alt

মাদারীপুরে ১৩ ইউপির

৯টিতে জয়ী বিদ্রোহীরা, নেপথ্যে পাঁচ কারণ

রিপনচন্দ্র মল্লিক, মাদারীপুর : বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১

মাদারীপুরের কালকিনি ও ডাসার উপজেলায় ১৩টি ইউপি নির্বাচনে নৌকাকে হারিয়ে ৯টি ইউপিতে বিদ্রোহীরা জয় পেয়েছেন। একজন নৌকার প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।

১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কালকিনি ও ডাসার উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাত্র ৩টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বাকি ১০টি ইউপির একটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাই বি এম মিল্টন ইব্রাহীম বিজয়ী হন। বাকি নয়টি জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচটি কারণে এবার কালকিনি ও ডাসার উপজেলায় নৌকার এত বড় পরাজয়। প্রথম কারণ হিসেবে তারা দেখছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপের ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’। এছাড়াও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে উপজেলা আওয়ামী লীগকে উপেক্ষা করে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা তৈরি, কেন্দ্রে পাঠানো তালিকা জালিয়াতি করে পরিবর্তন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিরোধ, দল থেকে বহিষ্কৃত ও বিতর্কিত নেতাকর্মীদের নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের যোগসাজশ। এসব কারণ থাকায় দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেয় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

মনোনয়ন দেয়ার পর থেকে তৃণমূলে থাকা নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শুরু থেকেই মনোনয়ন বাণিজ্য, তৃণমূলের পাঠানো মনোনয়ন জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপের বিরুদ্ধে। ফলে দলের বাইরে গিয়ে প্রায় প্রতিটি ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মাদারীপুরের কালকিনি ও ডাসার উপজেলা। আর সেই দুই উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের এমন ভরাডুবি হতাশার চেয়ে বরং খুশি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, অযোগ্য ও তৃণমূল থেকে সুপারিশ করা প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন না দেয়ায় নৌকার এই পরাজয়। আওয়ামী লীগ করে নৌকার পরাজয় যতটা কষ্টের ঠিক ততটাই আবার আনন্দের।

জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সূত্র মতে, দ্বিতীয় ধাপে কালকিনি উপজেলার ৮টি ও ডাসার উপজেলার ৫টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে। নির্বাচনে ১৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৬ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৭৫ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১২৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৩৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে কালকিনি উপজেলার রমজানপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপের ভাই বি এম মিল্টন ইব্রাহীম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। বাকি ৭টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকার দু’জন প্রার্থী জয় পেয়েছেন। তারা হলেন- আলী নগর ইউনিয়নের সাহীদ পারভেজ ও চরদৌলতখান ইউনিয়নের চাঁনমিয়া শিকদার। বাকি ৫টি ইউপিতে ৪টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও একটি স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন। তারা হলেন কয়ারিয়া ইউনিয়নে কামরুল হাসান নূর মোহাম্মদ, সাহেব রামপুরে মাহবুবুর রহিম মুরাদ সরদার, শিকারমঙ্গলে সিরাজুল আলম, বাঁশগাড়ীতে মোস্তাফিজুর রহমান ও লক্ষ্মীপুরে মৌসুমী হক সুলতানা। তাদের মধ্যে মৌসুমী হক সুলতানা স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। এই লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মজিবর রহমান মোল্লা মাত্র ৩২৫ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।

এছাড়াও ডাসার উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে শুধু ডাসার ইউনিয়নে রেজাউল করিম নৌকা নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। বাকি চারটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়। তারা হলেন গোপালপুর ইউনিয়নে ফরহাদ মাতুব্বর, কাজী বাকাইতে নূর মোহাম্মদ হাওলাদার, নবগ্রামে দুলাল তালুকদার ও বালিগ্রামে মজিবুর রহমান খান। এর ভেতরে নবগ্রামের পুরো ইউনিয়নই ৯৫ ভাগ হিন্দু অধ্যাষিত।

নৌকার পরাজয় সম্পর্কে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা সিদ্দিকা বলেন, ‘টাকা নিয়ে নৌকা প্রতীক দিয়েছে কিন্তু পাবলিক সেন্টিমেন্ট নিতে পারেনি এমপি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যায়নি, গেছে যে টাকা নিছে তার বিরুদ্ধে। তবে যারা জিতেছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। আর যারা যারা ভোট দিছে তারা জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেই ভোট দিবে। কিন্তু যারা টাকার বিনিময়ে নৌকা দিয়েছে তারা আর ভোট পাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা নৌকা কিনেছে আবার যারা টাকা দিয়েও নৌকা পায়নি, তারাও আমাদের বলেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাপ তার পিএ, গানম্যানের মাধ্যমে টাকা নিছে। আবার কারও কারও টাকা ফেরতও দিয়েছে এমপি। এটি একজন সংসদ সদস্য করতে পারে না। তিনি নৌকাকে অপমান করেছে। আজ তার কারণে নৌকার এই দশা।’

দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূলের তালিকাকে উপেক্ষা করায় নৌকার হার হয়েছে বলে মনে করছেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর মামুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের মতামত ও তালিকা উপেক্ষা করা, প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা নেই এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে আজ নৌকা চোখের সামনে হেরে গেল।’

নৌকার পরাজয় ও তৃণমূলের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার স্থানীয় প্রতিনিধি ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এখানে সবাই আওয়ামী লীগ। যারা হারছে তারাও ভালো। তবে যারা বিজয়ী হয়েছে তারা জনপ্রিয়। আসলে তৃণমূল পর্যায় নৌকার গ্রহণযোগ্যতা কম। এ কারণে আমাদের সংসদ সদস্য নৌকা উঠিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে যে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ দেয়া হচ্ছে এটি সঠিক নয়।’

ছবি

নাশকতার দুই মামলা থেকে ফখরুল ও আব্বাসসহ ১০৬ জনকে অব্যাহতি

ছবি

এখন কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়তে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে: মির্জা ফখরুল

ছবি

অভিন্ন দাবিতে তিন ইসলামী দলের যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি

যুগপতে পাঁচ দাবিতে জামায়াতের তিন দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৫ সনাতন যোগ দিলেন জামায়াতে

ছবি

তারেকের নিরাপত্তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বাবরের আলোচনা

ছবি

যুগপতে কারা থাকছে ঠিক হয়নি, তবে খেলাফতের কর্মসূচি ঘোষণা

জামায়াতের আযাদ: মুক্তিযুদ্ধ না মানলে ‘বাংলাদেশ অস্বীকার করা হবে’

ছবি

জুলাই সনদের গেরো: এবার আদালতের মত নিতে বলল বিএনপি

ছবি

‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরে রাজি বিএনপি, তবে আইনি ভিত্তি নিয়ে মতভেদ

ছবি

ডাকসু-জাকসু নির্বাচনে ‘মাস্টার প্ল্যান’ প্রশ্ন তুললেন রিজভী

ছবি

মৌলবাদীরা ‘বেহেশতের টিকেট’ বিক্রি করছে: বিএনপির গয়েশ্বর

ছবি

সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবিতে খেলাফত মজলিসের তিন দিনের কর্মসূচি

ছবি

সাবেক প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান এবার তুহিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার

ছবি

রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে বাস্তুতন্ত্রও নিরাপদ থাকবে: তারেক রহমান

ছবি

সরকার ও উপদেষ্টারা মাহফুজদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে: নাহিদ ইসলাম

ছবি

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে পশু-পাখি ও বাস্তুতন্ত্রের অধিকার নিশ্চিত হবে: তারেক রহমান

ছবি

বসুন্ধরায় গোপন বৈঠক: ময়মনসিংহ জেলা আ.লীগ নেতার দোষ স্বীকার

ছবি

ঢাকার আগারগাঁওয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ‘নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল

ছবি

আওয়ামী লীগ লুটপাট করে দেশকে দেউলিয়া করে দিয়েছে: মঈন খান

ছবি

ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তারেকের আহ্বান

ছবি

বাংলাদেশের সংবিধানে শ্রমিক, জনতার অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি: এনসিপি

ছবি

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: মিন্টু

ছবি

জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: বিএনপি

ছবি

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে গাজীপুরে সমাবেশ ও গণমিছিল করেছে ইসলামিক আন্দোলন

ছবি

নির্বাচনের আগে পরিবেশ সৃষ্টি জরুরি: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

ছবি

সংবিধান সংশোধন: মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন পদ্ধতিতে ভিন্নমত রাজনৈতিক দলগুলোর

ছবি

বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন হলে দেশের সংকট আরও বাড়বে: আনিসুল ইসলাম

ছবি

‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নে কোনো কিছু চাপিয়ে দেবে না কমিশন: আলী রীয়াজ

ছবি

ডাকসু জয়ে ছাত্র শিবিরকে অভিনন্দন পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর

ছবি

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ পদত্যাগ ঘোষণা

ছবি

আ.লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ছাত্রলীগের সব ভোট নিয়ে নিয়েছে শিবির : মির্জা আব্বাস

ছবি

ব্রিটিশ হাই কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জামায়াতে ইসলামের আমির

ছবি

ডাকসুতে জয়ীদের ব্যক্তিগত অভিনন্দন জানালেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি

ডাকসু নির্বাচন: ফল ঘোষণা ঘিরে কারচুপির অভিযোগ, ফল প্রত্যাখ্যান করলেন আবিদুল

tab

news » politics

মাদারীপুরে ১৩ ইউপির

৯টিতে জয়ী বিদ্রোহীরা, নেপথ্যে পাঁচ কারণ

রিপনচন্দ্র মল্লিক, মাদারীপুর

বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১

মাদারীপুরের কালকিনি ও ডাসার উপজেলায় ১৩টি ইউপি নির্বাচনে নৌকাকে হারিয়ে ৯টি ইউপিতে বিদ্রোহীরা জয় পেয়েছেন। একজন নৌকার প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।

