alt

কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল

মেসি এবং আর্জেন্টিনার স্বপ্নপূরণ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

সারাবিশ্বের শতকোটি সমর্থকের মনের আশা পূর্ণ করে ৩৬ বছর পর আবার বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। রবিবার লুসাইল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে আর্জেন্টিনা টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে পরাজিত করে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা অমীমাংসিত থাকায় টাইব্রেকারে ফল নির্ধারিত হয়। আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক মার্টিনেজ ফিরিয়ে দেন কোম্যানের শট। চুয়ামেনি মারেন বাইরে। টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করেন মেসি, লাওতারো মার্টিনেজ, পারেদেস এবং মন্টিয়েল এবং ফ্রান্সের হয়ে গোল করেন এমবাপ্পে, মুয়ানি ।

নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ গোলে এবং অতিরিক্ত সময়ের খেলা ৩-৩ গোলে ড্র হয়।

আর্জেন্টিনা শুরু থেকে দারুন খেলে ম্যাচে এগিয়ে যায়। তারা প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ায় মনে হয়েছিল জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে এবং আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতায় লিওনেল মেসির স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কিন্তু ফ্রান্স সহজে ছেড়ে দেয়ার দল না। তারা দুই মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোল পরিশোধ করে ম্যাচে সমতা ফেরায়। অতিরিক্ত সময়ে মেসির গোলে আবার এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু এমবাপ্পে আবারো গোল করলে ম্যাচে ৩-৩ গোলে সমতা ফেরে।

সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মেসি এর আগে ফুটবলের সব ট্রফি জিতলেও বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। এবার সেই স্বপ্নের ট্রফি তিনি জিতলেন বিশ্বকাপে নিজের শেষ ম্যাচে। মেসি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন ফাইনালই হবে তার বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ। শেষ ম্যাচটি তিনি ট্রফি জিতে চির স্মরনীয় করে রাখলেন। ৩৫ বছর বয়সেও তিনি খেলেছেন অসাধারণ। দলকে সামনে থেকে দিয়েছেন নেতৃত্ব। করেছেন ৭টি গোল। হয়েছেন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ও। তবে ৮টি গোল করে গোল্ডেন বুট জিতেছেন এমবাপ্পে।

ফাইনালের আগে ফ্রান্স শিবিরে ভাইরাস জ্বরে হানা দিয়েছিল। কয়েকজন খেয়োয়াড় এতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। জ্বর থেকে সেরে উঠলেও তাদের ফিটনেসে ঘাটতি ছিল। তা দেখা গেছে খেলার মাঠে। ফাইনালে ফ্রান্সের এমন হতাশাজনক পারফরমেন্স সবাইকে মনে করিয়ে দেয় ১৯৯৮ সালের ফাইনালে ব্রাজিলের খেলার কথা। সে ম্যাচের আগে তারকা খেলোয়াড় রহস্যজনকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। যার প্রভাব ছিল পুরো দলের উপর। তারা হতাশাজনকভাবে ফ্রান্সের কাছে হেরেছিল ৩-০ গোলে।

ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় র‌্যারিয়ট, অলিভার জিরু এবং রাফায়েল ভারানের খেলা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু সব সংশয় দূর করে এ তিন জনকে একাদশে রাখেন ফরাসী কোচ। একাদশে পরিবর্তন আসে আর্জেন্টিনা দলেও। পুরো ফিট হওয়ায় একাদশে জায়গা করে নেন অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার ডি মারিয়া। তবে শেষ সময়ে একাদশ থেকে ছিটকে যান মার্কোস অ্যাকুনা। টাগলিফিয়াকো রাখা হয় একাদশে। পরিবর্তন আনা হয় ফর্মেশনেও। ৫-৩-২ ফর্মেশনের বদলে দল সাজান ৪-৪-২ এ। ফ্রান্স একাদশ সাজায় ৪-৩-৩ ফর্মেশনে। জিরুকে স্ট্রাইকার রেখে উইঙ্গার হিসেবে খেলানো হয় ডেম্বেলে এবং এমবাপ্পেকে।

