alt

এবার যে হাত দিয়ে মারতে আসবে, সেই হাত ভেঙে দিতে হবে : শেখ হাসিনা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি আন্দোলন বা রাজনীতির নামে সহিংসতা করলে তা কঠোর হাতে প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে আন্দোলনের নামে বিএনপির আগ্নিসন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এখনও পোড়া মানুষগুলোর অবস্থা দেখলে চোখে পানি আসে। কী অবস্থা করেছে একেকটা পরিবারের। মা দেখে চোখের সামনে মেয়ে আর স্বামী পুড়ে যাচ্ছে। বাপ দেখে চোখের সামনে ছেলে পুড়ে যাচ্ছে। ওদের কিসের ক্ষমা ওদের আর ক্ষমা নাই।’

বিভিন্ন সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কথা একদম স্পষ্ট। আমরা সেই পঁচাত্তরের থেকে একুশ বছর শুধু মার খেয়েছি। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত শুধু মরাই খেয়েছি। এবার যে হাত দিয়ে মারতে আসবে, সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে মানুষকে আগুন দেবে, সেই হাত ওই আগুনেই পোড়াতে হবে। পোড়ার যন্ত্রণাটা তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এরা (বিএনপি) কীভাবে অত্যাচার করেছে, সেটা তুলে ধরতে হবে। বিএনপির অপকর্ম তুলে ধরতে হবে। আমাদের যে নেতাকর্মীরা বিএনপির হাতে ছেঁচা-মার খেয়েছে তাদের বসে থাকলে তো চলবে না। মানুষকে জানাতে হবে ওরা কী করতে পারে, কী করে। বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না, এটাও ঠিক।’

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর বিএনপি কার্যালয় থেকে চাল, ডালসহ রান্নার উপকরণ ও রান্না করা খিচুড়ি উদ্ধারের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে সরকার হটানো যাবে না।’

তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এখন থেকে পাড়া-মহল্লায় ‘সতর্ক অবস্থান’ নেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অগ্নি সন্ত্রাসীদের, স্বাধীনতাবিরোধীদের আর ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না, এটা স্পষ্ট কথা। ওরা আমাদের উৎখাত করবে? ওরা পকেট থেকে এসেছে আবার পকেটেই থাকবে। গণতন্ত্রের কথা ওদের মুখে মানায় না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবার যেন আর কোন বিআরটিসির বাস পোড়াতে না পারে। যেটা পোড়াতে যাবে, এখন তো সবার হাতে ক্যামেরা, ভিডিও ফুটেজ দেখে যেই হাতে আগুন দেবে, সেই হাত সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে দিতে হবে। কোনদিন বলিনি, এখন বলব। আর মার খাওয়ার সময় নাই।’

নেতাকর্মীদের ‘মাঠে থাকার’ নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না, এটা আমার স্পষ্ট কথা। প্রত্যেকটা এলাকায় নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে হবে। আর আমাদের যতগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের বলতে হবে তারা কী শান্তিতে থাকতে চায়? নাকি আবার অশান্তিকে জায়গা দিতে চায়। তাদের সিদ্ধান্ত দিতে হবে। জ্বালাও-পোড়াও হত্যা-খুন-মানি লন্ডারিং এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের শান্তিকে বিনষ্ট করতে দেয়া হবে না।’

দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই প্রস্তুত থাকবেন, বাংলাদেশের কোন মানুষের একটা ক্ষতিও যেন করতে না পারে। দোকানপাট সবাইকে বলে দেবেন তারাও যেন প্রতিবাদ করে। এর আগে আনেক যন্ত্রণা দিয়েছে তারা। আমরা অনেক সহ্য করেছি। এইভাবে আমার কৃষক-শ্রমিক আমাদের নেতাকর্মী কারও গায়ে হাত দিলে আর ক্ষমা নাই।’

