রোববার (১৬ জানুয়ারি) দিন শেষে জানা যাবে, কে হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র। এবার ভোটের লড়াইয়ে সাতজন থাকলেও নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তৈমুর-আইভী ছিলেন আলোচনায়। এদিকে প্রার্থী না হয়েও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
প্রচারণার শুরুর দিকে আইভী-তৈমুরের ভোটের সমীকরণ ছিল একরকম। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির জাতীয় ও স্থানীয় রাজনীতির প্রভাবে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর চেয়ে ব্যক্তি আইভী বেশি জনপ্রিয়, এমনটাই বলছেন সাধারণ মানুষ। অনেক ক্ষেত্রে ‘নৌকা’ প্রতীক তার জন্য প্রতিবন্ধক হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তারা বলছেন, নগরজুড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী এক জনপ্রতিনিধির কর্মী-সমর্থকদের জোর-জুলুমের কারণে এই এলাকায় ‘নৌকা’ অনেকটাই অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছে; যার প্রভাব নাসিক ভোটেও পড়তে পারে।
আবার কিছু লোক বলছেন, আইভীর জন্য ‘নৌকা’ রাজনীতির চরম ও পরম প্রাপ্তি। তাদের মতে, ‘নৌকা’ প্রতীক না পেলে নারায়ণগঞ্জে আইভীর কর্মী-সমর্থক এবং অনুসারীদের অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারত।
স্থানীয় অনেকের মতে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভাজন দৃশ্যমান। শামীম ওসমান এবং আইভীর মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত দ্বন্দ্ব চলমান। যার প্রভাবে দুজনের কর্মী-সমর্থক এবং অনুসারীরাও বিভক্ত। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক নেতা নানা প্রচেষ্টায় একটা ঐক্যমতের চেষ্টা করলেও, তা ভোটের ফলাফলে খুব একটা কাজ করবে না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা তৈমুর আলম খন্দকার। যাকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির ‘ডিসিশন মেকার’ও বলা হয়। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে মেয়র প্রার্থী হয়ে হারিয়েছেন সব পদ-পদবি। দলের সমর্থন নেই, এমন অজুহাতে জেলা বিএনপির দাপুটে নেতারা তৈমুরের পাশে নেই। ‘ধানের শীষ’ না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রতীক ‘হাতি’ নিয়ে নির্বাচন করছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্যকারী তৈমুরকে ভোট দেয়া ঠিক হবে কি-না, এমন প্রশ্নে তৃণমূল বিএনপির কর্মী-সমর্থকরাও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন।
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সরেজমিন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে কথা হয় স্থানীয় অনেকের সঙ্গে। সবার মুখে শুধু তৈমুর-আইভীর আলাপ। বাকি পাঁচ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে হাতপাখা প্রতীকের প্রচারণা সাধারণ মানুষের নজরে পড়েছে। এই প্রতীকে মাঠে আছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ। বাড়ি বাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার চর লহনীয়া গ্রামে। থাকেন নগরীর নবাব ছলিমুল্লাহ রোডে। ৩৯ বছর বয়সী, উচ্চ শিক্ষিত, পেশায় ব্যবসায়ী এই প্রার্থীর নামে কোন মামলা নেই। স্থানীয় অনেকের মতে, হাতপাখার কিছু রিজার্ভ ভোট আছে। ‘চরমোনাই’ পীরের মুরিদ যারা নাসিকে আছেন তাদের অধিকাংশ ভোট হাতাপাখায় পড়বে। অন্য চার প্রার্থী খেলাফত মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন (বটগাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলামের (ঘোড়া) প্রচারণা খুবই সীমিত।