ফর্মেশনের কারণে মিডফিল্ডে আর্জেন্টিনার প্রভাব থাকার কথা। তাছাড়া পুরো গ্যালারি জুড়েই ছিল আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। মাঠের পরিবেশ দেখে মনেই হয়েছে খেলাটি হচ্ছে আর্জেন্টিনার কোন মাঠে এবং আর্জেন্টিনার চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা ছিল কেবলই আনুষ্ঠানিকতা।

ম্যাচ শুরু হওয়ার পর উভয় দলের খেলোয়াড়দের বেশ ¯œায়ুর চাপে ভুগতে দেখা যায়। ফলে ঠিকমতো পাস দেয়া কিংবা বল রিভিস করতে সমস্যা হচ্ছিল। ধীরে ধীরে এ অবস্থা কাটিয়ে আর্জেন্টিনা প্রথম শট মারতে সক্ষম হয় পোস্ট লক্ষ্য করে। তবে ম্যাক অ্যালিস্টারের দূর পাল্লার শট সরাসরি চলে যায় ফরাসী গোলরক্ষকের হাতে। প্রথম ১৫ মিনিট আর্জেন্টিনা বেশ দাপটের সাথেই খেলতে থাকে। এর পর ধীরে ধীরে নিজেদের গুছিয়ে নেয় ফ্রান্স। ২২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে মেসি গোল করলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ডি মারিয়ার কাছ থেকে ডেম্বেল বল কেড়ে নিতে গেলে পড়ে যান ডি মারিয়া এবং রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। কাকতালীয় হলেও প্রায় প্রত্যেক ম্যাচেই আর্জেন্টিনা একটি করে পেনাল্টি পেয়েছে। তবে ৩৫ মিনিটে করা দ্বিতীয় গোল নিয়ে কোন সংশয় ছিল না। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোলটি করেন ডি মারিয়া। ম্যাক অ্যালিস্টারের পাস থেকে ডি মারিয়া করেন গোলটি। প্রথমার্ধের খেলার দশ মিনিট বাকি থাকতে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ায় তাদের ট্রফি জেতা বলতে গেলে নিশ্চিত হয়ে যায়।

ফ্রান্সের জিরু এবং ডেম্বেলে সুবিধা করতে না পারায় প্রথমার্ধেই এ দুজনকে তুলে নেন কোচ। মাঠে নামান মার্কাস থুরাম এবং কোলো মুয়ানিকে। এর ফলে আর্জেন্টিনার একক আধিপত্য কিছুটা কমে। তবে প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগের কঠিন কোন পরীক্ষা নিতে পারেনি ফ্রান্স। এমবাপ্পের কাছে কোন বলই জোগান দিতে পারেনি।