আদালত কর্তৃক দন্ডিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনে অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুচলেকা দিয়ে গেছিল সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আমি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করব, তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ধরে এনে সাজা বাস্তবায়ন করব। আমেরিকা, তারা খুনি পালতেছে একটা, আবার কানাডা পালে আরেকটা, পাকিস্তানে আছে দুইটা। সবার কাছে বলব, এই খুনিদের ফেরত পাঠাতে হবে।’

‘আর ব্রিটিশ সরকারকে বলব তারেক জিয়াকে দেশে ফেরত পাঠাতে। কারণ সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারা (বহির্বিশ্ব) মানবতার কথা বলে, দুর্নীতির কথা বলে, আবার সেই খুনিকে, দুর্নীতিবাজকে তাদের দেশে আশ্রয় দেয়। কাজেই তাকে বাংলাদেশের কাছে হ্যান্ডওভার করতে হবে। এই দেশে নিয়ে এসে সাজা আমি বাস্তবায়ন করব।’

বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে কথা বলা দেশগুলোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব দেশ আমাদের দেশের গণতন্ত্রের কথা বলে, তাদের দেশের অবস্থা তো আমরা জানি। প্রতিদিন মানুষ খুন হয়, ভোটের সময় ভোট চুরি হয়েছে বলে তাদের ক্যাপিটলেও আক্রমণ হয়, পাঁচ-ছয়জন গুলি করে মারে, আর তাদের কাছ থেকে আমার গণতন্ত্রের ছবক নিতে হবে! আমরা বাংলাদেশ, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।’

বিএনপি ২০০১ সালে গ্যাস দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

বিএনপির ওই ক্ষমতাকালীন আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের ওপর বিএনপির অত্যাচারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি তো মনে করেছিল তারা মারা গেছে।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপির যে অভিযোগ বিএনপি গত কয়েক বছর ধরে করে আসছে, সেটিরও জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৮ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি (২০০১-এ) ভোট চুরি করেছিল বলেই তাদের জনগণ ২০০৮ সালে ভোট দেয়নি। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখেছে। আওয়ামী লীগ কখনো ভোট চুরি করে না, জনগণের ভোট সংরক্ষিত করে। তারা (বিএনপি) আওয়ামী লীগকে ভোট চুরির অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেনি।’

তারেক রহমানের দেশে না ফেরার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হলো, আমি তখনই দেশে চলে আসছি। তারেক জিয়ার বাপও (জিয়াউর রহমান) আমাকে ঠেকাতে পারেনি। আবার যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তখনও পারেনি। এতই নেতৃত্ব দেয়ার শখ, দেশের বাইরে পালিয়ে থেকে কেন? ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, সেই সুযোগে ডিজিটালি কথা বলে।’

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। ২০০১ সালের নির্বাচনের পরপরই একেকজনে বাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে কলাগাছের বাগান করেছে। মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে। ছয় বছরের মেয়ে থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সেই পূর্ণিমা ফাহিমা শুরু করে সারাদেশের কত নাম বলব সবার চিকিৎসা করতে হয়েছে। অনেকে লজ্জায় নাম প্রকাশ করেনি।’

‘২০০১ সালে যে অত্যাচারটা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর করেছে আমরা ২০০৯-এ ক্ষমতায় আসার পর গুনে গুনে সেই অত্যাচারের জবাব দিতে পারতাম, সেই ক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখে। কই আমরা তো করি নাই। আমরা তো তাদের ওপর এইভাবে অত্যাচার নির্যাতন করতে যাইনি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের সংগঠন। আর বিএনপির জন্ম কোথায়? জিয়াউর রহমানের উর্দি পরা পকেটে। পকেট থেকে কাগজ বের হয়েছে এমন সংগঠন। আওয়ামী লীগ কারও পকেটের সংগঠন না। এটা তাদের মাথায় রাখা উচিত। পকেটের সংগঠন, সেই কারণে তাদের মাটিতে কোন শেকড় নাই।’

