alt

নেতার ঘোষণা, কিন্তু মাঠে নেই কর্মীরা

সৌরভ হোসেন সিয়াম, নারায়ণগঞ্জ : মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী ২০২২

নাসিক নির্বাচন : প্রচারণায় আ’লীগ প্রার্থী আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর। দু’জনেই যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে -প্রণব রায়

নানা আলোচনা ও অভিযোগের মুখে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ওই ঘোষণা পর্যন্তই। মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) সারাদিনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী দুটি ওয়ার্ডে প্রচারণা চালিয়েছেন। সেখানে দেখা যায়নি শামীম ওসমান অনুসারী কোন নেতাকে। এমনকি নিয়মিত আইভীর পক্ষে ওয়ার্ডভিত্তিক যেসব প্রচারণা চলেছে সেখানেও দেখা যায়নি কাউকে। তারা কোথাও প্রচারণা করেছেন এমন কোন খবর আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন কিংবা আইভীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আদিনাথ বসুর কাছে নেই। আইভীর সঙ্গে নিয়মিত প্রচারণায় অংশ নেয়া নেতারাও বলেন, ওই অংশের (শামীম ওসমান অনুসারী) কেউই ছিলেন না।

গত ২৮ ডিসেম্বর সিটি নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থীরা সবাই নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েন। ব্যানারে, পোস্টারে ছেয়ে যায় নগরীর প্রতিটি অলি-গলি। দিনরাত মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। দুইবারের নির্বাচিত সিটি মেয়র এবং আবারও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীও ব্যস্ত প্রচারে। তবে শুরু থেকেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে চুপ ছিলেন দলীয় সাংসদ শামীম ওসমান। আলোচনা চলছিল, শামীম ওসমান দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে সমর্থন দিয়েছেন।

নির্বাচন ঘিরে প্রভাবশালী এই সাংসদের চুপ থাকা এবং অনুসারীদের কর্মকান্ড এমন ইঙ্গিত দিচ্ছিল। শামীম ওসমানের নীরবতা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগও। কেন্দ্রীয় নেতাদের একাধিক বক্তব্যেই ক্ষোভের বিষয়টি ফুটে উঠেছিল। গত ৭ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জে এক কর্মিসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কারও নাম উল্লেখ না করে এক সাংসদকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘নৌকা নিয়েই এমপি হয়েছেন। বেঁচে থাকতে আগামীবার আপনাকে নৌকা পেতে দেবো না।’ এর পরদিনই শামীম ওসমান অনুসারী নেতাদের নেতৃত্বে থাকা মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীও সাংবাদিকদের সামনে সরাসরিই বলেন, কথিত ‘গডফাদার’ শামীম ওসমান স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারকে নির্বাচনে নামিয়েছেন। শামীম ওসমান নৌকার বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরোধিতা করছেন। এর একদিন পরই ১০ জানুয়ারি জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন শামীম ওসমান। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নৌকার বাইরে যাবার কোন উপায় নেই। তিনি নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অনুসারী আওয়ামী লীগ, মহিলা লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও মাঠে নামার নির্দেশ দেন। তবে আদতে তার কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, শামীম ওসমানের ঘোষণার কোন প্রতিফলন নির্বাচনী মাঠে দেখা যায়নি। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী তিনি নিজে সংসদ সদস্য হওয়ায় সরাসরি প্রচারে নামতে পারবেন না। তবে তার অনুসারী লোকজনের কাউকেই মঙ্গলবার সারাদিনে কোথাও কোন প্রচারে দেখা যায়নি।

স্থানীয় লোকজন ও রাজনীতিকরা বলছেন, শামীম ওসমান কখনই আইভীকে সমর্থন দেননি। গত নির্বাচনেও সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েও আর মাঠে দেখা যায়নি শামীম ওসমান কিংবা তার কর্মী-সমর্থকদের। অভিযোগ রয়েছে, ওই নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন শামীম ওসমান। এবারও দলীয় চাপে হোক কিংবা রাজনৈতিক কৌশলের কারণেই হোক শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা পর্যন্তই শেষ। উল্টো নেপথ্যে থেকে শামীম ওসমান ষড়যন্ত্র করতে পারেন বলেও আশঙ্কা করছেন আইভী সমর্থকরা।

জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে এবং বিকেলে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণা চালান সেলিনা হায়াৎ আইভী। এই সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল কাদির, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক রানু খন্দকার, সদস্য সামসুজ্জামান ভাষানী, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য সুমি আক্তার প্রমুখ। বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণা চালিয়েছেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে গোলাম মতুর্জা পাপ্পা।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আনিসুর রহমান দিপু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত, রূপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রমিক লীগ নেতা হুমায়ূন কবির প্রমুখ। এ ছাড়া দুপুরে শহরে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মিছিল ও গণসংযোগ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন সংবাদকে বলেন, সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিলেও সাংসদের অনুসারী কেউ কোথাও প্রচারণায় ছিলেন না। নির্বাচন পরিচালনার সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকলেও তার সঙ্গে সাংসদ অনুসারী কেউ প্রচারণার বিষয়ে যোগাযোগ করেননি। তবে বন্দরে দুপুরে ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল করেছে বলে শুনেছেন আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, ‘শামীম ওসমানের নৌকা, অয়ন ওসমানের (সাংসদ পুত্র) নৌকা’ বলে স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা নৌকার পক্ষে বন্দরে মিছিল করেছে শুনেছি। তবে উল্লেখযোগ্য কোন নেতা সেখানে ছিলেন না। ওই মিছিলে ‘ভাইয়ের নাম বলেছে দশবার, আইভীর নাম বলেছে একবার’। এতেই সবকিছু স্পষ্ট।

এদিকে নির্বাচনের আর মাত্র চার দিন বাকি। সেলিনা হায়াৎ আইভী সমর্থকরা বলছেন, শেষ সময়ে শামীম ওসমান কিংবা তার সমর্থকরা প্রচারণায় আসলেও নির্বাচনে তেমন প্রভাব পড়বে না। তাছাড়া শামীম ওসমানের সমর্থন এই নির্বাচনে তেমন জরুরি বলেও মনে করছেন না তারা।

গত ২৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন আইভী। প্রায় প্রতিদিনই আইভীর সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সংবাদকে বলেন, শামীম ওসমান ঘোষণা দিলেও সারাদিন কেউ প্রচারণায় ছিলেন না। অনুসারী নেতাদের কেউ কেউ পার্টি অফিসে (দলীয় কার্যালয়) আসেন। চা খেয়ে চলে যান। এখনও না নামলে আর কবে নামবেন তারা, নির্বাচনের পর? এই প্রশ্নও জুড়ে দেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনী মাঠ আমরাই গরম করেছি। আমাদের অনুকূলেই সবকিছু রয়েছে। এই শেষ সময়ে আর কাউকে আমাদের প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রার্থীর বিজয় হবেই। কোন ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না।’

এই বিষয়ে কথা বলতে সাংসদ শামীম ওসমান অনুসারী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের চারজন নেতার মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি। অনুসারী জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের দুই নেতাকে কল করলে তাদের সাড়াও পাওয়া যায়নি।

এদিকে নৌকার প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘দল যেহেতু আমাকে নমিনেশন দিয়েছে সেক্ষেত্রে দল আমার সঙ্গেই আছে। দলের ভেতর থেকে কে আসলো না, সেটা আমার দেখার বিষয় না। সেটা দলই দেখবে। আমার আস্থা জনগণের প্রতি।’

ছবি

দ্বিতীয় পদ্মা সেতু হলে দৌলতদিয়ার মাটি সোনায় পরিণত হবে : খৈয়ম

ছবি

আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই: শফিকুল আলম

ছবি

‘ভুল’ হয়ে থাকলে শর্তহীনভাবে ক্ষমা চাই: শফিকুর রহমান

ছবি

আলোচনা সভায় বক্তারা: দলগুলো জোট, আসন ভাগে ব্যস্ত, জুলাইয়ের আকাক্সক্ষা স্থান পায়নি

ছবি

উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমদুকে ‘পদত্যাগ করতে’ বলা হয়েছিল

ছবি

সনদ বাস্তবায়নে ‘আইন জারি করার অধিকার’ প্রধান উপদেষ্টার নেই: সালাহউদ্দিন

ছবি

‘রাষ্ট্র আবেগে নয়, আইনেই চলে’ ; সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি

নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে কিছু রাজনৈতিক দল: মির্জা ফখরুল

ছবি

বিতর্কিত কর্মকর্তাদের ভোট দায়িত্বে না দেওয়ার আহ্বান বিএনপির

ছবি

সাতচল্লিশ থেকে এখন পর্যন্ত সব ভুলের জন্য জামায়াতের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা: শফিকুর রহমান

ছবি

দুইশ’ কোটি টাকা পাচারের মামলায় রোববারের মধ্যে আদালতে হাজিরার নির্দেশ সম্রাটকে

ছবি

নির্বাচনের আগে সরকারের ‘বিতর্কিত ব্যক্তিদের চলে যেতে হবে’: আমীর খসরু

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক: কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি জামায়াতের, অভিযোগ আছে এনসিপিরও

ছবি

গণভোটের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সুযোগ নেই: নাহিদ ইসলাম

ছবি

বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ দাবি বিএনপির আমীর খসরুর

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এনসিপি ও জামায়াতের বৈঠক বিকালে