প্রথমার্ধে দুই গোল খাওয়ার পর মানসিকভাবে বলতে গেলে ভেঙ্গে পড়ে ফ্রান্সের খেলোয়াড়রা। তাই তাদের খেলায় ছিল না কোন গতি এবং পরিকল্পনা। অপর দিকে প্রথমার্ধে দুই গোল করে বেশ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা এবং সে ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হয় দ্বিতীয়ার্ধেও। আর্জেন্টিনা তাদের গোল ধরে রাখার লক্ষ্যে ডি মারিয়াকে তুলে মাঠে নামায় ডিফেন্ডার অ্যাকুনাকে। আগে থেকেই ফ্রান্সের আক্রমনভাগ ছিল অকার্যকর। আর্জেন্টিনা রক্ষণভাগে শক্তি বাড়ানোয় ফ্রান্সের ঘুরে দাড়ানোর কোন সুযোগই ছিল না। ফ্রান্স কোচ শেষ চেষ্টা হিসেবে গ্রিজম্যান ও হার্নান্ডেজকে তুলে মাঠে নামান কোম্যান ও কামাভিঙ্গাকে। এ সময় ফ্রান্স কিছুটা প্রাধান বিস্তার করলে আর্জেন্টিনা খেলার গতি কমিয়ে দেয়ার কৌশল নেয়। মূলত প্রথমার্ধে দুই গোল খাওয়ার পর আর ফ্রান্সের খেলোয়াড়দের খেলা ছিল আশাহীন। অবশ্য ৭৮ মিনিটে ওটামেন্ডি মুয়ানিকে টেনে ফেলে দিয়ে একটি পেনাল্টি উপহার দেন ফ্রান্সকে। পেনাল্টি থেকে গোল করে এমবাপ্পে ম্যাচে উত্তেজনা ফেরান। এর দুই মিনিট পরই এমবাপ্পে আরেকটি গোল করে ম্যাচে বিস্ময়করভাবে সমতা ফেরান। এ গোলের মাধ্যমে এমবাপ্পে গোল সংখ্যায় ছাড়িয়ে যান মেসিকে। তার গোল সংখ্যা হয়ে যায় ৭টি। ২-২ গোলে সমতা ফেরানোর পর ফ্রান্সের খেলোয়াড়রা আর্জেন্টিনাকে চেপে ধরে। ম্যাচে বেশীরভাগ সময় দাপট বজায় রাখা আর্জেন্টিনা উল্টো চাপের মধ্যে পড়ে যায়। অবশ্য ইনজুরি টাইমে মেসি দারুন একটি শট মেরেছিলেন, কিন্তু সেটি বাচিয়ে দেন গোলরক্ষক লরিস। নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ গোলে শেষ হলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়ের ইনজুরি টাইমে দুইবার গোলে শট নিয়েও গোল পায়নি আর্জেন্টিনা। লাওতারো মার্টিনেজের শট বাচিয়ে দেন উপামেকানো। ফিরতি বলে শট নিলে সেটি চলে যায় বাইরে। লাওতারো শেষ সময়েও সুযোগ পেয়ে বাইরে মারেন। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে আর্জেন্টিনা গোল করে এগিয়ে যায়। এ গোলটি করেন মেসি। এর ফলে তিনি আবার ছুয়ে ফেলেন এমবাপ্পেকে। তবে ১১৬ মিনিটে আবার পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। এবারো গোল করেন এমবাপ্পে। ১৯৬৬ সালের পর ফাইনালে হ্যাটট্রিক করা প্রথম খেলোয়াড় হলেন এমবাপ্পে। মন্টিয়েলের হাতে বল লাগলে পেনাল্টিটি পেয়েছিল ফ্রান্স। খেলা ৩-৩ গোলে ড্র হওয়ায় খেলার ফল নিস্পত্তি হয় টাইব্রেকারে। তাতে শেষ হাসি হাসেন মেসিরাই।

ছবি

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলো নেপাল-ওমান

ছবি

জাদরানের জরিমানা

ছবি

যুব বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনা-মরক্কো

ছবি

শেষ হলো জাতীয় স্কোয়াশ

ছবি

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের রিজিওনাল স্পন্সর ওয়ালটন

ছবি

ওয়ানডে দলে ফিরলেন সৌম্য, নতুন মুখ অঙ্কন

ছবি

সেমিফাইনালে থামলেন জারিফ

ছবি

আজ চাইনিজ তাইপের মুখোমুখি বাংলাদেশ

ছবি

নভেম্বরে ঢাকায় নারী কাবাডির বিশ্বকাপ

ছবি

শেরেবাংলার উইকেট দেখে স্যামির মুখে চওড়া হাসি

টিভিতে আজকের খেলা

ছবি

দেশে ফিরলেন স্কেটাররা

ছবি

বিওএ’র নির্বাচন ২৯ নভেম্বর

ছবি

বিমানবন্দরে দুয়ো ধ্বনি শুনলেন ক্রিকেটাররা

ছবি

‘নভেম্বরে ঢাকায় ভারত ম্যাচ হবে একটা ঐতিহাসিক দ্বৈরথ’

ছবি

নোমানের ঘূর্ণিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ৯৩ রানে পরাজিত

ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে দাবার পুরস্কার বিতরণ

ছবি

এবারের বিপিএলের চ্যাম্পিয়নরা পাবে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা

ছবি

বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড, অপেক্ষা বাড়লো পর্তুগালের