‘তারা (বিএনপি) হলো স্বর্ণলতার মতো, যে গাছে উঠে সে গাছ খেয়ে শেষ করে দেয়, এটা হলো বিএনপি। যে গাছের উপরে স্বর্ণলতা উঠে সে গাছে আর কোন ফল ধরে না, বিএনপি দেশের ওপর উঠেছিল সেই দেশটাকে খেয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ আসার পরে দেশের উন্নতি হয়েছে। কারণ উন্নতি করার জন্য একটা মানসিকতা থাকা দরকার। আওয়ামী লীগ মানুষকে দিতে এসেছে।’

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবাই ‘আরাম-আয়েশে’ ব্যবসা করছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব মিডিয়া এখন ধর্ণা দিচ্ছে, এত টেলিভিশন, এ তো আমারই দেয়া। আমি যদি উন্মুক্ত না করে দিতাম, এত মানুষের চাকরিও হতো না, এত মানুষ ব্যবসাও করতে পারত না। আর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সে বিএনপির ব্যবসায়ীই হোক বা আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী হোক, সবাই কিন্তু শান্তিতে ব্যবসা করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হাওয়া ভবনও আমরা খুলি নাই, খাওয়া ভবনও আমরা খুলি নাই বরং ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছি। আবারও হাওয়া ভবন আসলে, এখন আসলে আরেকটা নাম দিবে। আবারও চুষে চুষে খাবে। শান্তিতে ব্যবসা করতে হবে না।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপির আমলে তো এত আরামে ব্যবসা করতে পারেনি। এই মিডিয়া একটা উল্টা-পাল্টা লিখলেই তো মারত। তারপরেও এত আহ্লাদ কিসের? এত তেল মারা কিসের? আমি তো জানি না। কত তেল আছে আমি দেখব।’

সংবাদকর্মীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপিকে যারা তেল মারছে, আমরা তাদেরও হিসাব করব। আওয়ামী লীগের সময় আরাম-আয়েশ করে ব্যবসা করে খাচ্ছে তো, কারও ব্যবসায় আমরা বাধা দিইনি তো। সবাইকে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করতে দিয়েছি।’

ছবি

৫ আগস্টের আগের স্বপ্ন ১৫ মাসেও পূরণ হয়নি: নুরুল হক

ছবি

যতই চালাকি হোক, আগে গণভোট, তারপর সংসদ নির্বাচন: তাহের

নতুন নামে ‘ফ্যাসিবাদ’ কায়েমের পাঁয়তারা চলছে: মুশতাক

ছবি

বিএনপির মনোনয়ন পেলেন আ’লীগের ‘ডোনার খ্যাত’ আনিসুল হক!

ছবি

রংপুরের দুই আসনে এনসিপি ও জামায়াতের মর্যাদার লড়াই

ছবি

জুলাই সনদে নোট অব ডিসেন্ট বলে কিছু থাকবে না: নাহিদ ইসলাম

ছবি

বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে জাতিসংঘে মোমেনের চিঠি

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ ও গণভোট ইস্যুতে ফখরুলের কঠোর হুঁশিয়ারি

ছবি

শুক্রবার ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস’

ছবি

জাতীয়তাবাদী চেতনায় ঐক্যের আহ্বান বিএনপি নেতাদের

ছবি

আঙুল বাঁকা করার হুমকি জামায়াতের তাহেরের, কারণ ‘ঘি তাদের লাগবেই’

ছবি

গণতন্ত্রের পথ সরকারকেই সুগম করতে হবে, যশোরে মির্জা ফখরুল

ছবি

সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট হতে হবে: মির্জা ফখরুল

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট দাবিতে প্রয়োজনে ‘আঙ্গুল বাঁকা’ করার হুঁশিয়ারি  : জামায়াত নেতৃত্ব

ছবি

৯ রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা , জাতীয় সনদ ও গণভোটে দূরত্ব ঘোচানোর উদ্যোগ

ছবি

৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতিতে এনসিপি, জোট না হলে সরাসরি লড়াই

