alt

ইভিএম জনপ্রিয় ও সহজ করায় জোর আওয়ামী লীগের

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০২২

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে শতভাগ ইভিএম চায় আওয়ামী লীগ। তাই ইভিএম পদ্ধতিকে আরও জনপ্রিয় এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এখন থেকেই প্রচারণা শুরু করাসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) ইসির সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ পরামর্শ দেন। ইভিএম যাচাইয়ে ইসির আমন্ত্রণে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ২৯ দল অংশ নিলেও ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ ১০টি দল সাড়া দেয়নি।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোট শরিকরাও ইভিএমের পক্ষে রয়েছে। তবে বিএনপি ও তাদের জোট শরিক অনেকেই এর বিপক্ষে। এদিকে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘ইভিএম চায় না’ বলে ইসির বৈঠকে জানিয়েছে।

এদিকে প্রথম দুই দিনের বৈঠকে অধিকাংশ কথা-বার্তা ইভিএমের বিপক্ষে হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সভার শুরুতে সিইসি বলেন, ‘আমরা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব। কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন করব, সেটা আমাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে ইভিএম নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সিইসির স্বাগত বক্তব্যের পর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়া শুরু হলে প্রথমেই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল বক্তব্য রাখে।

ইভিএম নিয়ে দলীয় অবস্থান তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ইভিএমের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করার জন্য আমরা সিইসির কাছে আহ্বান করছি। ...আমরা মনে করি, দেশে ইভিএম পদ্ধতি অধিকতর জনপ্রিয় এবং সহজে ব্যবহার করার লক্ষ্যে ইসি এখন থেকেই প্রচার-প্রচারণায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’

‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। সিদ্ধান্ত আমাদের, দিস ইজ লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার- আমরা ইভিএম পদ্ধতির পক্ষে, রাখঢাক করে কোন লাভ নেই। ...এখানে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ পদ্ধতিটা বৃদ্ধি করার কথা বলব।’

ইভিএমের পক্ষে নিজেদের অবস্থানের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে, ইসির কার্যক্রমে ইভিএমসহ প্রযুক্তির বৃদ্ধির কারণে সব কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বেড়েছে। ইভিএম ব্যবহারের ফলে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল এবং নির্বাচনে জালিয়াতি, ভোট চুরি বন্ধ হবে। বিএনপিকে ভোটে আনার দায়িত্ব ‘সরকারেরও নয়, ইসিরও নয়’ বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। নির্বাচনে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা ইসিকে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নয়, সরকারের সাহায্য নেয়া হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের কাছে যে সহায়তা আমাদের প্রাপ্য সেটা আমাদের দিতে হবে। যদি সেটা না দেন বা দেয়া না হয় তাহলে আপনারা যদি আশাও করেন সুন্দর ইলেকশন হবে, সুন্দর ইলেকশন হয়তো হবে না। আমরা সরকারের কাছ থেকে হেল্প নেব। আওয়ামী লীগ থেকে হেল্প নেব না, প্রশ্নই আসে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে ঐক্য চাচ্ছি। নির্বাচনের মাঠে সবাই থাকবেন। বিভিন্ন পার্টির উপস্থিতি কিন্তু এক ধরনের ভারসাম্য সৃষ্টি করে নির্বাচনের মাঠে। আমরা ৫ জন কমিশনার কখনই পর্যাপ্ত নয়।

সব দল চাইলে চারদিনে ভোটের ইঙ্গিত দিয়ে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনে ফোর্স নিয়োগে ব্যাপার আছে, আমরা এক দিনে ইলেকশন করব? বা আপনাদের সবাই যদি চায় ৪ দিন নির্বাচন করার। কারণ আমরা একটা সংকট দেখি কেন্দ্রে কিন্তু পর্যাপ্ত ফোর্স দিতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘শুধু আমাদের ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না, নির্বাচন কমিশন একাকী পরিপূর্ণ সফলতা অর্জন করতে পারবে না। যদি না অংশীজনরা তাদের দিক থেকে সহায়তার হাত সম্প্রসারণ না করেন।’

মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন ভবনে পৌঁছায়। এ সময় ইসির কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলকে শুভেচ্ছা জানান। কমিশনে পৌঁছে ওবায়দুল কাদের সরাসরি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের দপ্তরে যান। এরপর ২টা ৫৫ মিনিটে সিইসি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলকে নিয়ে সম্মেলন কক্ষে প্রবেশ করেন।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কারিগরি দিক যাচাই করতে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে যন্ত্রটির ব্যবহারের বিষয়ে মতামত নিতে সম্প্রতি নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে তিন দফায় (১৯, ২১ ও ২৮ জুন) আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কমিশন; এর মধ্যে ২৯টি দল মতবিনিময়ে অংশ নেয়।

