ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সমঝোতা করেছে বলে জানিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তবে তিনি বলেছেন, জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে তাদের কোনো ‘আদর্শিক ঐক্য হয়নি’। এটি একটি ‘নির্বাচনী সমঝোতা’।
রোববার, (২৮ ডিসেম্বর ২০২৫) রাতে ঢাকার বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন। এর আগে বিকেলে জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এনসিপি তাদের সঙ্গে ১০ দলীয় নির্বাচনী সমঝোতায় থাকছে।
এনসিপির সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জামায়াতসহ আট দলের সঙ্গে সমঝোতার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম থেকে বলে এসেছি, আসন্ন নির্বাচনে আমরা এককভাবে অংশ নিতে চাই, ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে চাই। সে অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা চলছিল। সারা দেশ থেকে আমরা আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়ন আহ্বান করেছিলাম। পরে আরও দুটি দলের সঙ্গে (এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন) আমাদের রাজনৈতিক সমঝোতা হয়েছিল। তখন আমরা বলেছিলাম, তিন দলের গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট একত্রে নির্বাচনে অংশ নেব।’
কিন্তু এরপর শরিফ ওসমান হাদির শাহাদাতবরণ এবং তাকে প্রকাশ্যে গুলি করার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনেক বেশি পরিবর্তন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন নাহিদ। তিনি বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারছি, বাংলাদেশে আধিপত্যবাদী আগ্রাসনী শক্তি এখনো কার্যকর রয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা যাদের পরাজিত করেছিলাম, তারা এখনো চক্রান্ত করছে নির্বাচন বানচাল, সংস্কার ও নতুন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য এবং জুলাই প্রজন্মকে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য। সেদিন ওসমান হাদির গায়ে গুলি লেগেছে, কালকে আপনার গায়ে, পরশু আমার গায়ে লাগবে। প্রথম ও প্রধান টার্গেট করা হচ্ছে সারা দেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী তরুণ, নাগরিক, শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের।’
এই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ করার জন্য এবং আধিপত্যবাদী কোনো শক্তি যাতে অভ্যুত্থান-পরবর্তী অগ্রযাত্রাকে ঠেকাতে না পারে সেজন্য এনসিপি বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে বলে জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সেই তাগিদ থেকে আমরা জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সমমনা আট দলের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদের নির্বাচনী সমঝোতায় এনসিপি সম্মত হয়েছে। এনসিপি জামায়াত ও সমমনা আট দলের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমাদের ন্যূনতম কিছু বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে। সামগ্রিক বিষয়ে বা আদর্শিক ঐক্য হয়নি। এটা একটা নির্বাচনী সমঝোতা। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে আমরা ঐকমত্য পোষণ করেছি, আমরা একত্রে নির্বাচনী সময়টা পার করব। এই সমঝোতা একদিকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য, অন্যদিকে আমাদের সংস্কার, বিচার এবং আধিপত্যবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী ন্যূনতম কর্মসূচিও থাকবে।’
আগামীকাল সোমবার দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সমঝোতায় যারা আমাদের প্রার্থী, তারাই মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। সারা দেশে একত্রে নির্বাচনে অংশ নেব।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ দাবি করেন, এনসিপি তার অবস্থানেই আছে। তিনি বলেন, ‘বৃহত্তর ঐক্যে করেছি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এনসিপি তার লক্ষ্য-আদর্শ নিয়েই কাজ করবে।’
এনসিপি থেকে দুই নারী নেত্রীর পদত্যাগে দলে ভাঙনের সুর দেখা গেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, তারা দলের নির্বাহী পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করে, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে জোটের বিষয়ে সিন্ধান্ত নিয়েছেন। কেউ নির্বাচন করবে কি না বা দলে থাকবে কি না এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এনসিপি নির্বাচনে গণভোটে ‘হ্যা’ এর পক্ষে এবং জুলাই সনদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, আরিফুল ইসলাম আদীব, আবদুল হান্নান মাসউদ, মাহমুদা মিতু, দিলশানা পারুল প্রমুখ।