alt

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩

মার্কিন সরকারের নতুন ভিসানীতিকে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অব্যাহত অঙ্গীকারের প্রতি জোরালো সমর্থন বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা করেছে সরকার।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে যেসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বাধাগ্রস্ত করবে বা গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করবে, তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা বিধিনিষেধ জারি করবে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে এ তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।

গত বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ৮ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এক টুইটবার্তায় যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেন। পরে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়েও এ তথ্য নিশ্চিত করেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

টুইটবার্তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যকে সহায়তা করতে আমি আজ ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ২১২ (এ) (৩) (সি) (৩সি) ধারার আওতায় নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যেকোন বাংলাদেশি ব্যক্তির ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে।

বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা/কর্মচারী, সরকারপন্থি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নতুন এই নীতির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ব্লিনকেন তার বার্তায় বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমসহ সবার। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সবাইকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাস থেকে দেয়া এ সম্পর্কিত এক বিবৃতি দেয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে- ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা। গত ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার (২৫ মে) বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এছাড়া ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা। পরে বিভিন্ন দলের নেতারা সাংবাদিকদের কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূতও বক্তব্য দিয়েছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়; বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখার স্বার্থে দেশের সব স্তরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার দ্ব্যর্থহীন অঙ্গীকারের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট থেকে মার্কিন এই ঘোষণাকে বিবেচনায় নিতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল জাতি, যার কয়েক দফায় জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে এটা স্পষ্ট যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ধারাবাহিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে দেশের মানুষ অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এর ফলে ২০০৬ সালের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ দারিদ্র্যের হার ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একই সময়ের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের হার ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে হয়েছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখন একটি আন্তর্জাতিক রোল মডেল বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় উত্তরণের যোগ্য হয়ে উঠেছে। গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিন মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার কারণে এটি অর্জিত হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক ও ভোটাধিকারের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। বাংলাদেশে কোন সরকারের ভোট কারচুপির মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার নজির নেই। জনগণের ভোটাধিকারকে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় পবিত্রতা বলে মনে করে, যে রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের জন্য দলটিকে নিরলস সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। সরকার সব ধরনের বৈধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য শান্তিপূর্ণ সভা ও সমাবেশকে গুরুত্ব দেয়।

সরকার মনে করে, স্থানীয় যে অগণতান্ত্রিক শক্তি সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তারা সতর্ক থাকবে এবং সংবিধানে নির্দেশিত নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে তাদের বিভ্রান্তিকর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে যাতে আপস করতে না হয়, সে জন্য সরকার কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের আইনবহির্ভূত চর্চা প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকসহ নির্বাচনী প্রক্রিয়া কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে।

সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না, এমন নীতি ঘোষণার পর ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠকের পর মোমেন ও পিটার হাস সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন যে ভিসানীতির ঘোষণা দিয়েছে, তা নিয়ে সরকার কোন চাপে নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা এসব নিয়ে কোন চাপে নেই। আমাদের কোন ব্যর্থতা নাই। বরং আমরা যা যা চাচ্ছি, সেই অনুযায়ী কাজ হচ্ছে।’ আবদুল মোমেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য যে ভিসানীতি করেছে, তাতে আমরা আশা করছি- আমরা যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই, বিশেষ করে; আমরা জ্বালাও-পোড়াও চাই না, এটাতে সাহায্য করবে। তাদের এ কারণে (ভিসানীতি) হয়তো যারা জ্বালাও-পোড়াও করে নির্বাচনকে বানচালের চেষ্টা করে তারা হয়তো তার পরিপ্রেক্ষিতে বিরত থাকব। তবে আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই।’