প্রথম বৈঠকে গণফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ অংশ নেয়নি। দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিল বিএনপি, জেএসডি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)।

মঙ্গলবার শেষ দিন অনুপস্থিত ছিল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সভায় অংশ নেয়নি। এদিকে প্রথম বৈঠকে আসতে না পারলেও গণফোরামের প্রতিনিধিরা মঙ্গলবার শেষ দিনের বৈঠকে অংশ নেন।

সিপিবি ও বাসদ ইসির বৈঠকে যাবে না বলে আগেই জানিয়েছিল। সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, গণমাধ্যমকে ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ইভিএম, নির্বাচন কমিশনার, ভোট ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের কিছু প্রশ্ন, মতামত রয়েছে। আমরা এ সভায় যাচ্ছি না। তবে দলীয় অবস্থানটা তুলে ধরে কমিশনে পরবর্তীতে চিঠি দেব।’

সভায় যোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে সিইসিকে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানান বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা মনে করি, বিগত ২০১১ ও ২০১৭ সালে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের দলের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, তা আজও প্রাসঙ্গিক। ফলে কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় করতে গিয়ে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার কোন অর্থ হয় না। এ বিধায় আমরা আগামী ২৮ জুনের মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করছি না।’

মঙ্গলবার ইসির বৈঠকে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলে ছিলেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, লে. কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান (অব), উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ ও দপ্তর সম্পাদক ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

বৈঠকে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এর আগে দেশের সেরা কয়েকজন প্রযুক্তিবিদ ইভিএম যাচাই করেন। তাদের অধিকাংশই ইভিএম নির্ভরযোগ্য বলে মতামত দেন। উল্লেখ্য, ইসির কাছে বর্তমানে এক লাখ ৫৪ হাজার ইভিএম রয়েছে। এসব মেশিন দিয়ে সর্বোচ্চ ১০০ আসনে ভোট করা যাবে। ৩০০ আসনে ভোট করতে আরও তিন লাখের মতো ইভিএম প্রয়োজন।

ছবি

সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ নাহিদ ইসলাম, ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান এনসিপির

ছবি

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া

ছবি

জুলাই সনদ দিয়ে রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের শুরু: ফখরুল

ছবি

জুলাই সনদ: বাস্তবায়নে দেরি হলে রাজনৈতিক সংকটের ঝুঁকি দেখছে জামায়াত

ছবি

কিছু দল ‘ঐকমত্যের’ নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি ‘কাগজে’ সই করছে: নাহিদ ইসলাম

ছবি

জুলাই সনদে সই না করার সিদ্ধান্ত এনসিপির

ছবি

আমলাতন্ত্র চলবে না, প্রয়োজনে ডিসি অফিস ঘেরাও করবেন: মির্জা ফখরুল

জুলাই সনদ সইয়ে অনিশ্চয়তা: সিপিবি, এনসিপি, গণফোরামের আপত্তি

ছবি

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনুস

ছবি

সংশোধিত খসড়া না পেলে জুলাই সনদে সই করবে না বাম ধারার চার দল

ছবি

জাতির কাছে সব কিছু স্পষ্ট করে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আহ্বান এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেনের

ছবি

‘প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভারসাম্য নষ্ট হলে রাষ্ট্র ঝুঁকিতে পড়বে’ — প্রধান উপদেষ্টাকে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের সতর্কবার্তা

ছবি

সৈয়দপুরে সিপিবির পথসভা অনুষ্ঠিত

ছবি

বিএনপির ৩১ দফা বাস্তয়নে তারেক মুন্সীর গণসংযোগ

ছবি

তফসিলের আগেই গণভোটের দাবি ইসলামী আন্দোলনের

ছবি

জামায়াতের নভেম্বরে গণভোট দাবি ‘অন্য কোনো মাস্টারপ্ল্যান কি না’: প্রশ্ন রিজভীর

ছবি

আগামী নির্বাচনেই দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে: মির্জা ফখরুল ইসলাম

ছবি

শাপলায় অনড় এনসিপি, ‘নিজস্ব পদ্ধতির’ কথা জানালো ইসি

‘ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’ উপদেষ্টাদের নাম ও কণ্ঠ রেকর্ড থাকার দাবি, জনসমক্ষে প্রকাশের হুঁশিয়ারি জামায়াত নেতার