এবিএম সিরাজুল মামুন নগরীর জামতলার বাসিন্দা। ইংরেজিতে এমএ করা এই প্রার্থী একটি প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন। তার এক ছাত্র রহমান বললেন, স্যার তো চমৎকার ইংরেজি পড়াতেন। খুবই জনপ্রিয় টিচার। অনেক বছর যোগাযোগ নেই। হঠাৎ কি মনে করে মেয়র ভোটে দাঁড়ালেন, বুঝতে পারলাম না। শহরে তার কিছু পোস্টার চোখে পড়লেও ওয়ার্ড পর্যায়ে তেমন প্রচারণা নেই।
জসীম উদ্দিন একজন প্রকৌশলী। তার নামেও কোন মামলা নেই। স্থানীয়দের মতে, দলের (খেলাফত আন্দোলন) অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তিনি মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন।
এদিকে পেশায় ব্যবসায়ী মাধ্যমিক পাস রাশেদ ফেরদৌদের বাড়ি সোনারাগাঁ উপজেলায়। থাকেন নগরীর আল্লামা ইকবাল রোডে। তার নামেও কোন মামলা নেই। কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় নির্দেশে ভোটে দাঁড়িয়েছেন।
নগরীর উকিলপাড়ার বাসিন্দা স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন অনেকটা শখের বশে। এমন তথ্য জানালেন চাষাড়া শহীদ মিনারে আড্ডারত স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষার্থী। স্বতন্ত্র এই প্রার্থী সম্পর্কে সজীব নামের একজন বললেন, মেয়র প্রার্থী হয়ে পোস্টার ছাপিয়ে নগরীতে একটা পরিচয় পেয়েছেন। এই যে সাংবাদিকরা তার তথ্য জানতে চাচ্ছেন। টিভিতে দেখাচ্ছে। বলতে পারেন ‘ফেইস ভ্যালু’ বাড়াতেই তার প্রার্থী হওয়া।
মেয়র কে হবেন? এমন প্রশ্নের জবাতে তিনি বলেন, ‘আইভী আওয়ামী লীগের একটি অংশের ভোট পাবেন না, এটা নিশ্চিত। তবে সাধারণ মানুষের একটা বিরাট অংশ তার পক্ষে। আমার মনে হয়, তৈমুর আলম স্থানীয় বিএনপির প্রথম সারির নেতাদের ভোট না পেলেও তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভোট পাবেন। বড় কথা হলো, অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হতে হবে। এরপর রেজাল্ট কি হয়... যেহেতু সব ভোট ইভিএমে, আশা করি বেশি সময় অপেক্ষায় থাকতে হবে না।’
শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২
রোববার (১৬ জানুয়ারি) দিন শেষে জানা যাবে, কে হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র। এবার ভোটের লড়াইয়ে সাতজন থাকলেও নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তৈমুর-আইভী ছিলেন আলোচনায়। এদিকে প্রার্থী না হয়েও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
প্রচারণার শুরুর দিকে আইভী-তৈমুরের ভোটের সমীকরণ ছিল একরকম। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির জাতীয় ও স্থানীয় রাজনীতির প্রভাবে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর চেয়ে ব্যক্তি আইভী বেশি জনপ্রিয়, এমনটাই বলছেন সাধারণ মানুষ। অনেক ক্ষেত্রে ‘নৌকা’ প্রতীক তার জন্য প্রতিবন্ধক হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তারা বলছেন, নগরজুড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী এক জনপ্রতিনিধির কর্মী-সমর্থকদের জোর-জুলুমের কারণে এই এলাকায় ‘নৌকা’ অনেকটাই অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছে; যার প্রভাব নাসিক ভোটেও পড়তে পারে।
আবার কিছু লোক বলছেন, আইভীর জন্য ‘নৌকা’ রাজনীতির চরম ও পরম প্রাপ্তি। তাদের মতে, ‘নৌকা’ প্রতীক না পেলে নারায়ণগঞ্জে আইভীর কর্মী-সমর্থক এবং অনুসারীদের অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারত।