নতুন ভিসানীতি আমরা গ্রহণ করেছি কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের নীতি আমি রিজেক্ট (বাতিল) করবো কেন? আমাদের যেগুলো অঙ্গীকার, আমরা যেটি চাই তাদের পলিসিতে সেটিরই পুনরাবৃত্তি হয়েছে। আমাদের কোন অস্বস্তি নেই। তারা করেছেন তাদের নিয়মে। এটি যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা করে, তাহলে ভালো। তবে আমি নিশ্চিত নই। কারণ এটার কোন পরীক্ষা আগে হয়নি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চেয়েছি, এ ভিসানীতি অন্য দেশে পরীক্ষিত হয়েছে কি-না। তিনি জানিয়েছেন, এটি পরীক্ষিত হয়নি, এটা তাদের নতুন নীতি। তারা আশা করে, এটা বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে। তারা নাইজেরিয়া, সোমালিয়াসহ কয়েকটি দেশে করেছে। এটি তাদের একটু নতুন প্রচেষ্টা। এর ফলে কোথাও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে কি-না জানতে চেয়েছিলাম। তিনি (রাষ্ট্রদূত) বলেছেন, এটা এখন বলা যাবে না।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমাদের বৈঠক পূর্বনির্ধারিত, যা নিয়মিত বৈঠকের অংশ। আমাদের দুই দেশের চমৎকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় সম্প্রতি ঘোষিত ভিসানীতির প্রসঙ্গও এসেছে।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আজ সকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি এবং বৃহস্পতিবার আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) বিবৃতিতে যা দেখেছেন, তা বাংলাদেশের জনগণ, সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী সবার জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা। দুপুরে রাজধানীর গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় পিটার হাসের সঙ্গে তিন দলের নেতাদের প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বৈঠকটি হয়।

বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলেন দলের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও কেন্দ্রীয় নেতা মো. এ আরাফাত। বিএনপির পক্ষে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ। আর জাতীয় পার্টির পক্ষে ছিলেন মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু) ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের কোন নেতা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার প্রতিক্রিয়া জানান সাংবাদিকদের। ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছে নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা নয়। আমাদেরও এটা কথা, এই নির্বাচনে যারা বাধা দেবে, তাদের অবশ্যই প্রতিহত করা হবে। এই সরকার আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে চায়।

বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মজয়ন্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবির সমাধিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এ কথা বলেন।

সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটা কথা বারবার বলে আসছি। আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, অবাধ সুষ্ঠুভাবে করব। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘স্পষ্ট করে আমরা এটা বলতে চাই, যারা আন্দোলনের নামে নির্বাচনকে সামনে রেখে বাসে আগুন দেয়, বাস ভাঙচুর করে, তারা পলিটিক্যাল ভায়োলেন্সে (রাজনৈতিক সহিংসতা) আছে। কাজেই তাদের খবর আছে।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে এটি একটা বড় পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই।’ এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন সামনে রেখে যে উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা, তারই প্রতিফলন হিসেবে এ পদক্ষেপ এসেছে। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষের যে শঙ্কা নির্বাচন নিয়ে এ ধরনের একটি পদক্ষেপ আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এটার মাধ্যমে যে সবকিছু হবে তা নয়। কিন্তু এটা একটা বার্তা।’ আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারছে না, মানুষের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে, জীবনের নিরাপত্তা শঙ্কার মধ্যে আছে। যাদের কথা এখানে (মার্কিন ভিসানীতির ঘোষণায়) উল্লেখ করেছে, এই লোকগুলো, এই সংস্থাগুলো বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা। এটা একটা বড় পদক্ষেপ।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখানে একটা সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন চায়। তাদের উদ্দেশ্যটা ভালো। এ জন্য তাদের নতুন ভিসানীতিকে (বাংলাদেশের জন্য) স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় পার্টি।

মুজিবুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন ভিসানীতির উদ্দেশ্য বোঝা গেছে, তারা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এবং নির্বাচনটা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। এই ব্যাপারে আমাদের দলও একমত। আমরা বলেছি, মার্কিন সরকার যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। যারা এ ধরনের কাজ করবে, ইলেকশন আনফেয়ার করার জন্য জোরজবরদস্তি করবে, সে যেই হোক মার্কিন সরকার যদি কোন ব্যবস্থা নেয় ভিসার বিষয়ে, সেটা সেই গভর্নমেন্টের বিষয়।’

এর আগে গত বুধবার রাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে সরকার ‘বিচলিত নয়’। সাংবাদিকদরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কোন নিষেধাজ্ঞা নয়। এতে সরকার বিচলিত নয়, যেহেতু আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এটা বিএনপির জন্যই দুশ্চিন্তার দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে দুশ্চিন্তা করা উচিত, কেননা নির্বাচনের আগে বা পরে সংঘাত রয়েছে ভিসা বিধিনিষেধের আরেকটি মানদন্ড হিসেবে।’