ছবি

তিন স্বাগতিকসহ টিকেট পেল ২৮ দেশ

টিভিতে আজকের খেলা

ছবি

পিছিয়ে পরেও হংকংয়ের মাঠে বাংলাদেশের ড্র

ছবি

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লড়াকু পারফরম্যান্সে গর্বিত জ্যোতি

ছবি

বাংলাদেশের জয় আটকে দিলো জর্ডান

ছবি

জয়ের জন্য প্রোটিয়ার ২২৬ রান ও পাকিস্তানের ৮ উইকেট দরকার

ছবি

কামাল স্টেডিয়ামে নতুন কৃত্রিম টার্ফ উদ্বোধন

ছবি

সিরিজ জিতে বিশ্ব রেকর্ড স্পর্শ করলো ভারত

ছবি

দুই গোলে এগিয়েও জাপানের কাছে ব্রাজিলের প্রথম হার

টিভিতে আজকের খেলা

ছবি

বাংলাদেশ-হংকং ফিরতি ম্যাচ মঙ্গলবার

ছবি

হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের

ছবি

মিরাজদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে যা বললো বিসিবি

ছবি

বিশ্বকাপের দ্বারপ্রান্তে নেদারল্যান্ডস

ছবি

হংকং চায়নার মাঠে ৩ পয়েন্ট চান জামাল

ছবি

ক্যাম্পবেল-হোপের সেঞ্চুরিতে ইনিংস হার এড়ালো উইন্ডিজ দিল্লি টেস্ট

ছবি

জাতীয় স্কোয়াশ চ্যাম্পিয়নশিপ উদ্বোধন

tab

কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল

মেসি এবং আর্জেন্টিনার স্বপ্নপূরণ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

সারাবিশ্বের শতকোটি সমর্থকের মনের আশা পূর্ণ করে ৩৬ বছর পর আবার বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। রবিবার লুসাইল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে আর্জেন্টিনা টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে পরাজিত করে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা অমীমাংসিত থাকায় টাইব্রেকারে ফল নির্ধারিত হয়। আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক মার্টিনেজ ফিরিয়ে দেন কোম্যানের শট। চুয়ামেনি মারেন বাইরে। টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করেন মেসি, লাওতারো মার্টিনেজ, পারেদেস এবং মন্টিয়েল এবং ফ্রান্সের হয়ে গোল করেন এমবাপ্পে, মুয়ানি ।

নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ গোলে এবং অতিরিক্ত সময়ের খেলা ৩-৩ গোলে ড্র হয়।

আর্জেন্টিনা শুরু থেকে দারুন খেলে ম্যাচে এগিয়ে যায়। তারা প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ায় মনে হয়েছিল জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে এবং আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতায় লিওনেল মেসির স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কিন্তু ফ্রান্স সহজে ছেড়ে দেয়ার দল না। তারা দুই মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোল পরিশোধ করে ম্যাচে সমতা ফেরায়। অতিরিক্ত সময়ে মেসির গোলে আবার এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু এমবাপ্পে আবারো গোল করলে ম্যাচে ৩-৩ গোলে সমতা ফেরে।

সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মেসি এর আগে ফুটবলের সব ট্রফি জিতলেও বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। এবার সেই স্বপ্নের ট্রফি তিনি জিতলেন বিশ্বকাপে নিজের শেষ ম্যাচে। মেসি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন ফাইনালই হবে তার বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ। শেষ ম্যাচটি তিনি ট্রফি জিতে চির স্মরনীয় করে রাখলেন। ৩৫ বছর বয়সেও তিনি খেলেছেন অসাধারণ। দলকে সামনে থেকে দিয়েছেন নেতৃত্ব। করেছেন ৭টি গোল। হয়েছেন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ও। তবে ৮টি গোল করে গোল্ডেন বুট জিতেছেন এমবাপ্পে।

