image

ফখর জামানের ঝড়ো শতকে সেমির লড়ায়ে টিকে রইলো পাকিস্তান

স্কোর : নিউজিল্যান্ড ৫০ ওভারে ৪০১/৬; পাকিস্তান ২৫.৩ ওভারে ২০০/১। ফল : ডিএলএস মেথডে পাকিস্তান ২১ রানে জয়ী

শনিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৩
ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

ওপেনার ফখর জামানের ঝড়ো শতকে বৃষ্টি বিঘিœত ম্যাচে ডিএলএস মেথডে নিউজিল্যান্ডকে ২১ রানে হারিয়ে এবারের বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখলো পাকিস্তান।

শনিবার আহমেদাবাদে কিউইদের ৪০১/৬ রানের জবাবে ২১.৩ ওভারে প্রথমবার বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় পাকিস্তানের সংগ্রহ ১ উইকেটে ১৬০ রান। পরে ডিএলমেথডে পাকিস্তান ম্যাচ জয়ের লক্ষ্য পায় ৪১ ওভারে ৩৪২।

২৫.৩ ওভারে ২০০/১ রান করার পর আবার বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে গেলে পাকিস্তানকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। সেসময় ফখর জামান ১২৬ (৮১ বল, ৮ চার, ১১ ছক্কা) ও অধিনায়ক বাবর আজম ৬৬ (৬৩ বল, ৬ চার, ২ ছয়) অপরাজিত ছিলেন।

এই জয়ে পাকিস্তান উঠে গেল ৫ম স্থানে। নিউজিল্যান্ড ৪র্থ স্থানে। ৮ খেলায় ৪ জয়ে দুই দলেরই পয়েন্ট সমান আট।

নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে কিউইদের দেয়া ৪০২ রানের পাহাড়সম লক্ষ্যে ব্যাট করছে পাকিস্তান। একে তো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার চাহিদা, সঙ্গে বিশাল রান তাড়ায় চ্যালেঞ্জÑ দুইয়ে মিলে ভীষণ চাপ অনুভূত হওয়া স্বাভাবিক। তবে সেসবের কোনো প্রভাব একদমই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না ফখরের ওপর। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানের ইনিংসের ২০ ওভার পূর্ণ হওয়ার আগেই সেঞ্চুরি করেন তিনি।

কিউই বাঁ-হাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের করা ২০তম ওভারের প্রথম বলে ৯৯ মিটার দীর্ঘ বিশাল একটি ছক্কা হাঁকান ফখর। এতে ব্যক্তিগত ৯৩ থেকে ৯৯ রানে পৌঁছে যান তিনি। পরের ডেলিভারিতে সিঙ্গেল নিয়ে স্পর্শ করেন তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগার, ৬৩ বলে।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিং পায় নিউজিল্যান্ড। রাচিন রবীন্দ্রর সেঞ্চুরি ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের ৯৫ রানের ওপর ভর করে নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেটে ৪০১ রানের পাহাড় গড়েছে নিউজিল্যান্ড। রবীন্দ্র ৯৪ বলে ১০৮ ও উইলিয়ামসন ৭৯ বলে ৯৫ রান করেন। দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্র ৬৫ বল খেলে ৬৮ রানের সূচনা এনে দেন।

কনওয়ের (৩৯ রান) বিদায়ে উইকেটে আসেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন। রবীন্দ্রকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের রানের চাকা সচল রাখেন তিনি। বিশ্বের সপ্তম ও নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ পঞ্চমবারের মতো অন্তত ৫০ রানের ইনিংস খেলে রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নিয়েছে রবীন্দ্র।

