ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি তাদের প্রার্থী তালিকায় বড় ধরনের রদবদল এনেছে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলে এই নাটকীয়তা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার পর প্রার্থী তালিকায় চমক এবং মাঠপর্যায়ের জরিপ বিবেচনা করে অন্তত ১৭টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। একদিকে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নে তৃণমূল উজ্জীবিত হলেও, অন্যদিকে প্রায় অর্ধশত আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে দলটি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বগুড়া-৬ (সদর) আসনের পাশাপাশি ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী-ক্যান্টনমেন্ট) আসন থেকেও নির্বাচন করবেন। ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমে বিএনপির সমমনা শরিক দল বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থকে মনোনয়ন দেয়া হলেও শেষ মুহূর্তে তা পরিবর্তন করা হয়। তারেক রহমানের প্রতি সম্মান জানিয়ে পার্থ এই আসন ছেড়ে দিয়েছেন এবং তাকে ভোলা-১ আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ঢাকা-১৭ আসনে তারেক রহমানের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তার প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ, আন্দোলন এবং রাজনৈতিক কৌশল বিবেচনায় গতকাল রোববার ও সোমবার,(২৯ ডিসেম্বর ২০২৫) মিলিয়ে মোট ১৭টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে বিএনপি। বিএনপির দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন আসনে বিক্ষোভ, মিছিল এবং প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সমাবেশ হয়েছে। নেতাকর্মীদের আন্দোলনের তোপে এসব আসনে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলো হলো- চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান): নানামুখী বিতর্ক ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জেরে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবর্তে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকারকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ-৫: ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামানের পরিবর্তে সাবেক এমপি ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালামকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪: সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমানের বয়স ও অসুস্থতার কারণে তার বদলে কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে প্রার্থী করা হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ-২: মিজানুর রহমান সিনহার পরিবর্তে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
ঢাকা-১২: বিএনপি নেতা সাইফুল আলম নীরবের পরিবর্তে জোটসঙ্গী বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হককে এই আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম-১১ আসনে সাঈদ আল নোমানকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম-৪ আসনে কাজী সালাউদ্দিনের পরিবর্তে আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে এবং চট্টগ্রাম-১৪ আসনে জসিমউদ্দিনকে নতুন করে প্রার্থী করা হয়েছে।
মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের ক্ষোভ ও বিদ্রোহ বিএনপির জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৫০টি আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দলের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।
প্রতিনিধিদের দেয়া পাঠানো তথ্য থেকে জানা যায়, নাটোর-১: দল অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলকে মনোনয়ন দিলেও স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু।
ময়মনসিংহ-৮: মনোনয়ন না পেয়ে দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক এমপি নুরুল কবির শাহীন।
পটুয়াখালী-৩: গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুরের আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপি নেতা হাসান মামুন।
ঝিনাইদহ-২: সদ্য বিএনপিতে যোগ দেয়া রাশেদ খানের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র লড়বেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজ।
ঢাকা-১২: জোটের শরিককে আসন ছেড়ে দেয়ায় এখানে স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারেন সাইফুল আলম নীরব।
নোয়াখালী-৫: প্রার্থী ফখরুল ইসলামের মনোনয়ন চ্যালেঞ্জ করে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর করিম চৌধুরী আবেদ এখানে স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারেন।
বিএনপি তাদের মিত্রদের জন্য ১৫টি আসন ছেড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ৪টি, নাগরিক ঐক্য ১টি, গণসংহতি আন্দোলন ১টি, এবং গণঅধিকার পরিষদ ১টি আসন পেয়েছে। নড়াইল-২ আসনে এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং যশোর-৫ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি রশীদ বিন ওয়াক্কাস ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সোমবার, ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। আজ থেকে আগামী রোববার পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় আগামী ২০ জানুয়ারি এবং ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ফেব্রুয়ারি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ৩০০ আসনের মনোনয়ন চূড়ান্ত হলেও প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের কারণে একসঙ্গে তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।