ফাইনালের আগে ফ্রান্স শিবিরে ভাইরাস জ্বরে হানা দিয়েছিল। কয়েকজন খেয়োয়াড় এতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। জ্বর থেকে সেরে উঠলেও তাদের ফিটনেসে ঘাটতি ছিল। তা দেখা গেছে খেলার মাঠে। ফাইনালে ফ্রান্সের এমন হতাশাজনক পারফরমেন্স সবাইকে মনে করিয়ে দেয় ১৯৯৮ সালের ফাইনালে ব্রাজিলের খেলার কথা। সে ম্যাচের আগে তারকা খেলোয়াড় রহস্যজনকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। যার প্রভাব ছিল পুরো দলের উপর। তারা হতাশাজনকভাবে ফ্রান্সের কাছে হেরেছিল ৩-০ গোলে।

ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় র‌্যারিয়ট, অলিভার জিরু এবং রাফায়েল ভারানের খেলা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু সব সংশয় দূর করে এ তিন জনকে একাদশে রাখেন ফরাসী কোচ। একাদশে পরিবর্তন আসে আর্জেন্টিনা দলেও। পুরো ফিট হওয়ায় একাদশে জায়গা করে নেন অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার ডি মারিয়া। তবে শেষ সময়ে একাদশ থেকে ছিটকে যান মার্কোস অ্যাকুনা। টাগলিফিয়াকো রাখা হয় একাদশে। পরিবর্তন আনা হয় ফর্মেশনেও। ৫-৩-২ ফর্মেশনের বদলে দল সাজান ৪-৪-২ এ। ফ্রান্স একাদশ সাজায় ৪-৩-৩ ফর্মেশনে। জিরুকে স্ট্রাইকার রেখে উইঙ্গার হিসেবে খেলানো হয় ডেম্বেলে এবং এমবাপ্পেকে।

ফর্মেশনের কারণে মিডফিল্ডে আর্জেন্টিনার প্রভাব থাকার কথা। তাছাড়া পুরো গ্যালারি জুড়েই ছিল আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। মাঠের পরিবেশ দেখে মনেই হয়েছে খেলাটি হচ্ছে আর্জেন্টিনার কোন মাঠে এবং আর্জেন্টিনার চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা ছিল কেবলই আনুষ্ঠানিকতা।

ম্যাচ শুরু হওয়ার পর উভয় দলের খেলোয়াড়দের বেশ ¯œায়ুর চাপে ভুগতে দেখা যায়। ফলে ঠিকমতো পাস দেয়া কিংবা বল রিভিস করতে সমস্যা হচ্ছিল। ধীরে ধীরে এ অবস্থা কাটিয়ে আর্জেন্টিনা প্রথম শট মারতে সক্ষম হয় পোস্ট লক্ষ্য করে। তবে ম্যাক অ্যালিস্টারের দূর পাল্লার শট সরাসরি চলে যায় ফরাসী গোলরক্ষকের হাতে। প্রথম ১৫ মিনিট আর্জেন্টিনা বেশ দাপটের সাথেই খেলতে থাকে। এর পর ধীরে ধীরে নিজেদের গুছিয়ে নেয় ফ্রান্স। ২২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে মেসি গোল করলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ডি মারিয়ার কাছ থেকে ডেম্বেল বল কেড়ে নিতে গেলে পড়ে যান ডি মারিয়া এবং রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। কাকতালীয় হলেও প্রায় প্রত্যেক ম্যাচেই আর্জেন্টিনা একটি করে পেনাল্টি পেয়েছে। তবে ৩৫ মিনিটে করা দ্বিতীয় গোল নিয়ে কোন সংশয় ছিল না। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোলটি করেন ডি মারিয়া। ম্যাক অ্যালিস্টারের পাস থেকে ডি মারিয়া করেন গোলটি। প্রথমার্ধের খেলার দশ মিনিট বাকি থাকতে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ায় তাদের ট্রফি জেতা বলতে গেলে নিশ্চিত হয়ে যায়।

ফ্রান্সের জিরু এবং ডেম্বেলে সুবিধা করতে না পারায় প্রথমার্ধেই এ দুজনকে তুলে নেন কোচ। মাঠে নামান মার্কাস থুরাম এবং কোলো মুয়ানিকে। এর ফলে আর্জেন্টিনার একক আধিপত্য কিছুটা কমে। তবে প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগের কঠিন কোন পরীক্ষা নিতে পারেনি ফ্রান্স। এমবাপ্পের কাছে কোন বলই জোগান দিতে পারেনি।