রবীন্দ্র ও উইলিয়ামসনের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে ২৯তম ওভারেই ২০০ রান পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। ৩৪তম ওভারে ওয়ানডেতে তৃতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৮৭ বল খেলা রবীন্দ্র। ক্যারিয়ারের সবগুলো সেঞ্চুরিই এবারের বিশ্বকাপে করেছেন তিনি। এর আগে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শতক করেছিলেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ তিন সেঞ্চুরির মালিক এখন তিনি। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরিতে ভারতের মাস্টার ব্লাস্টার শচীন টেন্ডুলকারকে টপকে রেকর্ড গড়েছেন রবীন্দ্র। ২২ বছর বয়সে বিশ্বকাপে ২টি সেঞ্চুরি করেছিলেন টেন্ডুলকার। ২৩ বয়স বয়সেই ৩টি সেঞ্চুরির মালিক হয়েছেন রবীন্দ্র।

রবীন্দ্রর সেঞ্চুরির পর উইলিয়ামসনের শতকের অপেক্ষায় ছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু হতাশ হতে হয়েছে তাকে। নব্বইয়ের ঘরে থাকতে ৩৫তম ওভারে স্পিনার ইফতিখার আহমেদকে ছক্কা মারতে গিয়ে লং-অফে ক্যাচ দিলে ১০টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৯ বলে ৯৫ রানে উইলিয়ামসনের বিদায় ঘটে। এই ইনিংস খেলার পথে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক হন উইলিয়ামসন। ২৫ ম্যাচে উইলিয়ামসন করেছেন ১০৮৪ রান। ৩৩ ম্যাচে ১০৭৫ রান নিয়ে দ্বিতীয়স্থানে নেমে গেছেন সাবেক অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিং।

দ্বিতীয় উইকেটে রবীন্দ্র-উইলিয়ামসন ১৪২ বলে ১৮০ রান যোগ করেন। বিশ্বকাপে যেকোনো উইকেটে নিউজিল্যান্ডের এটি দ্বিতীয় ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি। ১৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯৪ বলে ১০৮ রান করা রবীন্দ্র। এ ইনিংসের মাধ্য এবারের আসরে এ পর্যন্ত ৮ ইনিংসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫২৩ রান করলেন তিনি। এর মাধ্যমে টেন্ডুলকারের রেকর্ড স্পর্শ করলেন তিনি। ২৫ বছরের নীচে বিশ্বকাপের এক আসরে কোনো খেলোয়াড় হিসেবে সর্বোচ্চ রানে টেন্ডুলকারের ৫২৩ রান স্পর্শ করেছেন রবীন্দ্র।

৩৬তম ওভারে দলীয় ২৬১ রানে রবীন্দ্র ফেরার পর ড্যারিল মিচেল ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৯ রান করেন। ৭ চারে ৩৯ রান করেন মার্ক চাপম্যান। চতুর্থ উইকেটে ৩২ বলে ৫৭ রান যোগ করে দলের রান ৩শ’তে নেন মিচেল-চাপম্যান।

ষষ্ঠ উইকেট ২৬ বলে ৪৩ রান যোগ করে নিউজিল্যান্ডের রান ৪শ’ পার করার পথ তৈরি করেন গ্লেন ফিলিপস ও মিচেল স্যান্টনার। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৫ বলে ৪১ রান করে ফিলিপস ফিরলেও, ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলে নিউজিল্যান্ডকে ৪০১ রানের বিশাল সংগ্রহ এনে দেন স্যান্টনার। এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় দল হিসেবে ৪শ’ রান করলো নিউজিল্যান্ড। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দিল্লিতে ৪২৮/৫ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডেতে দ্বিতীয় ও বিশ্বকাপে এটি নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ দলীয় রান। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো দলের এটিই সর্বোচ্চ ও ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান।

নিউজিল্যান্ডের রান বন্যার ইনিংসে ওয়াসিম ৬০ রানে ৩ উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন হাসান আলি-ইফতিখার ও হারিস রউফ।

৯০ রানে উইকেট শূন্য থাকেন আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬ শিকারী শাহিন শাহ আফ্রিদি। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের পক্ষে সবচেয়ে বাজে বোলিং ফিগারের রেকর্ড গড়লেন সদ্যই আইসিসি বোলিং র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষে ওঠা আফ্রিদি।

‘খেলা’ : আরও খবর

সম্প্রতি