alt

রাজনীতি

তত্ত্বাবধায়কে অটল বিএনপি, আ’লীগের ‘না’ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ফের উত্তেজনা

মৌলভীবাজারে আহত ৩০, নাটোরে মঞ্চ দখল, বিভিন্ন স্থানে বাধা

ফয়েজ আহমেদ তুষার : শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়ছে। শনিবার (১১ মার্চ) মৌলভীবাজার, ঠাকুরগাঁও, নাটোরসহ কয়েকটি জেলায় স্থানীয় বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা ও হামলার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। প্রতিপক্ষের ওপর ক্ষমতাসীনদের চড়াও হওয়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে জেলা, উপজেলা পর্যায়ের কর্মসূচিতে। বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশি বাধার অভিযোগও উঠেছে অনেক স্থানে।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে ‘মানববন্ধন’, ‘পদযাত্রা’, ‘বিভাগীয় সমাবশে’সহ নানা আন্দোলন কর্মসূচি দিচ্ছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। তাদের পাহারায় রাখতে পাল্টা কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তি সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগ।

সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি কোন পরিস্থিতিতেই মেনে নেয়া হবে না। শনিবারও রাজধানীসহ দেশের জেলা ও মহানগর পর্যায়ে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ থেকে একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, কারাবন্দীদের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে মানববন্ধন করছে বিএনপি।

এদিকে বিএনপি-জামায়াতের ‘দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্য ও অপপ্রচারের’ প্রতিবাদে শনিবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ জেলায় জেলায় ও মহানগরে ‘শান্তি সমাবেশ’ করেছে আওয়ামী লীগ।

এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বিএনপি নেতাদের দাবির বিষয়ে দক্ষিণের সমাবেশে বলেন, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি আবার এক-এগারোর মতো তিন-চার বছর ক্ষমতা দখল করে রাখে, তবে দায় নেবে কে; এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি। আওয়ামী লীগ দেশের বিচার ব্যবস্থা বা আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করে না উল্লেখ করে কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালত কর্তৃক দ-প্রাপ্ত। অসুস্থতার জন্য তাকে মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছে। আদালতের ওপর আওয়ামী লীগ সরকার হস্তক্ষেপ করলে বিএনপির অনেক নেতাই জেলে থাকতো।

এদিকে শনিবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর বনানী পোস্ট অফিসের পাশের মাঠে শান্তি সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। নগরের দুটি সমাবেশেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা ‘বিএনপির অযৌক্তিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ দাবির বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন।

ঢাকার বাইরে জেলা ও মহানগরে শনিবারের শান্তি সমাবেশের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়নি; সুবিধামতো সময়ে সমাবেশ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল কেন্দ্র থেকে। গত বুধবার দলের এক যৌথসভা থেকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শনিবারের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

শনিবার এসব সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও জেলা, মহানগর ও উপজেলা নেতা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

ক্ষমতাসীনদের সহযোগী সংগঠন যুবলীগও শনিবার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল। যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের ব্যানারে বিকেল ৩টায় মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ব্যানারে একই সময়ে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় শেখ রাসেল পার্কের সামনে শান্তি সমাবেশ করে।

ময়মনসিংহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা ও উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন কর্মসূচির কারণে শনিবার এই জেলায় শান্তি সমাবেশ রাখেনি আওয়ামী লীগ। বিএনপিও একই কারণে ময়মনসিংহে কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।

মৌলভীবাজারে বিএনপির ওপর হামলা, আহত ৩০

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় মৌলভীবাজারে অন্তত ত্রিশ জন আহত হন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। শনিবার বেলা পৌনে একটার দিকে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমানও আহত হন।

স্থানীয় বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ হামলা করেছেন। তবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের দাবি, আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কাছাকাছি সময়ে মানববন্ধনের জন্য জমায়েত হয় বিএনপি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অশ্লীল ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ায় হামলার ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র বলছে, মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠসংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। দুপুর ১২টায় কর্মসূচি শেষে করে তারা মিছিল নিয়ে চলে গেলে মানববন্ধনের জন্য শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে সেই জমায়েতকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যে যার মতো সরে যান।

জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফয়জুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছিল। আমাদের প্রত্যেকটি কর্মসূচিই শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হয়েছে। তারা ইটপাটকেল, পাথর নিক্ষেপ করেছেন। নাসের রহমান চোখে আঘাত পেয়েছেন। তিনিসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। চৌমোহনার দিক থেকে আসা একটি মিছিল আমাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।’

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমিরুল হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নেত্রী সম্পর্কে অশ্লীল বক্তব্য ও স্লোগান দিয়েছে। প্রথমে তাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। সরে না যাওয়ায় ধাওয়া দেয়া হয়।’ বিএনপির কর্মী কেউ আহত হয়নি বলে দাবি করেন ক্ষমতাসীন এই ছাত্রনেতা।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান বলেন, ‘আমাদের শান্তি সমাবেশ ছিল। আধা ঘণ্টা পরে আমাদের কর্মসূচি শেষ হয়ে যেত। শেষ পর্যায়ে এসে তারা সমস্যা করেছে। পায়ে পা লাগিয়ে গ-গোল করতে চেয়েছে। মৌলভীবাজারে এমন ঘটনা ঘটেনি। তারা অন্য জায়গায় পরে কর্মসূচি করতে পারত। তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করলে আমরা বাধা দেয়ার কে?’

স্থানীয় পুলিশ বলছে, ওই ঘটনা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। দুই পক্ষকে দুই দিকে সরিয়ে দিয়ে দেয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।

নাটোরে বিএনপির মঞ্চ দখল করে আ’লীগের শান্তি সমাবেশ

নাটোরে মিছিল বের করার ফাঁকেই বিএনপির মঞ্চ দখল করে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শনিবার সকালে নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের দিয়াড় মাদ্রাসাঘাট বটতলা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে বলে জানায় স্থানীয় সূত্র।

সকালে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বটতলা মোড়ে সমবেত হয়। জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম ও পৌর বিএনপির সদস্য-সচিব জিল্লুর রহমান খান চৌধুরী সেখানে বক্তব্য দেন। পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছাতনী উচ্চবিদ্যালয়ে তাদের নির্ধারিত মঞ্চে সমাবেশ করার জন্য রওনা দেন। এর আগেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল করে বিএনপির ওই মঞ্চ দখল করে এবং সেখানে শান্তি সমাবেশ শুরু করেন।

এই খবর পেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা মঞ্চের দিকে ফিরে আসতে শুরু করেন। এ সময় সংঘর্ষের আশঙ্কায় আশপাশের লোকজন বটতলা এলাকা থেকে সরে যান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাতনী-নাটোর সড়কে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সমাবেশ শেষ করে মোটরসাইকেল নিয়ে মির্জাপুরের দিকে চলে যান।

ছাতনী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সকালে আওয়ামী লীগ ছাতনী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে শান্তি সমাবেশ শুরু করেছিল। তাই সেখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে বটতলা মোড়ে বিএনপি কর্মসূচি দিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্ধারিত স্থান থেকে উঠে এসে তাদের মঞ্চ দখল করে সমাবেশ করে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিএনপির নেতাকর্মীরা কাউকে বাধা দেননি। তবে বিএনপির পদযাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হাবুর মোড়, প-িতগ্রাম ও বারঘরিয়া মোড়ে অবস্থান নিয়েছিল বলে দাবি করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির লোকজনকে সড়কে উঠতে দেননি। পরে তারা বিকল্প রাস্তা দিয়ে পদযাত্রায় অংশ নিয়েছেন।

এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল সরকার বলেন, ‘বিএনপি কর্মসূচি পালন করবে না বলে গতকাল শুক্রবার রাতে কথা দিয়েছিল। তাই আমরা বটতলায় কর্মসূচি দিইনি। কিন্তু তারা যখন জেলার নেতাদের এনে কর্মসূচি পালন করতে শুরু করেছে, তখন আমরা বটতলায় না এসে পারিনি। তবে বিএনপির কাউকে কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়া হয়নি।’

ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপিকে বাধা, মাইক খুলে নেয়ার চেষ্টা