প্রথমার্ধে দুই গোল খাওয়ার পর মানসিকভাবে বলতে গেলে ভেঙ্গে পড়ে ফ্রান্সের খেলোয়াড়রা। তাই তাদের খেলায় ছিল না কোন গতি এবং পরিকল্পনা। অপর দিকে প্রথমার্ধে দুই গোল করে বেশ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা এবং সে ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হয় দ্বিতীয়ার্ধেও। আর্জেন্টিনা তাদের গোল ধরে রাখার লক্ষ্যে ডি মারিয়াকে তুলে মাঠে নামায় ডিফেন্ডার অ্যাকুনাকে। আগে থেকেই ফ্রান্সের আক্রমনভাগ ছিল অকার্যকর। আর্জেন্টিনা রক্ষণভাগে শক্তি বাড়ানোয় ফ্রান্সের ঘুরে দাড়ানোর কোন সুযোগই ছিল না। ফ্রান্স কোচ শেষ চেষ্টা হিসেবে গ্রিজম্যান ও হার্নান্ডেজকে তুলে মাঠে নামান কোম্যান ও কামাভিঙ্গাকে। এ সময় ফ্রান্স কিছুটা প্রাধান বিস্তার করলে আর্জেন্টিনা খেলার গতি কমিয়ে দেয়ার কৌশল নেয়। মূলত প্রথমার্ধে দুই গোল খাওয়ার পর আর ফ্রান্সের খেলোয়াড়দের খেলা ছিল আশাহীন। অবশ্য ৭৮ মিনিটে ওটামেন্ডি মুয়ানিকে টেনে ফেলে দিয়ে একটি পেনাল্টি উপহার দেন ফ্রান্সকে। পেনাল্টি থেকে গোল করে এমবাপ্পে ম্যাচে উত্তেজনা ফেরান। এর দুই মিনিট পরই এমবাপ্পে আরেকটি গোল করে ম্যাচে বিস্ময়করভাবে সমতা ফেরান। এ গোলের মাধ্যমে এমবাপ্পে গোল সংখ্যায় ছাড়িয়ে যান মেসিকে। তার গোল সংখ্যা হয়ে যায় ৭টি। ২-২ গোলে সমতা ফেরানোর পর ফ্রান্সের খেলোয়াড়রা আর্জেন্টিনাকে চেপে ধরে। ম্যাচে বেশীরভাগ সময় দাপট বজায় রাখা আর্জেন্টিনা উল্টো চাপের মধ্যে পড়ে যায়। অবশ্য ইনজুরি টাইমে মেসি দারুন একটি শট মেরেছিলেন, কিন্তু সেটি বাচিয়ে দেন গোলরক্ষক লরিস। নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ গোলে শেষ হলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়ের ইনজুরি টাইমে দুইবার গোলে শট নিয়েও গোল পায়নি আর্জেন্টিনা। লাওতারো মার্টিনেজের শট বাচিয়ে দেন উপামেকানো। ফিরতি বলে শট নিলে সেটি চলে যায় বাইরে। লাওতারো শেষ সময়েও সুযোগ পেয়ে বাইরে মারেন। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে আর্জেন্টিনা গোল করে এগিয়ে যায়। এ গোলটি করেন মেসি। এর ফলে তিনি আবার ছুয়ে ফেলেন এমবাপ্পেকে। তবে ১১৬ মিনিটে আবার পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। এবারো গোল করেন এমবাপ্পে। ১৯৬৬ সালের পর ফাইনালে হ্যাটট্রিক করা প্রথম খেলোয়াড় হলেন এমবাপ্পে। মন্টিয়েলের হাতে বল লাগলে পেনাল্টিটি পেয়েছিল ফ্রান্স। খেলা ৩-৩ গোলে ড্র হওয়ায় খেলার ফল নিস্পত্তি হয় টাইব্রেকারে। তাতে শেষ হাসি হাসেন মেসিরাই।

back to top