চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ঘরের মাঠে এগিয়ে গিয়েও রেয়াল মাদ্রিদকে হেরেছে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে। পেপ গার্দিওলার দল জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। আর্সেনাল হারিয়েছে ক্লাব ব্রুজকে। আটকে গিয়েছে পিএসজি এবং নিউক্যাসল।
গতকাল বুধবার রাতে নিজেদের মাঠে এগিয়ে গিয়েও হেরে গেছে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে। ঘরের মাঠে টানা দু’টি ম্যাচ হারের পর চাপ আরও বেড়েছে কোচ জাবি আলোন্সোর ওপরে। যদিও ফুটবলারেরা কোচের পাশেই রয়েছেন। রেয়াল নেমেছিল দলের প্রথম সারির আট ফুটবলারকে ছাড়াই। তার মধ্যে ছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পেও। চোটের কারণে খেলতে পারেননি। ফর্মে থাকা সিটির বিপক্ষে কাজ এমনিতেই কঠিন ছিল। তবু ২৮ মিনিটে রদ্রিগোর গোলে এগিয়ে যায় রেয়াল। কিন্তু বিরতির আগেই সিটিকে এগিয়ে দেন নিকো ও’রিলি এবং আর্লিং হালান্ড। দ্বিতীয়ার্ধে আর গোল হয়নি। ম্যাচের পর কোচকে বিদ্রূপ করেন রেয়াল সমর্থকরা। জাবিকে কোচ করে আনার পর মৌসুমের শুরুটা ভালো হলেও ধীরে ধীরে রেয়ালের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, ড্রেসিংরুমের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন তিনি। ভিনিসিয়াসের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে। অনেক ফুটবলারই নাকি জাবির কোচিং পদ্ধতিতে খুশি নন। শেষ আট ম্যাচে মাত্র দু’টি জিতেছে রেয়াল। সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজও কোচের ওপর ক্ষুব্ধ।
তবে এখনই জাবিকে হয়তো হটানো হবে না। কোচের পাশে দাঁড়িয়েছেন ফুটবলাররা। গোলদাতা রদ্রিগো বলেছেন, ‘জানি দল এবং কোচের কাছে এটা কঠিন সময়। কাক্সিক্ষত ফলাফল হচ্ছে না। তবে আমি কোচের পাশেই আছি। উনি আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এক হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।’
একই কথা বলেছেন জুড বেলিংহ্যাম। ইংলিশ ফুটবলারের কথায়, ‘বাইরের আওয়াজে কোনো লাভ হবে না। আশা করি ড্রেসিংরুমেই ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলতে পারবো। আলোচনা করে দেখবো কোথায় কোথায় ভুল হচ্ছে।’
রেয়াল কোচ নিজে চাকরি হারানোর ভয় পাচ্ছেন? স্পেনীয় জাবির জবাব, ‘আপাতত পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। আমার কাছে সবার আগে রেয়াল মাদ্রিদ। দলের ফুটবলারদের কীভাবে সাহায্য করতে পারি, সেটা ভাবাই আমার কাজ। চাকরি নিয়ে ভাবার দরকার নেই।’
রদ্রিগোর নৈপুণ্যে ২৮তম মিনিটে এগিয়ে যায় রেয়াল। প্রতি-আক্রমণে জুড বেলিংহ্যামের কাছ থেকে বল পেয়ে, দূরের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেরি করায় শরীরের বেশ কাছ দিয়ে যাওয়া বলের নাগাল পাননি সিটি গোলরক্ষক জানলুইজি দোন্নারুম্মা।
৩২ ম্যাচ পর রেয়ালের হয়ে গোল করলেন রদ্রিগো। ভীষণ চাপে থাকা দল এবং তার নিজের জন্যও স্বস্তি হয়ে এলো এই গোল। তাদের এগিয়ে যাওয়ার স্বস্তি অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। থিবো কোর্তোয়ার বিরল ভুলে ৩৫তম মিনিটে সমতা ফেরায় সিটি। হায়ান শের্কির কর্নারে ইয়োশকো ভার্দিওলের হেড গ্লাভসে রাখতে পারেননি রেয়াল গোলরক্ষক। সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা নিকো ও’রাইলি অনায়াসে খুঁজে নেন ঠিকানা। চ্যাম্পিয়ন লীগে এটা তার প্রথম গোল।