ছবি

সরকার ও উপদেষ্টারা মাহফুজদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে: নাহিদ ইসলাম

ছবি

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে পশু-পাখি ও বাস্তুতন্ত্রের অধিকার নিশ্চিত হবে: তারেক রহমান

ছবি

বসুন্ধরায় গোপন বৈঠক: ময়মনসিংহ জেলা আ.লীগ নেতার দোষ স্বীকার

ছবি

ঢাকার আগারগাঁওয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ‘নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল

ছবি

আওয়ামী লীগ লুটপাট করে দেশকে দেউলিয়া করে দিয়েছে: মঈন খান

ছবি

ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তারেকের আহ্বান

ছবি

বাংলাদেশের সংবিধানে শ্রমিক, জনতার অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি: এনসিপি

ছবি

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: মিন্টু

ছবি

জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: বিএনপি

ছবি

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে গাজীপুরে সমাবেশ ও গণমিছিল করেছে ইসলামিক আন্দোলন

ছবি

নির্বাচনের আগে পরিবেশ সৃষ্টি জরুরি: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

ছবি

সংবিধান সংশোধন: মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন পদ্ধতিতে ভিন্নমত রাজনৈতিক দলগুলোর

ছবি

বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন হলে দেশের সংকট আরও বাড়বে: আনিসুল ইসলাম

ছবি

‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নে কোনো কিছু চাপিয়ে দেবে না কমিশন: আলী রীয়াজ

ছবি

ডাকসু জয়ে ছাত্র শিবিরকে অভিনন্দন পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর

ছবি

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ পদত্যাগ ঘোষণা

ছবি

আ.লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ছাত্রলীগের সব ভোট নিয়ে নিয়েছে শিবির : মির্জা আব্বাস

ছবি

ব্রিটিশ হাই কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জামায়াতে ইসলামের আমির

ছবি

ডাকসুতে জয়ীদের ব্যক্তিগত অভিনন্দন জানালেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি

ডাকসু নির্বাচন: ফল ঘোষণা ঘিরে কারচুপির অভিযোগ, ফল প্রত্যাখ্যান করলেন আবিদুল

ছবি

ডাকসু: ভোট গণনায় কারচুপির আশঙ্কা বাকেরের, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিক্রিয়া

ছবি

বার্ধক্যজনিত জটিলতায় হাসপাতালে ভর্তি গণফোরামের এমিরেটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন

ছবি

নতুন দলের নিবন্ধন সেপ্টেম্বরেই, ইসি আশ্বাস দিয়েছে বলে দাবি এনসিপির

ছবি

যেদিন রাস্তায় নামব, বন্দুকও কিছু করতে পারবে না: কাদের সিদ্দিকী

ছবি

‘শর্ট মেমোরি লস’ হয়নি নুরুল হকের, আশঙ্কাও নেই: ঢামেক

ছবি

জয়-পুতুলকে ‘দলীয় নেতৃত্বে’ আনছেন শেখ হাসিনা

ছবি

দেশের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হলে কারও জন্য ভালো হবে না: তারেক

আগামী নির্বাচন ততটা সহজ হবে না: তারেক রহমান

ছবি

কর ফাঁকির অভিযোগে সাবেক এমপি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর ব্যাংক হিসাব জব্দ

ছবি

মহিলা আওয়ামী লীগের নাহিদা নূর সুইটি ৩ দিনের রিমান্ডে

ছবি

রাজনৈতিক সহিংসতা ও মব সন্ত্রাস গণতন্ত্রের পথে বাধা: গণতন্ত্র মঞ্চ

ছবি

বাড়ি ভাঙচুরে ক্ষুব্ধ কাদের সিদ্দিকী: ‘দেশের শান্তির জন্য আমার সবকিছু ভাঙুক’

ছবি

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঢাকায় আবারও আওয়ামী লীগের মিছিল

ছবি

আসন সীমানা নিয়ে আন্দোলনে লাভ নেই: নির্বাচন কমিশন

ছবি

‘ক্লিন ইমেজের’ আওয়ামী লীগাররা দলে যোগ দিলে ‘মনোনয়ন দিবে’ জাতীয় পার্টি

ছবি

নুরুল হকের লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় জামায়াতের নিন্দা

tab

news » politics

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩

মার্কিন সরকারের নতুন ভিসানীতিকে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অব্যাহত অঙ্গীকারের প্রতি জোরালো সমর্থন বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা করেছে সরকার।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে যেসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বাধাগ্রস্ত করবে বা গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করবে, তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা বিধিনিষেধ জারি করবে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে এ তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।