ছবি

জাতীয় লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অস্তিত্ব যাচাইয়ে পুনঃতদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

১৯ অক্টোবরের মধ্যে প্রতীক বাছাইয়ের নির্দেশ এনসিপিকে

ছবি

রাজনীতিতে আসছি সেবা করতে, ব্যবসা করতে না: মাসুদুজ্জামান

ছবি

পিআরের বিষয়টি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত: ফখরুল

ছবি

আওয়ামী লীগ নেতা আহসানের ‘মুক্তিতে বাধা নেই’

ছবি

আমরা উচ্চ কক্ষে পিআরের পক্ষে, নিম্ন কক্ষে নই: সারজিস

ছবি

আগামী মাসেই গণভোটের দাবি জামায়াতে ইসলামী, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তিন ঘণ্টার বৈঠক

ছবি

নির্বাচন: ১০০ আসনে এবি পার্টির প্রার্থী চূড়ান্ত

ছবি

ক্ষোভ ঝাড়তে গিয়ে যে উপমা ব্যবহার করেছি, সেটা করা উচিত হয়নি: ফেসবুক পোস্টে সারজিস

ছবি

পিআরের দাবিতে আন্দোলন: নির্বাচন ‘বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্র’ দেখছেন ফখরুল

পঞ্চগড়ে এনসিপির কর্মসূচিতে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট, নেসকোর কর্মকর্তাদের কলিজা ছিঁড়ে ফেলার হুমকি সারজিসের

ছবি

ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই, তবে সমতার ভিত্তিতে: ফখরুল

ছবি

জামালপুরে এলডিবি মনোনীত সদর আসনে এমপি প্রার্থী মুহাম্মদ মাসুদ হোসাইনের গণসংযোগ শুরু

ছবি

বিচার না হলে বাহিনী জনগণের প্রতিষ্ঠান হবে না: এনসিপি নেতা আখতার হোসেন

ছবি

শাপলা প্রতীক নিয়ে বিতর্কের মধ্যে রংপুর-৬ আসনে এনসিপির হয়ে প্রচারণায় তাকিয়া জাহান চৌধুরী

ছবি

তারেক রহমানের নেতৃত্বে বহুমূখী কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে: কর্নেল আজাদ

ছবি

আদর্শ সমাজ গঠনে কাজ করছে জামায়াত

tab

ইভিএম জনপ্রিয় ও সহজ করায় জোর আওয়ামী লীগের

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০২২

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে শতভাগ ইভিএম চায় আওয়ামী লীগ। তাই ইভিএম পদ্ধতিকে আরও জনপ্রিয় এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এখন থেকেই প্রচারণা শুরু করাসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) ইসির সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ পরামর্শ দেন। ইভিএম যাচাইয়ে ইসির আমন্ত্রণে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ২৯ দল অংশ নিলেও ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ ১০টি দল সাড়া দেয়নি।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোট শরিকরাও ইভিএমের পক্ষে রয়েছে। তবে বিএনপি ও তাদের জোট শরিক অনেকেই এর বিপক্ষে। এদিকে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘ইভিএম চায় না’ বলে ইসির বৈঠকে জানিয়েছে।

এদিকে প্রথম দুই দিনের বৈঠকে অধিকাংশ কথা-বার্তা ইভিএমের বিপক্ষে হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সভার শুরুতে সিইসি বলেন, ‘আমরা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব। কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন করব, সেটা আমাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে ইভিএম নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সিইসির স্বাগত বক্তব্যের পর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়া শুরু হলে প্রথমেই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল বক্তব্য রাখে।

ইভিএম নিয়ে দলীয় অবস্থান তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ইভিএমের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করার জন্য আমরা সিইসির কাছে আহ্বান করছি। ...আমরা মনে করি, দেশে ইভিএম পদ্ধতি অধিকতর জনপ্রিয় এবং সহজে ব্যবহার করার লক্ষ্যে ইসি এখন থেকেই প্রচার-প্রচারণায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’

‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। সিদ্ধান্ত আমাদের, দিস ইজ লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার- আমরা ইভিএম পদ্ধতির পক্ষে, রাখঢাক করে কোন লাভ নেই। ...এখানে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ পদ্ধতিটা বৃদ্ধি করার কথা বলব।’

