alt

রাজনীতি

মাদারীপুরে ১৩ ইউপির

৯টিতে জয়ী বিদ্রোহীরা, নেপথ্যে পাঁচ কারণ

রিপনচন্দ্র মল্লিক, মাদারীপুর : বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১

মাদারীপুরের কালকিনি ও ডাসার উপজেলায় ১৩টি ইউপি নির্বাচনে নৌকাকে হারিয়ে ৯টি ইউপিতে বিদ্রোহীরা জয় পেয়েছেন। একজন নৌকার প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।

১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কালকিনি ও ডাসার উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাত্র ৩টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বাকি ১০টি ইউপির একটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাই বি এম মিল্টন ইব্রাহীম বিজয়ী হন। বাকি নয়টি জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচটি কারণে এবার কালকিনি ও ডাসার উপজেলায় নৌকার এত বড় পরাজয়। প্রথম কারণ হিসেবে তারা দেখছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপের ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’। এছাড়াও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে উপজেলা আওয়ামী লীগকে উপেক্ষা করে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা তৈরি, কেন্দ্রে পাঠানো তালিকা জালিয়াতি করে পরিবর্তন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিরোধ, দল থেকে বহিষ্কৃত ও বিতর্কিত নেতাকর্মীদের নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের যোগসাজশ। এসব কারণ থাকায় দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেয় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

মনোনয়ন দেয়ার পর থেকে তৃণমূলে থাকা নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শুরু থেকেই মনোনয়ন বাণিজ্য, তৃণমূলের পাঠানো মনোনয়ন জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপের বিরুদ্ধে। ফলে দলের বাইরে গিয়ে প্রায় প্রতিটি ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মাদারীপুরের কালকিনি ও ডাসার উপজেলা। আর সেই দুই উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের এমন ভরাডুবি হতাশার চেয়ে বরং খুশি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, অযোগ্য ও তৃণমূল থেকে সুপারিশ করা প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন না দেয়ায় নৌকার এই পরাজয়। আওয়ামী লীগ করে নৌকার পরাজয় যতটা কষ্টের ঠিক ততটাই আবার আনন্দের।

জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সূত্র মতে, দ্বিতীয় ধাপে কালকিনি উপজেলার ৮টি ও ডাসার উপজেলার ৫টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে। নির্বাচনে ১৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৬ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৭৫ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১২৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৩৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে কালকিনি উপজেলার রমজানপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপের ভাই বি এম মিল্টন ইব্রাহীম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। বাকি ৭টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকার দু’জন প্রার্থী জয় পেয়েছেন। তারা হলেন- আলী নগর ইউনিয়নের সাহীদ পারভেজ ও চরদৌলতখান ইউনিয়নের চাঁনমিয়া শিকদার। বাকি ৫টি ইউপিতে ৪টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও একটি স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন। তারা হলেন কয়ারিয়া ইউনিয়নে কামরুল হাসান নূর মোহাম্মদ, সাহেব রামপুরে মাহবুবুর রহিম মুরাদ সরদার, শিকারমঙ্গলে সিরাজুল আলম, বাঁশগাড়ীতে মোস্তাফিজুর রহমান ও লক্ষ্মীপুরে মৌসুমী হক সুলতানা। তাদের মধ্যে মৌসুমী হক সুলতানা স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। এই লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মজিবর রহমান মোল্লা মাত্র ৩২৫ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।

এছাড়াও ডাসার উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে শুধু ডাসার ইউনিয়নে রেজাউল করিম নৌকা নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। বাকি চারটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়। তারা হলেন গোপালপুর ইউনিয়নে ফরহাদ মাতুব্বর, কাজী বাকাইতে নূর মোহাম্মদ হাওলাদার, নবগ্রামে দুলাল তালুকদার ও বালিগ্রামে মজিবুর রহমান খান। এর ভেতরে নবগ্রামের পুরো ইউনিয়নই ৯৫ ভাগ হিন্দু অধ্যাষিত।

নৌকার পরাজয় সম্পর্কে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা সিদ্দিকা বলেন, ‘টাকা নিয়ে নৌকা প্রতীক দিয়েছে কিন্তু পাবলিক সেন্টিমেন্ট নিতে পারেনি এমপি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যায়নি, গেছে যে টাকা নিছে তার বিরুদ্ধে। তবে যারা জিতেছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। আর যারা যারা ভোট দিছে তারা জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেই ভোট দিবে। কিন্তু যারা টাকার বিনিময়ে নৌকা দিয়েছে তারা আর ভোট পাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা নৌকা কিনেছে আবার যারা টাকা দিয়েও নৌকা পায়নি, তারাও আমাদের বলেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাপ তার পিএ, গানম্যানের মাধ্যমে টাকা নিছে। আবার কারও কারও টাকা ফেরতও দিয়েছে এমপি। এটি একজন সংসদ সদস্য করতে পারে না। তিনি নৌকাকে অপমান করেছে। আজ তার কারণে নৌকার এই দশা।’

দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূলের তালিকাকে উপেক্ষা করায় নৌকার হার হয়েছে বলে মনে করছেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর মামুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের মতামত ও তালিকা উপেক্ষা করা, প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা নেই এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে আজ নৌকা চোখের সামনে হেরে গেল।’

নৌকার পরাজয় ও তৃণমূলের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার স্থানীয় প্রতিনিধি ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এখানে সবাই আওয়ামী লীগ। যারা হারছে তারাও ভালো। তবে যারা বিজয়ী হয়েছে তারা জনপ্রিয়। আসলে তৃণমূল পর্যায় নৌকার গ্রহণযোগ্যতা কম। এ কারণে আমাদের সংসদ সদস্য নৌকা উঠিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে যে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ দেয়া হচ্ছে এটি সঠিক নয়।’

ছবি

বিএনপি দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে : কাদের

ছবি

‘স্বার্থহীন’ রাজনীতির উদাহরণ পঙ্কজ ভট্টাচার্য

ছবি

মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা নির্দেশ না মানলে ব্যবস্থা: কাদের

দুই ধাপের ভোটেই এমপির স্বজনরা

দুই ধাপের ভোটেই এমপির স্বজনরা

প্রথম ধাপে চার উপজেলায় ভোটের প্রয়োজন নেই

ছবি

মাদারীপুরে দুইটি উপজেলায় ২১ প্রার্থীর প্রতিক বরাদ্দ

ছবি

দেশি-বিদেশি চক্র নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত করছে : কাদের

ছবি

উপজেলা নির্বাচন: পরশুরামে এবারও ভোটের প্রয়োজন হবে না

চেয়ারম্যান পদে জামায়াত নেতার মনোনযন প্রত্যাহার, দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী নেই

ছবি

হাতিয়াতে ভোট ছাড়াই জয়ী হচ্ছেন চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস-চেয়ারম্যান

ছবি

তাপপ্রবাহের কারণে বিএনপির ২৬ এপ্রিলের সমাবেশ স্থগিত

লালমনিরহাটে দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করেই সাবেক মন্ত্রীর ভাই-ছেলের লড়াই

ছবি

শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন যারা

ছবি

সেনবাগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন পদে ১৭ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল

কসবায় নির্বাচন থেকে সরছেন না মন্ত্রীর আত্মীয় ছাইদুর

ছবি

স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন করে প্রাইভেট হাসপাতালের রোগ নির্ণয় পরীক্ষার ফি নির্ধারণ: স্বাস্থ্য মন্ত্রী

ছবি

রাজনৈতিকভাবে টালমাটাল অবস্থায় বিএনপি : ওবায়দুল কাদের

ছবি

১০ দিনে ৫ লাখ বৃক্ষ রোপণ করবে ছাত্রলীগ

ছবি

সন্ত্রাসী অপরাধে গ্রেপ্তারদেরও নিজেদের কর্মী দাবী করছে বিএনপি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

আমরা সবাই মিলে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের রাজনীতি করতে চাই-- অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি

ছবি

স্থানীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রয়োজন নেই: ইসি আলমগীর

ছবি

সরকার চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে, যেকোনো সময় ডুবে যাবে: রিজভী

ছবি

ইরাকে ইরানপন্থি বাহিনীর ঘাঁটিতে বিমান হামলায় হতাহত ৭

ছবি

আবদুল আউয়াল মিন্টু হাসপাতালে ভর্তি

ছবি

আ.লীগের সব রকম কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ থাকবে : কাদের

ছবি

আমি লজ্জিত-দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী, দোষীদের কপালে দুঃখ আছে : পলক

ছবি

যারা নুন-ভাতের কথাও ভাবতে পারত না, এখন তারা মাছ-মাংসের চিন্তা করে : শেখ হাসিনা

মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আ’লীগের

ছবি

মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়া : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

খালেদা জিয়া ডাল-ভাত খাওয়াতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন : শেখ হাসিনা

ছবি

বিএনপিসহ স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে : ওবায়দুল কাদের

ছবি

মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

ছবি

মনোনয়নে বিএনপি-জামায়াতের নেতারা, তবে দল দু’টির বর্জনের ঘোষণা

ছবি

আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা বিএনপির

ছবি

হিটলারের চেয়েও ভয়ঙ্কর নেতানিয়াহু : ওবায়দুল কাদের

tab

রাজনীতি

মাদারীপুরে ১৩ ইউপির

৯টিতে জয়ী বিদ্রোহীরা, নেপথ্যে পাঁচ কারণ

রিপনচন্দ্র মল্লিক, মাদারীপুর

বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১

মাদারীপুরের কালকিনি ও ডাসার উপজেলায় ১৩টি ইউপি নির্বাচনে নৌকাকে হারিয়ে ৯টি ইউপিতে বিদ্রোহীরা জয় পেয়েছেন। একজন নৌকার প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।

