image

সংসদ নির্বাচন: কুড়িগ্রামের চার আসনে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস

সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রামের চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচনি তৎপরতা জোরালো হয়ে উঠেছে। শহর থেকে গ্রাম, চরাঞ্চল থেকে সীমান্তবর্তী এলাকা—সবখানেই প্রার্থী ও ভোটারদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে জনপদ। সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক, পোস্টার-বিলবোর্ড ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের পাশাপাশি ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন প্রার্থীরা।

কুড়িগ্রামে আওয়ামী লীগহীন নির্বাচনি মাঠে এবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের পাশাপাশি তরুণ প্রার্থীরাও ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন।

জেলা জুড়ে নির্বাচনি হাওয়া

উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রামে রয়েছে নয়টি উপজেলা ও চারটি সংসদীয় আসন। প্রতিটি আসনেই এখন নির্বাচনি প্রচারণা তুঙ্গে। প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকেই দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরছেন, আবার কেউ কেউ পরিবর্তন ও নতুন নেতৃত্বের বার্তা দিচ্ছেন।

জাতীয় পার্টির কুড়িগ্রাম-২ আসনের প্রার্থী ও জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক পনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সদরের এই আসন বরাবরই জাতীয় পার্টির ঘাঁটি ছিল। কেবল ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে অল্প ভোটে পরাজিত হন বলে দাবি করেন তিনি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টির বিজয় নিশ্চিত বলে তার বিশ্বাস।

জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমানও জেলার চারটি আসনের মধ্যে অন্তত তিনটিতে লাঙ্গল প্রতীকের জয় নিয়ে আশাবাদী।

কুড়িগ্রাম-১: জয়ের আশা জাপা ও বিএনপির

নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় সদস্য সাইফুর রহমান রানা ধানের শীষ প্রতীকে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে কেন্দ্রীয় ড্যাবের যুগ্ম-সহসম্পাদক ইউনুছ আলীর সমর্থকদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের হারিসুল ইসলাম রনি ও খেলাফত আন্দোলনের শহিদুল ইসলাম ফয়েজী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, গণঅধিকার পরিষদের বিন ইয়ামিন মোল্লাসহ আরও কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীও গণসংযোগ করছেন। বরাবরের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই মাস্টার।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান এই আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি আইনশৃঙ্খলা ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে কুড়িগ্রাম যে জাতীয় পার্টির ঘাঁটি তা প্রমাণ হবে।

২৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই আসনে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ২৯ হাজার ১৬৩ জন। নদীপথ ও ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় নিরাপত্তা, মাদক ও গবাদিপশু চোরাচালান রোধ এখানে বড় চ্যালেঞ্জ।

বিএনপির প্রার্থী সাইফুর রহমান রানা বলেন, বিএনপির ভোট ব্যাংক থাকা সত্ত্বেও জোট রাজনীতির কারণে তিনি বারবার পরাজিত হয়েছেন। দুধকুমারের ভাঙনরোধ, কালিগঞ্জে সেতু, সোনাহাট স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালু ও ইপিজেড স্থাপন তার উন্নয়ন পরিকল্পনায় রয়েছে।

কুড়িগ্রাম-২: উন্নয়ন, নদীভাঙন ও কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি

‘জাতীয় পার্টির দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত কুড়িগ্রাম-২ আসনে এবারও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস। বিএনপির সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, জামায়াতে ইসলামীর ইয়াছিন আলী সরকার, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা নুর বখত মিয়া, এনসিপির আতিক মুজাহিদ ও খেলাফত আন্দোলনের মুফতি নুরুদ্দীন কাশেমী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ ও নাগরিক অধিকারের মেজর (অব.) আব্দুস সালামও প্রচারণা চালাচ্ছেন। বাম জোটের পক্ষ থেকে কমিউনিস্ট পার্টির আনছার আলী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

সদর, ফুলবাড়ি ও রাজারহাট উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ জন।

বিএনপির কায়কোবাদ বলেন, নির্বাচিত হলে উন্নয়ন বঞ্চনা দূর করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নদীভাঙন ও মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করবেন। জামায়াতের ইয়াছিন আলী সরকার মেডিকেল কলেজ স্থাপন, বন্ধ টেক্সটাইল মিল চালু ও ধরলা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন।

কুড়িগ্রাম-৩: বিএনপিতে প্রার্থী বদলের চাপ

উলিপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-3 আসনে বিএনপির প্রার্থী তাসভীর উল ইসলাম গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তবে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকের সমর্থকদের আন্দোলন চলছে।

এ আসনে জামায়াতের ব্যারিস্টার মাহবুব আলম সালেহী, ইসলামী আন্দোলনের আক্কাস আলী সরকার, গণঅধিকার পরিষদের এস এম নুরে এরশাদ সিদ্দিকী ও খেলাফত মজলিসের মামুনুর রশীদ প্রার্থী হয়েছেন।

১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৭ হাজার ২৬২ জন। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের পালাবদলে আসনটি দখলে থাকলেও এবার বিএনপি ও ইসলামপন্থী দলগুলো ছাড় দিতে নারাজ।

কুড়িগ্রাম-৪: দুই ভাই দুই দলের প্রার্থী

চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী আজিজুর রহমান ও জামায়াতের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক—দুই আপন ভাই। এই পারিবারিক লড়াই এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিএনপির ভেতরেও অস্বস্তি রয়েছে। পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা প্রচারে রয়েছেন।

১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪০৬ জন। নদীভাঙন, সীমান্ত নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান এখানকার ভোটারদের প্রধান দাবি।

‘রাজনীতি’ : আরও খবর

সম্প্রতি

Sangbad Image

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: চ্যাটজিপিটিতে ভয়েস ব্যবহার