আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সাবেক সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ঢাকার একটি আদালতে আনা হলে তার আইনজীবী বলেন, তিনি বয়স্ক, অসুস্থ একজন মানুষ। তবে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা লতিফ সিদ্দিকী তা মানতে রাজী হননি। বলেন, তিনি সুস্থ ও সবল আছেন। মঙ্গলবার, (৩০ ডিসেম্বর ২০২৫) শাহবাগ থানার এ মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল। বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার আদালতে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়।
এদিন লতিফ সিদ্দিকী ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানসহ কয়েকজন জামিনে থাকা আসামি আদালতে এসে হাজিরা দেন। লতিফ সিদ্দিকী গত ১৬ নভেম্বর আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দিতে আবেদন করেন। তবে মূল নথি না থাকায় ওইদিন এ বিষয়ে শুনানি হয়নি।
মঙ্গলবার, আরও কয়েকজন আসামি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হাজিরার আবেদন করেন। বিচারক এজলাসে উঠলে লতিফ সিদ্দিকীসহ অন্যরা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ান। লতিফ সিদ্দিকীর আইনজীবী এএফএম রেজাউল করিম (হিরন) আদালতকে বলেন, গত ধার্য তারিখে তারা লতিফ সিদ্দিকীকে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হাজির হওয়ার আবেদন করা হয়। ওইদিন মূল নথি না থাকায় শুনানি হয়নি। তার বয়স ৮৭ বছর। তিনি বয়স্ক, অসুস্থ একজন মানুষ।
তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা লতিফ সিদ্দিকী এর বিরোধিতা করে বলেন, ‘আমার শারীরিক অবস্থা খারাপ না, এটা বলবেন না। আমি সুস্থ, সবল- এ বয়সেও।’ এরপর আদালতের উদ্দেশে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার আইনজীবী যে ভঙ্গিতে বলছেন, আমি সহজ করে বলি। দেশের নাগরিক হিসেবে, বয়স, অবদান অনুযায়ী যদি সংযত মনে করেন, তাহলে যতদিন অভিযোগ গঠন না হয় হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেবেন।’
অন্য আসামিদের আইনজীবীরাও শুনানি করেন। পরে আদালত আদেশ অপেক্ষমান রাখেন। পরে খোঁজ নিলে প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই জিন্নাত আলী জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুর কারণে দিনের মতো আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। আদালত এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গত ২৮ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান নিয়ে এক আলোচনা সভায় ‘মব’ হামলার শিকার হন আওয়ামী লীগের সাবেক প্রবীণ নেতা লতিফ সিদ্দিকী, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না। এ ঘটনায় ওই সময় ১৬ জনকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। পরদিন শাহবাগ থানায় তাদের নামেই উল্টো মামলা করা হয়, যেখানে ‘দেশকে অস্থিতিশীল এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ আনে পুলিশ।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বন্ধের লক্ষ্যে গত ৫ আগস্ট ‘মঞ্চ ৭১’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
এ সংগঠনের উদ্দেশ্য জাতির অর্জনকে মুছে ফেলার সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নেয়া। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ২৮ আগস্ট সকাল ১০টায় একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
‘সেগুনবাগিচায় বেলা ১১টায় ডিআরইউ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর মধ্যেই এক দল ব্যক্তি হট্টগোল করে স্লোগান দিয়ে সভাস্থলে ঢুকে পড়েন। একপর্যায়ে তারা অনুষ্ঠানস্থলের দরজা বন্ধ করে দেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কয়েকজনকে লাঞ্ছিত করেন। হট্টগোলকারীরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিড়ে ফেলেন এবং আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
‘এক পর্যায়ে অতিথিদের অনেককেই বের করে দেয়া হলেও আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে পুলিশ এসে ১৬ জনকে আটক করে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন এসআই আমিরুল ইসলাম। পরবর্তীতে এ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।’
তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ আমলে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হওয়া লতিফ সিদ্দিকী ছাড়া বাকি ১৫ জন হলেন- মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন (৭৩), শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন (৫৫), মঞ্জুরুল আলম (৪৯), কাজী এ টি এম আনিসুর রহমান বুলবুল (৭২), গোলাম মোস্তফা (৮১), মো. মহিউল ইসলাম ওরফে বাবু (৬৪), মো. জাকির হোসেন (৭৪), মো. তৌছিফুল বারী খান (৭২), মো. আমির হোসেন সুমন (৩৭), মো. আল আমিন (৪০), মো. নাজমুল আহসান (৩৫), সৈয়দ শাহেদ হাসান (৩৬), মো. শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার (৬৪), দেওয়ান মোহম্মদ আলী (৫০), মো. আব্দুল্লাহীল কাইয়ুম (৬১)।
এই মামলায় পরে সাবেক সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম ও আবু আলম শহীদ খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট ও জজ আদালত লতিফ সিদ্দিকীর জামিন আবেদন নাকচ করলে তার আইনজীবী হাইকোর্টে আবেদন করেন।
বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৬ নভেম্বর লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। এরপর জামিন বাতিল চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের আপিল বেঞ্চ ১০ নভেম্বর জামিন বহাল রাখে। জামিনের নথিপত্র পৌঁছানোর পর ১২ নভেম্বর কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান লতিফ সিদ্দিকী।