১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কালকিনি ও ডাসার উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাত্র ৩টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বাকি ১০টি ইউপির একটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাই বি এম মিল্টন ইব্রাহীম বিজয়ী হন। বাকি নয়টি জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচটি কারণে এবার কালকিনি ও ডাসার উপজেলায় নৌকার এত বড় পরাজয়। প্রথম কারণ হিসেবে তারা দেখছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপের ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’। এছাড়াও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে উপজেলা আওয়ামী লীগকে উপেক্ষা করে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা তৈরি, কেন্দ্রে পাঠানো তালিকা জালিয়াতি করে পরিবর্তন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিরোধ, দল থেকে বহিষ্কৃত ও বিতর্কিত নেতাকর্মীদের নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের যোগসাজশ। এসব কারণ থাকায় দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেয় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

মনোনয়ন দেয়ার পর থেকে তৃণমূলে থাকা নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শুরু থেকেই মনোনয়ন বাণিজ্য, তৃণমূলের পাঠানো মনোনয়ন জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপের বিরুদ্ধে। ফলে দলের বাইরে গিয়ে প্রায় প্রতিটি ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মাদারীপুরের কালকিনি ও ডাসার উপজেলা। আর সেই দুই উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের এমন ভরাডুবি হতাশার চেয়ে বরং খুশি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, অযোগ্য ও তৃণমূল থেকে সুপারিশ করা প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন না দেয়ায় নৌকার এই পরাজয়। আওয়ামী লীগ করে নৌকার পরাজয় যতটা কষ্টের ঠিক ততটাই আবার আনন্দের।

জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সূত্র মতে, দ্বিতীয় ধাপে কালকিনি উপজেলার ৮টি ও ডাসার উপজেলার ৫টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে। নির্বাচনে ১৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৬ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৭৫ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১২৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৩৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে কালকিনি উপজেলার রমজানপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপের ভাই বি এম মিল্টন ইব্রাহীম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। বাকি ৭টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকার দু’জন প্রার্থী জয় পেয়েছেন। তারা হলেন- আলী নগর ইউনিয়নের সাহীদ পারভেজ ও চরদৌলতখান ইউনিয়নের চাঁনমিয়া শিকদার। বাকি ৫টি ইউপিতে ৪টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও একটি স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন। তারা হলেন কয়ারিয়া ইউনিয়নে কামরুল হাসান নূর মোহাম্মদ, সাহেব রামপুরে মাহবুবুর রহিম মুরাদ সরদার, শিকারমঙ্গলে সিরাজুল আলম, বাঁশগাড়ীতে মোস্তাফিজুর রহমান ও লক্ষ্মীপুরে মৌসুমী হক সুলতানা। তাদের মধ্যে মৌসুমী হক সুলতানা স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। এই লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মজিবর রহমান মোল্লা মাত্র ৩২৫ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।

এছাড়াও ডাসার উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে শুধু ডাসার ইউনিয়নে রেজাউল করিম নৌকা নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। বাকি চারটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়। তারা হলেন গোপালপুর ইউনিয়নে ফরহাদ মাতুব্বর, কাজী বাকাইতে নূর মোহাম্মদ হাওলাদার, নবগ্রামে দুলাল তালুকদার ও বালিগ্রামে মজিবুর রহমান খান। এর ভেতরে নবগ্রামের পুরো ইউনিয়নই ৯৫ ভাগ হিন্দু অধ্যাষিত।

নৌকার পরাজয় সম্পর্কে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা সিদ্দিকা বলেন, ‘টাকা নিয়ে নৌকা প্রতীক দিয়েছে কিন্তু পাবলিক সেন্টিমেন্ট নিতে পারেনি এমপি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যায়নি, গেছে যে টাকা নিছে তার বিরুদ্ধে। তবে যারা জিতেছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। আর যারা যারা ভোট দিছে তারা জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেই ভোট দিবে। কিন্তু যারা টাকার বিনিময়ে নৌকা দিয়েছে তারা আর ভোট পাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা নৌকা কিনেছে আবার যারা টাকা দিয়েও নৌকা পায়নি, তারাও আমাদের বলেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাপ তার পিএ, গানম্যানের মাধ্যমে টাকা নিছে। আবার কারও কারও টাকা ফেরতও দিয়েছে এমপি। এটি একজন সংসদ সদস্য করতে পারে না। তিনি নৌকাকে অপমান করেছে। আজ তার কারণে নৌকার এই দশা।’

দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূলের তালিকাকে উপেক্ষা করায় নৌকার হার হয়েছে বলে মনে করছেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর মামুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের মতামত ও তালিকা উপেক্ষা করা, প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা নেই এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে আজ নৌকা চোখের সামনে হেরে গেল।’

নৌকার পরাজয় ও তৃণমূলের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার স্থানীয় প্রতিনিধি ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এখানে সবাই আওয়ামী লীগ। যারা হারছে তারাও ভালো। তবে যারা বিজয়ী হয়েছে তারা জনপ্রিয়। আসলে তৃণমূল পর্যায় নৌকার গ্রহণযোগ্যতা কম। এ কারণে আমাদের সংসদ সদস্য নৌকা উঠিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে যে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ দেয়া হচ্ছে এটি সঠিক নয়।’

back to top