ছবি

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুরের পর তালা

ছবি

অন্তর্বর্তীকে ‘তত্ত্বাবধায়কে’ রূপ দেয়ার দাবি প্রধান উপদেষ্টাকে জানালো বিএনপি

ছবি

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধি দলের বৈঠক

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধি দলের বৈঠক

ছবি

ঢাকায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ঝটিকা মিছিল, গ্রেপ্তার ১৩১

বগুড়ায় সারজিস আলমের গাড়িবহরে ককটেল হামলা

ছবি

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপি মহাসচিবের আহ্বান

ছবি

বগুড়ায় এনসিপির সমন্বয় সভাস্থলে ককটেল হামলা, দুইটি বিস্ফোরণ

ছবি

নির্বাচনকেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা: নির্বাচন আয়োজনের উপযুক্ত পরিবেশ আছে ইসি সচিব

ছবি

আওয়ামী লীগের আগে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়া উচিত : বুলু

ছবি

ফরিদপুরে সংঘর্ষের অভিযোগে মুখোমুখি এ কে আজাদ ও নায়াব ইউসুফ

এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে উদ্যোগ নেবে বিএনপি: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি

ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আট দিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব

নোয়াখালীর সদরের নেওয়াজ পুরে -বিএনপি জামাত সংঘর্ষ,আহত অন্তত ৪০ জন

নির্বাচন কমিশন ‘চার ভাগ’ হয়ে গেছে, গ্রহণযোগ্য ভোটার তালিকা ও দুর্নীতিমুক্ত ইসি না হলে ভোটে যাবে না এনসিপি

জুলাই সনদে সইয়ের পরও রাজপথে: ব্যাখ্যা জামায়াতের

জামায়াতের ‘পিআর আন্দোলন’ রাজনৈতিক প্রতারণা: নাহিদ ইসলাম

শাহজালালে অগ্নিকাণ্ড: জনগণ ‘পরিকল্পিত’ বলে বিশ্বাস করছে বললেন ফখরুল

জুলাই সনদে আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হওয়ায় সই করেনি এনসিপি

ছবি

সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ নাহিদ ইসলাম, ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান এনসিপির

tab

নেতার ঘোষণা, কিন্তু মাঠে নেই কর্মীরা

সৌরভ হোসেন সিয়াম, নারায়ণগঞ্জ

নাসিক নির্বাচন : প্রচারণায় আ’লীগ প্রার্থী আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর। দু’জনেই যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে -প্রণব রায়

মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী ২০২২

নানা আলোচনা ও অভিযোগের মুখে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ওই ঘোষণা পর্যন্তই। মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) সারাদিনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী দুটি ওয়ার্ডে প্রচারণা চালিয়েছেন। সেখানে দেখা যায়নি শামীম ওসমান অনুসারী কোন নেতাকে। এমনকি নিয়মিত আইভীর পক্ষে ওয়ার্ডভিত্তিক যেসব প্রচারণা চলেছে সেখানেও দেখা যায়নি কাউকে। তারা কোথাও প্রচারণা করেছেন এমন কোন খবর আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন কিংবা আইভীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আদিনাথ বসুর কাছে নেই। আইভীর সঙ্গে নিয়মিত প্রচারণায় অংশ নেয়া নেতারাও বলেন, ওই অংশের (শামীম ওসমান অনুসারী) কেউই ছিলেন না।

গত ২৮ ডিসেম্বর সিটি নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থীরা সবাই নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েন। ব্যানারে, পোস্টারে ছেয়ে যায় নগরীর প্রতিটি অলি-গলি। দিনরাত মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। দুইবারের নির্বাচিত সিটি মেয়র এবং আবারও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীও ব্যস্ত প্রচারে। তবে শুরু থেকেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে চুপ ছিলেন দলীয় সাংসদ শামীম ওসমান। আলোচনা চলছিল, শামীম ওসমান দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে সমর্থন দিয়েছেন।

নির্বাচন ঘিরে প্রভাবশালী এই সাংসদের চুপ থাকা এবং অনুসারীদের কর্মকান্ড এমন ইঙ্গিত দিচ্ছিল। শামীম ওসমানের নীরবতা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগও। কেন্দ্রীয় নেতাদের একাধিক বক্তব্যেই ক্ষোভের বিষয়টি ফুটে উঠেছিল। গত ৭ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জে এক কর্মিসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কারও নাম উল্লেখ না করে এক সাংসদকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘নৌকা নিয়েই এমপি হয়েছেন। বেঁচে থাকতে আগামীবার আপনাকে নৌকা পেতে দেবো না।’ এর পরদিনই শামীম ওসমান অনুসারী নেতাদের নেতৃত্বে থাকা মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীও সাংবাদিকদের সামনে সরাসরিই বলেন, কথিত ‘গডফাদার’ শামীম ওসমান স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারকে নির্বাচনে নামিয়েছেন। শামীম ওসমান নৌকার বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরোধিতা করছেন। এর একদিন পরই ১০ জানুয়ারি জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন শামীম ওসমান। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নৌকার বাইরে যাবার কোন উপায় নেই। তিনি নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অনুসারী আওয়ামী লীগ, মহিলা লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও মাঠে নামার নির্দেশ দেন। তবে আদতে তার কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, শামীম ওসমানের ঘোষণার কোন প্রতিফলন নির্বাচনী মাঠে দেখা যায়নি। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী তিনি নিজে সংসদ সদস্য হওয়ায় সরাসরি প্রচারে নামতে পারবেন না। তবে তার অনুসারী লোকজনের কাউকেই মঙ্গলবার সারাদিনে কোথাও কোন প্রচারে দেখা যায়নি।