ছবি

পদ ছেড়ে ‘ভোট করবেন’ অ্যাটর্নি জেনারেল, বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ‘আশাবাদী’

ছবি

বিএনপিতে যোগ দিলেন শহীদ মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ

মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ

ছবি

জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা ও পৃথক দিনে গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী

নীলফামারী ১ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ছবি

বরিশাল বিভাগে একমাত্র নারী প্রার্থী ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো

ছবি

শেষ নির্বাচন ঘোষণা দিয়ে আবেগঘন বার্তা দিলেন বিএনপি মহাসচিব

ছবি

প্রার্থী ঘোষণা: সিলেট বিএনপিতে অস্থিরতা

ছবি

চাঁদপুরে জাতীয় পার্টি ও জাতীয় জাসদ থেকে শতাধিক নেতাকর্মীর এনসিপিতে যোগদান

ছবি

বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর কোথাও আনন্দ, কোথাও বিক্ষোভ

ছবি

জামায়াত ‘যথাসময়ে’ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা দেবে: শফিকুর রহমান

ছবি

জাতিসংঘকে নির্বাচনি সহায়তা স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ

ছবি

মাদারীপুর-১ আসনে কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করেছে বিএনপি

ছবি

দিনাজপুর-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন

ছবি

বরগুনার দু’টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন নজরুল ও মনি

ছবি

কুড়িগ্রামে ৪টি আসনের বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস

ছবি

কুড়িগ্রামে ৪টি আসনের বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস

ছবি

নাসিরনগর বিএনপি প্রার্থী এমএ হান্নান

ছবি

সিরাজগঞ্জে বিএনপি ও জামায়াতের দলীয় মনোনায়ন পেয়ে প্রচারণায় নেমেছে

ছবি

কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী আপন দুই ভাইকে নিয়ে আলোচনার ঝড়

tab

এবার যে হাত দিয়ে মারতে আসবে, সেই হাত ভেঙে দিতে হবে : শেখ হাসিনা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি আন্দোলন বা রাজনীতির নামে সহিংসতা করলে তা কঠোর হাতে প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে আন্দোলনের নামে বিএনপির আগ্নিসন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এখনও পোড়া মানুষগুলোর অবস্থা দেখলে চোখে পানি আসে। কী অবস্থা করেছে একেকটা পরিবারের। মা দেখে চোখের সামনে মেয়ে আর স্বামী পুড়ে যাচ্ছে। বাপ দেখে চোখের সামনে ছেলে পুড়ে যাচ্ছে। ওদের কিসের ক্ষমা ওদের আর ক্ষমা নাই।’

বিভিন্ন সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কথা একদম স্পষ্ট। আমরা সেই পঁচাত্তরের থেকে একুশ বছর শুধু মার খেয়েছি। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত শুধু মরাই খেয়েছি। এবার যে হাত দিয়ে মারতে আসবে, সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে মানুষকে আগুন দেবে, সেই হাত ওই আগুনেই পোড়াতে হবে। পোড়ার যন্ত্রণাটা তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এরা (বিএনপি) কীভাবে অত্যাচার করেছে, সেটা তুলে ধরতে হবে। বিএনপির অপকর্ম তুলে ধরতে হবে। আমাদের যে নেতাকর্মীরা বিএনপির হাতে ছেঁচা-মার খেয়েছে তাদের বসে থাকলে তো চলবে না। মানুষকে জানাতে হবে ওরা কী করতে পারে, কী করে। বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না, এটাও ঠিক।’

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর বিএনপি কার্যালয় থেকে চাল, ডালসহ রান্নার উপকরণ ও রান্না করা খিচুড়ি উদ্ধারের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে সরকার হটানো যাবে না।’

তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এখন থেকে পাড়া-মহল্লায় ‘সতর্ক অবস্থান’ নেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অগ্নি সন্ত্রাসীদের, স্বাধীনতাবিরোধীদের আর ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না, এটা স্পষ্ট কথা। ওরা আমাদের উৎখাত করবে? ওরা পকেট থেকে এসেছে আবার পকেটেই থাকবে। গণতন্ত্রের কথা ওদের মুখে মানায় না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবার যেন আর কোন বিআরটিসির বাস পোড়াতে না পারে। যেটা পোড়াতে যাবে, এখন তো সবার হাতে ক্যামেরা, ভিডিও ফুটেজ দেখে যেই হাতে আগুন দেবে, সেই হাত সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে দিতে হবে। কোনদিন বলিনি, এখন বলব। আর মার খাওয়ার সময় নাই।’

নেতাকর্মীদের ‘মাঠে থাকার’ নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না, এটা আমার স্পষ্ট কথা। প্রত্যেকটা এলাকায় নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে হবে। আর আমাদের যতগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের বলতে হবে তারা কী শান্তিতে থাকতে চায়? নাকি আবার অশান্তিকে জায়গা দিতে চায়। তাদের সিদ্ধান্ত দিতে হবে। জ্বালাও-পোড়াও হত্যা-খুন-মানি লন্ডারিং এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের শান্তিকে বিনষ্ট করতে দেয়া হবে না।’

দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই প্রস্তুত থাকবেন, বাংলাদেশের কোন মানুষের একটা ক্ষতিও যেন করতে না পারে। দোকানপাট সবাইকে বলে দেবেন তারাও যেন প্রতিবাদ করে। এর আগে আনেক যন্ত্রণা দিয়েছে তারা। আমরা অনেক সহ্য করেছি। এইভাবে আমার কৃষক-শ্রমিক আমাদের নেতাকর্মী কারও গায়ে হাত দিলে আর ক্ষমা নাই।’

আদালত কর্তৃক দন্ডিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনে অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুচলেকা দিয়ে গেছিল সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আমি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করব, তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ধরে এনে সাজা বাস্তবায়ন করব। আমেরিকা, তারা খুনি পালতেছে একটা, আবার কানাডা পালে আরেকটা, পাকিস্তানে আছে দুইটা। সবার কাছে বলব, এই খুনিদের ফেরত পাঠাতে হবে।’

‘আর ব্রিটিশ সরকারকে বলব তারেক জিয়াকে দেশে ফেরত পাঠাতে। কারণ সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারা (বহির্বিশ্ব) মানবতার কথা বলে, দুর্নীতির কথা বলে, আবার সেই খুনিকে, দুর্নীতিবাজকে তাদের দেশে আশ্রয় দেয়। কাজেই তাকে বাংলাদেশের কাছে হ্যান্ডওভার করতে হবে। এই দেশে নিয়ে এসে সাজা আমি বাস্তবায়ন করব।’

বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে কথা বলা দেশগুলোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব দেশ আমাদের দেশের গণতন্ত্রের কথা বলে, তাদের দেশের অবস্থা তো আমরা জানি। প্রতিদিন মানুষ খুন হয়, ভোটের সময় ভোট চুরি হয়েছে বলে তাদের ক্যাপিটলেও আক্রমণ হয়, পাঁচ-ছয়জন গুলি করে মারে, আর তাদের কাছ থেকে আমার গণতন্ত্রের ছবক নিতে হবে! আমরা বাংলাদেশ, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।’

বিএনপি ২০০১ সালে গ্যাস দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

বিএনপির ওই ক্ষমতাকালীন আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের ওপর বিএনপির অত্যাচারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি তো মনে করেছিল তারা মারা গেছে।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপির যে অভিযোগ বিএনপি গত কয়েক বছর ধরে করে আসছে, সেটিরও জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৮ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি (২০০১-এ) ভোট চুরি করেছিল বলেই তাদের জনগণ ২০০৮ সালে ভোট দেয়নি। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখেছে। আওয়ামী লীগ কখনো ভোট চুরি করে না, জনগণের ভোট সংরক্ষিত করে। তারা (বিএনপি) আওয়ামী লীগকে ভোট চুরির অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেনি।’

