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন, তারা সেই ন্যায়পরায়ণতার আলোকে দেশ পরিচালনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।

বক্তৃতার শেষদিকে মায়ের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান তারেক রহমান। তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এ দেশের মানুষকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবেসেছেন।

সবশেষে নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্লোগান ধরেন তিনি—

“সবাই মিলে করব কাজ, গড়ব মোদের বাংলাদেশ।”

‘রাজনীতি’ : আরও খবর

সম্প্রতি