ইভিএমের পক্ষে নিজেদের অবস্থানের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে, ইসির কার্যক্রমে ইভিএমসহ প্রযুক্তির বৃদ্ধির কারণে সব কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বেড়েছে। ইভিএম ব্যবহারের ফলে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল এবং নির্বাচনে জালিয়াতি, ভোট চুরি বন্ধ হবে। বিএনপিকে ভোটে আনার দায়িত্ব ‘সরকারেরও নয়, ইসিরও নয়’ বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। নির্বাচনে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা ইসিকে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নয়, সরকারের সাহায্য নেয়া হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের কাছে যে সহায়তা আমাদের প্রাপ্য সেটা আমাদের দিতে হবে। যদি সেটা না দেন বা দেয়া না হয় তাহলে আপনারা যদি আশাও করেন সুন্দর ইলেকশন হবে, সুন্দর ইলেকশন হয়তো হবে না। আমরা সরকারের কাছ থেকে হেল্প নেব। আওয়ামী লীগ থেকে হেল্প নেব না, প্রশ্নই আসে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে ঐক্য চাচ্ছি। নির্বাচনের মাঠে সবাই থাকবেন। বিভিন্ন পার্টির উপস্থিতি কিন্তু এক ধরনের ভারসাম্য সৃষ্টি করে নির্বাচনের মাঠে। আমরা ৫ জন কমিশনার কখনই পর্যাপ্ত নয়।

সব দল চাইলে চারদিনে ভোটের ইঙ্গিত দিয়ে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনে ফোর্স নিয়োগে ব্যাপার আছে, আমরা এক দিনে ইলেকশন করব? বা আপনাদের সবাই যদি চায় ৪ দিন নির্বাচন করার। কারণ আমরা একটা সংকট দেখি কেন্দ্রে কিন্তু পর্যাপ্ত ফোর্স দিতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘শুধু আমাদের ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না, নির্বাচন কমিশন একাকী পরিপূর্ণ সফলতা অর্জন করতে পারবে না। যদি না অংশীজনরা তাদের দিক থেকে সহায়তার হাত সম্প্রসারণ না করেন।’

মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন ভবনে পৌঁছায়। এ সময় ইসির কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলকে শুভেচ্ছা জানান। কমিশনে পৌঁছে ওবায়দুল কাদের সরাসরি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের দপ্তরে যান। এরপর ২টা ৫৫ মিনিটে সিইসি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলকে নিয়ে সম্মেলন কক্ষে প্রবেশ করেন।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কারিগরি দিক যাচাই করতে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে যন্ত্রটির ব্যবহারের বিষয়ে মতামত নিতে সম্প্রতি নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে তিন দফায় (১৯, ২১ ও ২৮ জুন) আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কমিশন; এর মধ্যে ২৯টি দল মতবিনিময়ে অংশ নেয়।

প্রথম বৈঠকে গণফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ অংশ নেয়নি। দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিল বিএনপি, জেএসডি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)।

মঙ্গলবার শেষ দিন অনুপস্থিত ছিল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সভায় অংশ নেয়নি। এদিকে প্রথম বৈঠকে আসতে না পারলেও গণফোরামের প্রতিনিধিরা মঙ্গলবার শেষ দিনের বৈঠকে অংশ নেন।

সিপিবি ও বাসদ ইসির বৈঠকে যাবে না বলে আগেই জানিয়েছিল। সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, গণমাধ্যমকে ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ইভিএম, নির্বাচন কমিশনার, ভোট ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের কিছু প্রশ্ন, মতামত রয়েছে। আমরা এ সভায় যাচ্ছি না। তবে দলীয় অবস্থানটা তুলে ধরে কমিশনে পরবর্তীতে চিঠি দেব।’

সভায় যোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে সিইসিকে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানান বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা মনে করি, বিগত ২০১১ ও ২০১৭ সালে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের দলের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, তা আজও প্রাসঙ্গিক। ফলে কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় করতে গিয়ে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার কোন অর্থ হয় না। এ বিধায় আমরা আগামী ২৮ জুনের মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করছি না।’

মঙ্গলবার ইসির বৈঠকে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলে ছিলেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, লে. কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান (অব), উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ ও দপ্তর সম্পাদক ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

বৈঠকে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এর আগে দেশের সেরা কয়েকজন প্রযুক্তিবিদ ইভিএম যাচাই করেন। তাদের অধিকাংশই ইভিএম নির্ভরযোগ্য বলে মতামত দেন। উল্লেখ্য, ইসির কাছে বর্তমানে এক লাখ ৫৪ হাজার ইভিএম রয়েছে। এসব মেশিন দিয়ে সর্বোচ্চ ১০০ আসনে ভোট করা যাবে। ৩০০ আসনে ভোট করতে আরও তিন লাখের মতো ইভিএম প্রয়োজন।

back to top