স্থানীয় অনেকের মতে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভাজন দৃশ্যমান। শামীম ওসমান এবং আইভীর মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত দ্বন্দ্ব চলমান। যার প্রভাবে দুজনের কর্মী-সমর্থক এবং অনুসারীরাও বিভক্ত। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক নেতা নানা প্রচেষ্টায় একটা ঐক্যমতের চেষ্টা করলেও, তা ভোটের ফলাফলে খুব একটা কাজ করবে না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা তৈমুর আলম খন্দকার। যাকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির ‘ডিসিশন মেকার’ও বলা হয়। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে মেয়র প্রার্থী হয়ে হারিয়েছেন সব পদ-পদবি। দলের সমর্থন নেই, এমন অজুহাতে জেলা বিএনপির দাপুটে নেতারা তৈমুরের পাশে নেই। ‘ধানের শীষ’ না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রতীক ‘হাতি’ নিয়ে নির্বাচন করছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্যকারী তৈমুরকে ভোট দেয়া ঠিক হবে কি-না, এমন প্রশ্নে তৃণমূল বিএনপির কর্মী-সমর্থকরাও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন।
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সরেজমিন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে কথা হয় স্থানীয় অনেকের সঙ্গে। সবার মুখে শুধু তৈমুর-আইভীর আলাপ। বাকি পাঁচ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে হাতপাখা প্রতীকের প্রচারণা সাধারণ মানুষের নজরে পড়েছে। এই প্রতীকে মাঠে আছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ। বাড়ি বাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার চর লহনীয়া গ্রামে। থাকেন নগরীর নবাব ছলিমুল্লাহ রোডে। ৩৯ বছর বয়সী, উচ্চ শিক্ষিত, পেশায় ব্যবসায়ী এই প্রার্থীর নামে কোন মামলা নেই। স্থানীয় অনেকের মতে, হাতপাখার কিছু রিজার্ভ ভোট আছে। ‘চরমোনাই’ পীরের মুরিদ যারা নাসিকে আছেন তাদের অধিকাংশ ভোট হাতাপাখায় পড়বে। অন্য চার প্রার্থী খেলাফত মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন (বটগাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলামের (ঘোড়া) প্রচারণা খুবই সীমিত।
এবিএম সিরাজুল মামুন নগরীর জামতলার বাসিন্দা। ইংরেজিতে এমএ করা এই প্রার্থী একটি প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন। তার এক ছাত্র রহমান বললেন, স্যার তো চমৎকার ইংরেজি পড়াতেন। খুবই জনপ্রিয় টিচার। অনেক বছর যোগাযোগ নেই। হঠাৎ কি মনে করে মেয়র ভোটে দাঁড়ালেন, বুঝতে পারলাম না। শহরে তার কিছু পোস্টার চোখে পড়লেও ওয়ার্ড পর্যায়ে তেমন প্রচারণা নেই।
জসীম উদ্দিন একজন প্রকৌশলী। তার নামেও কোন মামলা নেই। স্থানীয়দের মতে, দলের (খেলাফত আন্দোলন) অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তিনি মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন।
এদিকে পেশায় ব্যবসায়ী মাধ্যমিক পাস রাশেদ ফেরদৌদের বাড়ি সোনারাগাঁ উপজেলায়। থাকেন নগরীর আল্লামা ইকবাল রোডে। তার নামেও কোন মামলা নেই। কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় নির্দেশে ভোটে দাঁড়িয়েছেন।
নগরীর উকিলপাড়ার বাসিন্দা স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন অনেকটা শখের বশে। এমন তথ্য জানালেন চাষাড়া শহীদ মিনারে আড্ডারত স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষার্থী। স্বতন্ত্র এই প্রার্থী সম্পর্কে সজীব নামের একজন বললেন, মেয়র প্রার্থী হয়ে পোস্টার ছাপিয়ে নগরীতে একটা পরিচয় পেয়েছেন। এই যে সাংবাদিকরা তার তথ্য জানতে চাচ্ছেন। টিভিতে দেখাচ্ছে। বলতে পারেন ‘ফেইস ভ্যালু’ বাড়াতেই তার প্রার্থী হওয়া।
মেয়র কে হবেন? এমন প্রশ্নের জবাতে তিনি বলেন, ‘আইভী আওয়ামী লীগের একটি অংশের ভোট পাবেন না, এটা নিশ্চিত। তবে সাধারণ মানুষের একটা বিরাট অংশ তার পক্ষে। আমার মনে হয়, তৈমুর আলম স্থানীয় বিএনপির প্রথম সারির নেতাদের ভোট না পেলেও তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভোট পাবেন। বড় কথা হলো, অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হতে হবে। এরপর রেজাল্ট কি হয়... যেহেতু সব ভোট ইভিএমে, আশা করি বেশি সময় অপেক্ষায় থাকতে হবে না।’