গত বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ৮ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এক টুইটবার্তায় যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেন। পরে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়েও এ তথ্য নিশ্চিত করেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

টুইটবার্তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যকে সহায়তা করতে আমি আজ ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ২১২ (এ) (৩) (সি) (৩সি) ধারার আওতায় নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যেকোন বাংলাদেশি ব্যক্তির ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে।

বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা/কর্মচারী, সরকারপন্থি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নতুন এই নীতির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ব্লিনকেন তার বার্তায় বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমসহ সবার। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সবাইকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাস থেকে দেয়া এ সম্পর্কিত এক বিবৃতি দেয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে- ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা। গত ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার (২৫ মে) বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এছাড়া ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা। পরে বিভিন্ন দলের নেতারা সাংবাদিকদের কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূতও বক্তব্য দিয়েছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়; বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখার স্বার্থে দেশের সব স্তরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার দ্ব্যর্থহীন অঙ্গীকারের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট থেকে মার্কিন এই ঘোষণাকে বিবেচনায় নিতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল জাতি, যার কয়েক দফায় জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে এটা স্পষ্ট যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ধারাবাহিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে দেশের মানুষ অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এর ফলে ২০০৬ সালের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ দারিদ্র্যের হার ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একই সময়ের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের হার ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে হয়েছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখন একটি আন্তর্জাতিক রোল মডেল বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় উত্তরণের যোগ্য হয়ে উঠেছে। গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিন মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার কারণে এটি অর্জিত হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক ও ভোটাধিকারের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। বাংলাদেশে কোন সরকারের ভোট কারচুপির মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার নজির নেই। জনগণের ভোটাধিকারকে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় পবিত্রতা বলে মনে করে, যে রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের জন্য দলটিকে নিরলস সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। সরকার সব ধরনের বৈধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য শান্তিপূর্ণ সভা ও সমাবেশকে গুরুত্ব দেয়।

সরকার মনে করে, স্থানীয় যে অগণতান্ত্রিক শক্তি সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তারা সতর্ক থাকবে এবং সংবিধানে নির্দেশিত নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে তাদের বিভ্রান্তিকর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে যাতে আপস করতে না হয়, সে জন্য সরকার কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের আইনবহির্ভূত চর্চা প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকসহ নির্বাচনী প্রক্রিয়া কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে।

সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না, এমন নীতি ঘোষণার পর ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠকের পর মোমেন ও পিটার হাস সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন যে ভিসানীতির ঘোষণা দিয়েছে, তা নিয়ে সরকার কোন চাপে নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা এসব নিয়ে কোন চাপে নেই। আমাদের কোন ব্যর্থতা নাই। বরং আমরা যা যা চাচ্ছি, সেই অনুযায়ী কাজ হচ্ছে।’ আবদুল মোমেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য যে ভিসানীতি করেছে, তাতে আমরা আশা করছি- আমরা যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই, বিশেষ করে; আমরা জ্বালাও-পোড়াও চাই না, এটাতে সাহায্য করবে। তাদের এ কারণে (ভিসানীতি) হয়তো যারা জ্বালাও-পোড়াও করে নির্বাচনকে বানচালের চেষ্টা করে তারা হয়তো তার পরিপ্রেক্ষিতে বিরত থাকব। তবে আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই।’