ঠাকুরগাঁওয়ে একই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ও বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচির কারণে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষমাতাসীনরা বিএনপির কর্মসূচির মাইক খুলে নেয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার সকালে বিএনপির কর্মসূচি চলা অবস্থায় মাইকের আওয়াজে শান্তি সমাবেশে ব্যাঘাত ঘটছে, এমন অভিযোগ করে বিএনপির কর্মসূচির মাইক খুলে নেয়ার চেষ্টা করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি কামাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, একই সময় দুটি দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হওয়ায় খানিকটা উত্তেজনা বিরাজ করেছিল। পরবর্তীতে পুলিশ তা স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসে।

জেলা বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলটির বিশেষ প্রতিনিধি ড. আসাদুজ্জামান রিপন। জেলা আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন।

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি শুরু

বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের পাল্টা হিসেবে গত বছরের নভেম্বর থেকে আওয়ামী লীগও একই দিন কর্মসূচি পালন করে আসছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের দিন থেকে ক্ষমতাসীনরা রাজপথে অবস্থান নেয়া শুরু করে। তখন থেকেই পাল্টা কর্মসূচি শুরু হয়।

ফেব্রুয়ারির শুরুতে ইউনিয়ন এবং মহানগর পর্যায়ে একই দিন রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল দুই দল। ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও মহানগরের কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিএনপির কর্মসূচি পালনে পুলিশি বাধা এবং আটকের অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া বিচ্ছিন্ন হামলা, ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে অনেক এলাকায়।

বিএনপির দাবি, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। পাল্টা কর্মসূচি দেয়া বন্ধ করতে আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকে। তারা বলছেন, প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ আগে কর্মসূচি ঘোষণা করুক। বিএনপি ওইদিন কর্মসূচি রাখবে না।

আওয়ামী লীগের দাবি, বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কোন কর্মসূচি তারা দিচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে তারা মাঠে আছে। আওয়ামী লীগ বলছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত সহিংসতা করতে পারে এমন তথ্য তাদের কাছে আছে। তাই নজরে রাখতেই সতর্ক পাহারায় আছে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সংঘাতের আশঙ্কা দেখামাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নেতাকর্মীর প্রতি নির্দেশনা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আসছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যেকোন দিন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে।

ছবি

‘আবেগ নয়, দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিন’—অন্তর্বর্তী সরকারকে রিজভী

ছবি

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত, নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ বন্ধ

সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গ্রেপ্তার

ছবি

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, বিএনপির সমর্থন, বাসদের প্রশ্ন

ছবি

আন্দোলনকালীন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আইভী, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

ছবি

নিবন্ধন বাতিল নিয়ে সিদ্ধান্তে বসেছে ইসি, অপেক্ষায় গেজেট

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন নিষিদ্ধ

ছবি

সন্দেহভাজন বিদেশিদের আগমন ঘটছে দেশে’ — মির্জা আব্বাসের অভিযোগ

ছবি

‘গোলাম আজমের বাংলায়’ স্লোগান নিয়ে বিতর্কে এনসিপি: দায় নিতে হবে সংশ্লিষ্ট পক্ষকেই

ছবি

দ্বাদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতির অসীম ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেওয়া হয়েছিল: আলী রীয়াজ

ছবি

সংবিধান সংস্কারে কমিশন গঠনের দাবি নাগরিক কোয়ালিশনের অনুষ্ঠানে

ছবি

আওয়ামী লীগের বিচার চেয়ে আগেই প্রস্তাব দিয়েছিল বিএনপি—সালাহউদ্দিন

ছবি

নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার স্পষ্ট করার আহ্বান নাহিদ ইসলামের

ছবি

‘গুম-খুন-নিপীড়নের বিচার প্রক্রিয়া সঠিক পথে’—মির্জা ফখরুল

ছবি

গণতন্ত্রের মা’কে গভীর শ্রদ্ধা জানালেন লন্ডনপ্রবাসী তারেক

ছবি

আহতদের সুচিকিৎসা ও জুলাই সনদ প্রকাশের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

ছবি

এক যুগ পর ভাইয়ের বাসায় খালেদা জিয়া, সঙ্গে ছিলেন পুত্রবধূরা

ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সংশোধিত, রাজনৈতিক দলকেও বিচারের আওতায় আনার পথ সুগম