স্থানীয় লোকজন ও রাজনীতিকরা বলছেন, শামীম ওসমান কখনই আইভীকে সমর্থন দেননি। গত নির্বাচনেও সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েও আর মাঠে দেখা যায়নি শামীম ওসমান কিংবা তার কর্মী-সমর্থকদের। অভিযোগ রয়েছে, ওই নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন শামীম ওসমান। এবারও দলীয় চাপে হোক কিংবা রাজনৈতিক কৌশলের কারণেই হোক শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা পর্যন্তই শেষ। উল্টো নেপথ্যে থেকে শামীম ওসমান ষড়যন্ত্র করতে পারেন বলেও আশঙ্কা করছেন আইভী সমর্থকরা।

জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে এবং বিকেলে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণা চালান সেলিনা হায়াৎ আইভী। এই সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল কাদির, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক রানু খন্দকার, সদস্য সামসুজ্জামান ভাষানী, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য সুমি আক্তার প্রমুখ। বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণা চালিয়েছেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে গোলাম মতুর্জা পাপ্পা।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আনিসুর রহমান দিপু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত, রূপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রমিক লীগ নেতা হুমায়ূন কবির প্রমুখ। এ ছাড়া দুপুরে শহরে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মিছিল ও গণসংযোগ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন সংবাদকে বলেন, সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিলেও সাংসদের অনুসারী কেউ কোথাও প্রচারণায় ছিলেন না। নির্বাচন পরিচালনার সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকলেও তার সঙ্গে সাংসদ অনুসারী কেউ প্রচারণার বিষয়ে যোগাযোগ করেননি। তবে বন্দরে দুপুরে ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল করেছে বলে শুনেছেন আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, ‘শামীম ওসমানের নৌকা, অয়ন ওসমানের (সাংসদ পুত্র) নৌকা’ বলে স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা নৌকার পক্ষে বন্দরে মিছিল করেছে শুনেছি। তবে উল্লেখযোগ্য কোন নেতা সেখানে ছিলেন না। ওই মিছিলে ‘ভাইয়ের নাম বলেছে দশবার, আইভীর নাম বলেছে একবার’। এতেই সবকিছু স্পষ্ট।

এদিকে নির্বাচনের আর মাত্র চার দিন বাকি। সেলিনা হায়াৎ আইভী সমর্থকরা বলছেন, শেষ সময়ে শামীম ওসমান কিংবা তার সমর্থকরা প্রচারণায় আসলেও নির্বাচনে তেমন প্রভাব পড়বে না। তাছাড়া শামীম ওসমানের সমর্থন এই নির্বাচনে তেমন জরুরি বলেও মনে করছেন না তারা।

গত ২৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন আইভী। প্রায় প্রতিদিনই আইভীর সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সংবাদকে বলেন, শামীম ওসমান ঘোষণা দিলেও সারাদিন কেউ প্রচারণায় ছিলেন না। অনুসারী নেতাদের কেউ কেউ পার্টি অফিসে (দলীয় কার্যালয়) আসেন। চা খেয়ে চলে যান। এখনও না নামলে আর কবে নামবেন তারা, নির্বাচনের পর? এই প্রশ্নও জুড়ে দেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনী মাঠ আমরাই গরম করেছি। আমাদের অনুকূলেই সবকিছু রয়েছে। এই শেষ সময়ে আর কাউকে আমাদের প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রার্থীর বিজয় হবেই। কোন ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না।’

এই বিষয়ে কথা বলতে সাংসদ শামীম ওসমান অনুসারী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের চারজন নেতার মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি। অনুসারী জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের দুই নেতাকে কল করলে তাদের সাড়াও পাওয়া যায়নি।

এদিকে নৌকার প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘দল যেহেতু আমাকে নমিনেশন দিয়েছে সেক্ষেত্রে দল আমার সঙ্গেই আছে। দলের ভেতর থেকে কে আসলো না, সেটা আমার দেখার বিষয় না। সেটা দলই দেখবে। আমার আস্থা জনগণের প্রতি।’

back to top