তারেক রহমানের দেশে না ফেরার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হলো, আমি তখনই দেশে চলে আসছি। তারেক জিয়ার বাপও (জিয়াউর রহমান) আমাকে ঠেকাতে পারেনি। আবার যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তখনও পারেনি। এতই নেতৃত্ব দেয়ার শখ, দেশের বাইরে পালিয়ে থেকে কেন? ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, সেই সুযোগে ডিজিটালি কথা বলে।’

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। ২০০১ সালের নির্বাচনের পরপরই একেকজনে বাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে কলাগাছের বাগান করেছে। মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে। ছয় বছরের মেয়ে থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সেই পূর্ণিমা ফাহিমা শুরু করে সারাদেশের কত নাম বলব সবার চিকিৎসা করতে হয়েছে। অনেকে লজ্জায় নাম প্রকাশ করেনি।’

‘২০০১ সালে যে অত্যাচারটা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর করেছে আমরা ২০০৯-এ ক্ষমতায় আসার পর গুনে গুনে সেই অত্যাচারের জবাব দিতে পারতাম, সেই ক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখে। কই আমরা তো করি নাই। আমরা তো তাদের ওপর এইভাবে অত্যাচার নির্যাতন করতে যাইনি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের সংগঠন। আর বিএনপির জন্ম কোথায়? জিয়াউর রহমানের উর্দি পরা পকেটে। পকেট থেকে কাগজ বের হয়েছে এমন সংগঠন। আওয়ামী লীগ কারও পকেটের সংগঠন না। এটা তাদের মাথায় রাখা উচিত। পকেটের সংগঠন, সেই কারণে তাদের মাটিতে কোন শেকড় নাই।’

‘তারা (বিএনপি) হলো স্বর্ণলতার মতো, যে গাছে উঠে সে গাছ খেয়ে শেষ করে দেয়, এটা হলো বিএনপি। যে গাছের উপরে স্বর্ণলতা উঠে সে গাছে আর কোন ফল ধরে না, বিএনপি দেশের ওপর উঠেছিল সেই দেশটাকে খেয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ আসার পরে দেশের উন্নতি হয়েছে। কারণ উন্নতি করার জন্য একটা মানসিকতা থাকা দরকার। আওয়ামী লীগ মানুষকে দিতে এসেছে।’

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবাই ‘আরাম-আয়েশে’ ব্যবসা করছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব মিডিয়া এখন ধর্ণা দিচ্ছে, এত টেলিভিশন, এ তো আমারই দেয়া। আমি যদি উন্মুক্ত না করে দিতাম, এত মানুষের চাকরিও হতো না, এত মানুষ ব্যবসাও করতে পারত না। আর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সে বিএনপির ব্যবসায়ীই হোক বা আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী হোক, সবাই কিন্তু শান্তিতে ব্যবসা করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হাওয়া ভবনও আমরা খুলি নাই, খাওয়া ভবনও আমরা খুলি নাই বরং ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছি। আবারও হাওয়া ভবন আসলে, এখন আসলে আরেকটা নাম দিবে। আবারও চুষে চুষে খাবে। শান্তিতে ব্যবসা করতে হবে না।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপির আমলে তো এত আরামে ব্যবসা করতে পারেনি। এই মিডিয়া একটা উল্টা-পাল্টা লিখলেই তো মারত। তারপরেও এত আহ্লাদ কিসের? এত তেল মারা কিসের? আমি তো জানি না। কত তেল আছে আমি দেখব।’

সংবাদকর্মীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপিকে যারা তেল মারছে, আমরা তাদেরও হিসাব করব। আওয়ামী লীগের সময় আরাম-আয়েশ করে ব্যবসা করে খাচ্ছে তো, কারও ব্যবসায় আমরা বাধা দিইনি তো। সবাইকে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করতে দিয়েছি।’

back to top