ছবি

নিশ্চিত আদেশের অপেক্ষায় ইসি, নিষিদ্ধ হলে বাতিল হবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন

ছবি

শাহবাগে মধ্যরাতের পর জমায়েতে হাসনাত, সোমবার প্রজ্ঞাপন জারির পর আনন্দমিছিল

ছবি

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ থেকে ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান, বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা

ছবি

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে এক ঘণ্টার আলটিমেটাম, শাহবাগে এনসিপির অবরোধ

ছবি

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে রোডম্যাপ না পেয়ে ‘মার্চ টু যমুনা’ ঘোষণা

ছবি

নতুন দল ‘আপ বাংলাদেশ’-এর আত্মপ্রকাশ, আহ্বায়ক শিবিরের সাবেক নেতা জুনায়েদ

ছবি

শাহবাগে এনসিপির গণজমায়েত, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি হাসনাত আবদুল্লাহর

ছবি

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ অব্যাহত, বিকেলে গণজমায়েতের প্রস্তুতি

ছবি

শাহবাগ ব্লকেড চলছে, মহাসড়কে ব্লকেড না দেওয়ার আহ্বান এনসিপি নেতার

ছবি

জুলাই আন্দোলনের হত্যা মামলায় আইভী কারাগারে

ছবি

আ. লীগ নিষিদ্ধের দাবি: যমুনার সামনে বাদ জুমা বড় জমায়েতের ডাক

ছবি

আ. লীগকে নিষিদ্ধের দাবি: রাতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ সকালেও চলছে

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধের চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায়, দাবি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার

ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সিইসি ও বিচারপতিসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

ছবি

“জাতির বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নয়: মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারকে বিএনপির হুঁশিয়ারি”

ছবি

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত সাবেক এমপি তুহিনের আপিল গ্রহণ, জামিন মঞ্জুর

ছবি

দল গোছাতে দুই মাসে এক কোটি সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য বিএনপির

ছবি

কবিগুরুর গান জাতীয় সংগীত হিসেবে পেয়ে আমরা গর্বিত: তারেক রহমান

tab

রাজনীতি

তত্ত্বাবধায়কে অটল বিএনপি, আ’লীগের ‘না’ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ফের উত্তেজনা

মৌলভীবাজারে আহত ৩০, নাটোরে মঞ্চ দখল, বিভিন্ন স্থানে বাধা

ফয়েজ আহমেদ তুষার

শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়ছে। শনিবার (১১ মার্চ) মৌলভীবাজার, ঠাকুরগাঁও, নাটোরসহ কয়েকটি জেলায় স্থানীয় বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা ও হামলার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। প্রতিপক্ষের ওপর ক্ষমতাসীনদের চড়াও হওয়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে জেলা, উপজেলা পর্যায়ের কর্মসূচিতে। বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশি বাধার অভিযোগও উঠেছে অনেক স্থানে।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে ‘মানববন্ধন’, ‘পদযাত্রা’, ‘বিভাগীয় সমাবশে’সহ নানা আন্দোলন কর্মসূচি দিচ্ছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। তাদের পাহারায় রাখতে পাল্টা কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তি সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগ।

সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি কোন পরিস্থিতিতেই মেনে নেয়া হবে না। শনিবারও রাজধানীসহ দেশের জেলা ও মহানগর পর্যায়ে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ থেকে একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, কারাবন্দীদের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে মানববন্ধন করছে বিএনপি।

এদিকে বিএনপি-জামায়াতের ‘দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্য ও অপপ্রচারের’ প্রতিবাদে শনিবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ জেলায় জেলায় ও মহানগরে ‘শান্তি সমাবেশ’ করেছে আওয়ামী লীগ।

এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বিএনপি নেতাদের দাবির বিষয়ে দক্ষিণের সমাবেশে বলেন, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি আবার এক-এগারোর মতো তিন-চার বছর ক্ষমতা দখল করে রাখে, তবে দায় নেবে কে; এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি। আওয়ামী লীগ দেশের বিচার ব্যবস্থা বা আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করে না উল্লেখ করে কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালত কর্তৃক দ-প্রাপ্ত। অসুস্থতার জন্য তাকে মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছে। আদালতের ওপর আওয়ামী লীগ সরকার হস্তক্ষেপ করলে বিএনপির অনেক নেতাই জেলে থাকতো।

