দীর্ঘ ১৭ বছর পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে পা রাখলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সোমবার,(২৯ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুর ৩টায় তারেক রহমান গুলশান এভিনিউয়ের বাসভবন থেকে রওনা হয়ে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হন এবং নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেশ গড়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যার যতটুকু সামর্থ্য আছে, তা দিয়েই দেশটাকে নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।
তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হতে থাকেন। নেতাকর্মীদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ভিড় ঠেলে বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে তিনি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছান। ভিড়ের কারণে তার গাড়ি কার্যালয়ের সামনে আনতে নিরাপত্তা কর্মীদের বেশ বেগ পেতে হয়। নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড় ঠেলে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে তার প্রায় আধাঘণ্টা সময় লাগে।
বিকেল ৪টায় তিনি কার্যালয়ে পৌঁছালে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত ফুল দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেল এবং সহযোগী অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ফরহাদ হালিম ডোনার, ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহরিন ইসলাম তুহিন ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন।
এরপর তারেক রহমান দোতলায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য নতুনভাবে তৈরি করা চেম্বারে যান। সেখানে তিনি সাংগঠনিক কাজে অংশ নেন। এখানে উল্লেখ্য করার মতো বিষয় হলো, তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে দলীয় কার্যালয় বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছিল।
কার্যালয়ে প্রবেশের পর তারেক রহমান দোতলার বারান্দায় এসে দাঁড়ান এবং নিচে অপেক্ষমাণ নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানান এবং স্লোগান দেন। সেখানে দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘এক মিনিট কথা বলি আপনাদের উদ্দেশে। আজকে কোনো দলীয় কর্মসূচি নেই। যেদিন আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি থাকবে, সেদিন বক্তব্য রাখবো।’
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘শুধু এতটুকু বলবো যার যতটুকু অবস্থান আছে, আসুন দেশটাকে নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করি।’ নাগরিক দায়িত্ববোধের উদাহরণ দিতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘ যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব আমরা সচেষ্ট হই, কোথাও যদি রাস্তায় এক টুকরো কাগজ পড়ে থাকে, ময়লা হয়ে থাকে তা আমরা সরিয়ে দেবো। এভাবে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে আসুন আমরা দেশটাকে গড়ে তুলি।’
বক্তব্য শেষে তারেক রহমান নেতাকর্মীদের রাস্তা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘এখন সবাইকে অনুরোধ করবো, দ্রুত আমরা রাস্তাটা খালি করে দিই যাতে সাধারণ মানুষ চলাফেরা করতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু আজ কোনো অনুষ্ঠান নেই, তাই রাস্তা বন্ধ করে রাখলে সাধারণ মানুষের চলাচলে অসুবিধা হবে। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। সবাই ভালো থাকবেন, আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করবেন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আগমন উপলক্ষে নয়াপল্টন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। সিএসএফ (চেয়ারপারসনস সিকিউরিটি ফোর্স) পুরো কার্যালয় ঘিরে রাখে। এছাড়া র্যাবের ‘ডগ স্কোয়াড’ দিয়ে কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালানো হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ছিল। দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিট থেকে কার্যালয়ের মূল ফটক বন্ধ রাখা হয় এবং প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়।
দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে গত বৃহস্পতিবার দেশে ফেরার পর থেকে তারেক রহমান ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেশে ফিরে তিনি প্রথমে মা খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান এবং পরে গুলশানের বাসভবনে ওঠেন। এর আগে রোববার তিনি প্রথমবারের মতো গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অফিস করেন। এছাড়া তিনি আগারগাঁওয়ে গিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য দিয়ে ভোটার হওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন এবং ঢাকা-১৭ আসন থেকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। গত কয়েকদিনে তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো এবং শ্বশুর রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের কবর জিয়ারত করেন।