নতুন ভিসানীতি আমরা গ্রহণ করেছি কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের নীতি আমি রিজেক্ট (বাতিল) করবো কেন? আমাদের যেগুলো অঙ্গীকার, আমরা যেটি চাই তাদের পলিসিতে সেটিরই পুনরাবৃত্তি হয়েছে। আমাদের কোন অস্বস্তি নেই। তারা করেছেন তাদের নিয়মে। এটি যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা করে, তাহলে ভালো। তবে আমি নিশ্চিত নই। কারণ এটার কোন পরীক্ষা আগে হয়নি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চেয়েছি, এ ভিসানীতি অন্য দেশে পরীক্ষিত হয়েছে কি-না। তিনি জানিয়েছেন, এটি পরীক্ষিত হয়নি, এটা তাদের নতুন নীতি। তারা আশা করে, এটা বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে। তারা নাইজেরিয়া, সোমালিয়াসহ কয়েকটি দেশে করেছে। এটি তাদের একটু নতুন প্রচেষ্টা। এর ফলে কোথাও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে কি-না জানতে চেয়েছিলাম। তিনি (রাষ্ট্রদূত) বলেছেন, এটা এখন বলা যাবে না।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমাদের বৈঠক পূর্বনির্ধারিত, যা নিয়মিত বৈঠকের অংশ। আমাদের দুই দেশের চমৎকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় সম্প্রতি ঘোষিত ভিসানীতির প্রসঙ্গও এসেছে।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আজ সকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি এবং বৃহস্পতিবার আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) বিবৃতিতে যা দেখেছেন, তা বাংলাদেশের জনগণ, সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী সবার জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা। দুপুরে রাজধানীর গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় পিটার হাসের সঙ্গে তিন দলের নেতাদের প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বৈঠকটি হয়।

বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলেন দলের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও কেন্দ্রীয় নেতা মো. এ আরাফাত। বিএনপির পক্ষে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ। আর জাতীয় পার্টির পক্ষে ছিলেন মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু) ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের কোন নেতা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার প্রতিক্রিয়া জানান সাংবাদিকদের। ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছে নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা নয়। আমাদেরও এটা কথা, এই নির্বাচনে যারা বাধা দেবে, তাদের অবশ্যই প্রতিহত করা হবে। এই সরকার আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে চায়।

বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মজয়ন্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবির সমাধিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এ কথা বলেন।

সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটা কথা বারবার বলে আসছি। আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, অবাধ সুষ্ঠুভাবে করব। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘স্পষ্ট করে আমরা এটা বলতে চাই, যারা আন্দোলনের নামে নির্বাচনকে সামনে রেখে বাসে আগুন দেয়, বাস ভাঙচুর করে, তারা পলিটিক্যাল ভায়োলেন্সে (রাজনৈতিক সহিংসতা) আছে। কাজেই তাদের খবর আছে।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে এটি একটা বড় পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই।’ এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন সামনে রেখে যে উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা, তারই প্রতিফলন হিসেবে এ পদক্ষেপ এসেছে। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষের যে শঙ্কা নির্বাচন নিয়ে এ ধরনের একটি পদক্ষেপ আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এটার মাধ্যমে যে সবকিছু হবে তা নয়। কিন্তু এটা একটা বার্তা।’ আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারছে না, মানুষের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে, জীবনের নিরাপত্তা শঙ্কার মধ্যে আছে। যাদের কথা এখানে (মার্কিন ভিসানীতির ঘোষণায়) উল্লেখ করেছে, এই লোকগুলো, এই সংস্থাগুলো বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা। এটা একটা বড় পদক্ষেপ।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখানে একটা সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন চায়। তাদের উদ্দেশ্যটা ভালো। এ জন্য তাদের নতুন ভিসানীতিকে (বাংলাদেশের জন্য) স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় পার্টি।

মুজিবুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন ভিসানীতির উদ্দেশ্য বোঝা গেছে, তারা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এবং নির্বাচনটা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। এই ব্যাপারে আমাদের দলও একমত। আমরা বলেছি, মার্কিন সরকার যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। যারা এ ধরনের কাজ করবে, ইলেকশন আনফেয়ার করার জন্য জোরজবরদস্তি করবে, সে যেই হোক মার্কিন সরকার যদি কোন ব্যবস্থা নেয় ভিসার বিষয়ে, সেটা সেই গভর্নমেন্টের বিষয়।’

এর আগে গত বুধবার রাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে সরকার ‘বিচলিত নয়’। সাংবাদিকদরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কোন নিষেধাজ্ঞা নয়। এতে সরকার বিচলিত নয়, যেহেতু আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এটা বিএনপির জন্যই দুশ্চিন্তার দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে দুশ্চিন্তা করা উচিত, কেননা নির্বাচনের আগে বা পরে সংঘাত রয়েছে ভিসা বিধিনিষেধের আরেকটি মানদন্ড হিসেবে।’

back to top