এদিকে শনিবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর বনানী পোস্ট অফিসের পাশের মাঠে শান্তি সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। নগরের দুটি সমাবেশেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা ‘বিএনপির অযৌক্তিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ দাবির বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন।

ঢাকার বাইরে জেলা ও মহানগরে শনিবারের শান্তি সমাবেশের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়নি; সুবিধামতো সময়ে সমাবেশ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল কেন্দ্র থেকে। গত বুধবার দলের এক যৌথসভা থেকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শনিবারের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

শনিবার এসব সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও জেলা, মহানগর ও উপজেলা নেতা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

ক্ষমতাসীনদের সহযোগী সংগঠন যুবলীগও শনিবার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল। যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের ব্যানারে বিকেল ৩টায় মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ব্যানারে একই সময়ে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় শেখ রাসেল পার্কের সামনে শান্তি সমাবেশ করে।

ময়মনসিংহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা ও উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন কর্মসূচির কারণে শনিবার এই জেলায় শান্তি সমাবেশ রাখেনি আওয়ামী লীগ। বিএনপিও একই কারণে ময়মনসিংহে কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।

মৌলভীবাজারে বিএনপির ওপর হামলা, আহত ৩০

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় মৌলভীবাজারে অন্তত ত্রিশ জন আহত হন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। শনিবার বেলা পৌনে একটার দিকে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমানও আহত হন।

স্থানীয় বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ হামলা করেছেন। তবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের দাবি, আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কাছাকাছি সময়ে মানববন্ধনের জন্য জমায়েত হয় বিএনপি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অশ্লীল ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ায় হামলার ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র বলছে, মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠসংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। দুপুর ১২টায় কর্মসূচি শেষে করে তারা মিছিল নিয়ে চলে গেলে মানববন্ধনের জন্য শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে সেই জমায়েতকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যে যার মতো সরে যান।

জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফয়জুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছিল। আমাদের প্রত্যেকটি কর্মসূচিই শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হয়েছে। তারা ইটপাটকেল, পাথর নিক্ষেপ করেছেন। নাসের রহমান চোখে আঘাত পেয়েছেন। তিনিসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। চৌমোহনার দিক থেকে আসা একটি মিছিল আমাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।’

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমিরুল হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নেত্রী সম্পর্কে অশ্লীল বক্তব্য ও স্লোগান দিয়েছে। প্রথমে তাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। সরে না যাওয়ায় ধাওয়া দেয়া হয়।’ বিএনপির কর্মী কেউ আহত হয়নি বলে দাবি করেন ক্ষমতাসীন এই ছাত্রনেতা।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান বলেন, ‘আমাদের শান্তি সমাবেশ ছিল। আধা ঘণ্টা পরে আমাদের কর্মসূচি শেষ হয়ে যেত। শেষ পর্যায়ে এসে তারা সমস্যা করেছে। পায়ে পা লাগিয়ে গ-গোল করতে চেয়েছে। মৌলভীবাজারে এমন ঘটনা ঘটেনি। তারা অন্য জায়গায় পরে কর্মসূচি করতে পারত। তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করলে আমরা বাধা দেয়ার কে?’

স্থানীয় পুলিশ বলছে, ওই ঘটনা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। দুই পক্ষকে দুই দিকে সরিয়ে দিয়ে দেয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।

নাটোরে বিএনপির মঞ্চ দখল করে আ’লীগের শান্তি সমাবেশ

নাটোরে মিছিল বের করার ফাঁকেই বিএনপির মঞ্চ দখল করে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শনিবার সকালে নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের দিয়াড় মাদ্রাসাঘাট বটতলা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে বলে জানায় স্থানীয় সূত্র।

সকালে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বটতলা মোড়ে সমবেত হয়। জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম ও পৌর বিএনপির সদস্য-সচিব জিল্লুর রহমান খান চৌধুরী সেখানে বক্তব্য দেন। পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছাতনী উচ্চবিদ্যালয়ে তাদের নির্ধারিত মঞ্চে সমাবেশ করার জন্য রওনা দেন। এর আগেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল করে বিএনপির ওই মঞ্চ দখল করে এবং সেখানে শান্তি সমাবেশ শুরু করেন।