১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কালকিনি ও ডাসার উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাত্র ৩টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বাকি ১০টি ইউপির একটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাই বি এম মিল্টন ইব্রাহীম বিজয়ী হন। বাকি নয়টি জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচটি কারণে এবার কালকিনি ও ডাসার উপজেলায় নৌকার এত বড় পরাজয়। প্রথম কারণ হিসেবে তারা দেখছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপের ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’। এছাড়াও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে উপজেলা আওয়ামী লীগকে উপেক্ষা করে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা তৈরি, কেন্দ্রে পাঠানো তালিকা জালিয়াতি করে পরিবর্তন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিরোধ, দল থেকে বহিষ্কৃত ও বিতর্কিত নেতাকর্মীদের নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের যোগসাজশ। এসব কারণ থাকায় দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেয় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

মনোনয়ন দেয়ার পর থেকে তৃণমূলে থাকা নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শুরু থেকেই মনোনয়ন বাণিজ্য, তৃণমূলের পাঠানো মনোনয়ন জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপের বিরুদ্ধে। ফলে দলের বাইরে গিয়ে প্রায় প্রতিটি ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মাদারীপুরের কালকিনি ও ডাসার উপজেলা। আর সেই দুই উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের এমন ভরাডুবি হতাশার চেয়ে বরং খুশি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, অযোগ্য ও তৃণমূল থেকে সুপারিশ করা প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন না দেয়ায় নৌকার এই পরাজয়। আওয়ামী লীগ করে নৌকার পরাজয় যতটা কষ্টের ঠিক ততটাই আবার আনন্দের।

জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সূত্র মতে, দ্বিতীয় ধাপে কালকিনি উপজেলার ৮টি ও ডাসার উপজেলার ৫টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে। নির্বাচনে ১৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৬ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৭৫ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১২৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৩৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে কালকিনি উপজেলার রমজানপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপের ভাই বি এম মিল্টন ইব্রাহীম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। বাকি ৭টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকার দু’জন প্রার্থী জয় পেয়েছেন। তারা হলেন- আলী নগর ইউনিয়নের সাহীদ পারভেজ ও চরদৌলতখান ইউনিয়নের চাঁনমিয়া শিকদার। বাকি ৫টি ইউপিতে ৪টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও একটি স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন। তারা হলেন কয়ারিয়া ইউনিয়নে কামরুল হাসান নূর মোহাম্মদ, সাহেব রামপুরে মাহবুবুর রহিম মুরাদ সরদার, শিকারমঙ্গলে সিরাজুল আলম, বাঁশগাড়ীতে মোস্তাফিজুর রহমান ও লক্ষ্মীপুরে মৌসুমী হক সুলতানা। তাদের মধ্যে মৌসুমী হক সুলতানা স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। এই লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মজিবর রহমান মোল্লা মাত্র ৩২৫ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।

এছাড়াও ডাসার উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে শুধু ডাসার ইউনিয়নে রেজাউল করিম নৌকা নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। বাকি চারটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়। তারা হলেন গোপালপুর ইউনিয়নে ফরহাদ মাতুব্বর, কাজী বাকাইতে নূর মোহাম্মদ হাওলাদার, নবগ্রামে দুলাল তালুকদার ও বালিগ্রামে মজিবুর রহমান খান। এর ভেতরে নবগ্রামের পুরো ইউনিয়নই ৯৫ ভাগ হিন্দু অধ্যাষিত।

নৌকার পরাজয় সম্পর্কে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা সিদ্দিকা বলেন, ‘টাকা নিয়ে নৌকা প্রতীক দিয়েছে কিন্তু পাবলিক সেন্টিমেন্ট নিতে পারেনি এমপি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যায়নি, গেছে যে টাকা নিছে তার বিরুদ্ধে। তবে যারা জিতেছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। আর যারা যারা ভোট দিছে তারা জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেই ভোট দিবে। কিন্তু যারা টাকার বিনিময়ে নৌকা দিয়েছে তারা আর ভোট পাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা নৌকা কিনেছে আবার যারা টাকা দিয়েও নৌকা পায়নি, তারাও আমাদের বলেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাপ তার পিএ, গানম্যানের মাধ্যমে টাকা নিছে। আবার কারও কারও টাকা ফেরতও দিয়েছে এমপি। এটি একজন সংসদ সদস্য করতে পারে না। তিনি নৌকাকে অপমান করেছে। আজ তার কারণে নৌকার এই দশা।’

দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূলের তালিকাকে উপেক্ষা করায় নৌকার হার হয়েছে বলে মনে করছেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর মামুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের মতামত ও তালিকা উপেক্ষা করা, প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা নেই এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে আজ নৌকা চোখের সামনে হেরে গেল।’

নৌকার পরাজয় ও তৃণমূলের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার স্থানীয় প্রতিনিধি ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এখানে সবাই আওয়ামী লীগ। যারা হারছে তারাও ভালো। তবে যারা বিজয়ী হয়েছে তারা জনপ্রিয়। আসলে তৃণমূল পর্যায় নৌকার গ্রহণযোগ্যতা কম। এ কারণে আমাদের সংসদ সদস্য নৌকা উঠিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে যে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ দেয়া হচ্ছে এটি সঠিক নয়।’

back to top