এই খবর পেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা মঞ্চের দিকে ফিরে আসতে শুরু করেন। এ সময় সংঘর্ষের আশঙ্কায় আশপাশের লোকজন বটতলা এলাকা থেকে সরে যান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাতনী-নাটোর সড়কে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সমাবেশ শেষ করে মোটরসাইকেল নিয়ে মির্জাপুরের দিকে চলে যান।

ছাতনী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সকালে আওয়ামী লীগ ছাতনী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে শান্তি সমাবেশ শুরু করেছিল। তাই সেখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে বটতলা মোড়ে বিএনপি কর্মসূচি দিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্ধারিত স্থান থেকে উঠে এসে তাদের মঞ্চ দখল করে সমাবেশ করে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিএনপির নেতাকর্মীরা কাউকে বাধা দেননি। তবে বিএনপির পদযাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হাবুর মোড়, প-িতগ্রাম ও বারঘরিয়া মোড়ে অবস্থান নিয়েছিল বলে দাবি করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির লোকজনকে সড়কে উঠতে দেননি। পরে তারা বিকল্প রাস্তা দিয়ে পদযাত্রায় অংশ নিয়েছেন।

এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল সরকার বলেন, ‘বিএনপি কর্মসূচি পালন করবে না বলে গতকাল শুক্রবার রাতে কথা দিয়েছিল। তাই আমরা বটতলায় কর্মসূচি দিইনি। কিন্তু তারা যখন জেলার নেতাদের এনে কর্মসূচি পালন করতে শুরু করেছে, তখন আমরা বটতলায় না এসে পারিনি। তবে বিএনপির কাউকে কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়া হয়নি।’

ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপিকে বাধা, মাইক খুলে নেয়ার চেষ্টা

ঠাকুরগাঁওয়ে একই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ও বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচির কারণে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষমাতাসীনরা বিএনপির কর্মসূচির মাইক খুলে নেয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার সকালে বিএনপির কর্মসূচি চলা অবস্থায় মাইকের আওয়াজে শান্তি সমাবেশে ব্যাঘাত ঘটছে, এমন অভিযোগ করে বিএনপির কর্মসূচির মাইক খুলে নেয়ার চেষ্টা করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি কামাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, একই সময় দুটি দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হওয়ায় খানিকটা উত্তেজনা বিরাজ করেছিল। পরবর্তীতে পুলিশ তা স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসে।

জেলা বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলটির বিশেষ প্রতিনিধি ড. আসাদুজ্জামান রিপন। জেলা আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন।

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি শুরু

বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের পাল্টা হিসেবে গত বছরের নভেম্বর থেকে আওয়ামী লীগও একই দিন কর্মসূচি পালন করে আসছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের দিন থেকে ক্ষমতাসীনরা রাজপথে অবস্থান নেয়া শুরু করে। তখন থেকেই পাল্টা কর্মসূচি শুরু হয়।

ফেব্রুয়ারির শুরুতে ইউনিয়ন এবং মহানগর পর্যায়ে একই দিন রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল দুই দল। ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও মহানগরের কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিএনপির কর্মসূচি পালনে পুলিশি বাধা এবং আটকের অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া বিচ্ছিন্ন হামলা, ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে অনেক এলাকায়।

বিএনপির দাবি, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। পাল্টা কর্মসূচি দেয়া বন্ধ করতে আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকে। তারা বলছেন, প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ আগে কর্মসূচি ঘোষণা করুক। বিএনপি ওইদিন কর্মসূচি রাখবে না।

আওয়ামী লীগের দাবি, বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কোন কর্মসূচি তারা দিচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে তারা মাঠে আছে। আওয়ামী লীগ বলছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত সহিংসতা করতে পারে এমন তথ্য তাদের কাছে আছে। তাই নজরে রাখতেই সতর্ক পাহারায় আছে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সংঘাতের আশঙ্কা দেখামাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নেতাকর্মীর প্রতি নির্দেশনা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আসছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যেকোন দিন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে।

back to top