৪৩তম মিনিটে হলান্ডের সফল স্পট কিকে এগিয়ে যায় সিটি। আগেভাগেই ডাইভ দেন কোর্তোয়া, অনায়াসে অন্য পাশ দিয়ে জাল খুঁজে নেন নরওয়ের স্ট্রাইকার। তাকেই আন্টোনিও রুডিগার ফাউল করায় পেনাল্টি পায় সফরকারীরা। শুরুতে ফাউল ধরেননি রেফারি, ভিএআর মনিটরে রিপ্লে দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান তিনি।
বিরতির পরও চাপ ধরে রেখে সুযোগ তৈরি করে রেয়াল। কিন্তু দোন্নারুম্মার পরীক্ষাই নিতে পারেনি তারা। তাতে রেয়ালের মাঠে দ্বিতীয় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সিটি।
গতকাল বুধবার রাতে অন্য ম্যাচে আর্সেনাল ৩-০ হারিয়েছে ক্লাব ব্রুজকে। নোনি মাদুয়েকে জোড়া গোল করেছেন। অপর গোল গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লির। ছয় ম্যাচ খেলে প্রতিটিতেই জিতেছে তারা। ফলে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত।
বিলবাওয়ে গিয়ে অ্যাথলেটিক ক্লাবের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছে পিএসজি। তবে ৬ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে তারা তৃতীয় স্থানেই রয়েছে। নাপোলি ০-২ হেরেছে বেনফিকার কাছে। জুভেন্টাস ২-০ হারিয়েছে পাফোসকে। নিউক্যাসল ২-২ ড্র করেছে বায়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে।
৬ ম্যাচে চার জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে আছে রেয়াল। তাদের সমান পয়েন্ট আরও তিনটি দলের। ৬ ম্যাচে চার জয় ও এক ড্রয়ে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে চারে সিটি। সমান পয়েন্ট নিয়ে তাদের চেয়ে এগিয়ে পিএসজি, পিছিয়ে আতালান্তা।
৬ ম্যাচে টানা ৬ জয় পাওয়া আর্সেনাল ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে। ১৫ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে বায়ার্ন মিউনিখ।
বিরতির পর সমতা ফেরানোর খুব ভালো সুযোগ হাতছাড়া করেন বেলিংহ্যাম। বিপজ্জনক জায়গায় বল পেয়েও শট লক্ষ্য রাখতে পারেননি তিনি। ভালো জায়গায় থাকা কোনো সতীর্থকে বল না বাড়িয়ে চিপ শটে গোলের চেষ্টায় মারেন ক্রসবারের বেশ ওপর দিয়ে।
পরের মিনিটে শের্কির শটে তালগোল পাকালেও শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে নেন কোর্তোয়া। কয়েক সেকেন্ড পর অন্যপ্রান্তে সুযোগ পান রদ্রিগো। তিনিও শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে দারুণ জমে ওঠা ম্যাচে ৬১তম মিনিটে জেরেমি ডোকুর বাঁকানো শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন কোর্তোয়া।
৭৮তম মিনিটে খুব ভালো সুযোগ নষ্ট করেন ভিনিসিউস। রদ্রিগোর চমৎকার ক্রসে খুব কাছ থেকে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি। দুই মিনিট পর তিনি নষ্ট করেন এর চেয়েও ভালো সুযোগ। আর্দা গিলেরের কর্নারে একটুর জন্য হাত ছোঁয়াতে পারেননি দোন্নারুম্মা। দূরের পোস্টে অরক্ষিত ভিনিসিউস তাড়াহুড়ায় ঠিকমতো শটই করতে পারেননি।
বদলি নেমে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিলেন এন্দ্রিক। ৮৫তম মিনিটে তার হেড সিটি গোলরক্ষকের হাত ছুঁয়ে ক্রসবারে লেগে বাইরে চলে যায়!
বিরতির পরও চাপ ধরে রেখে সুযোগ তৈরি করে রেয়াল। কিন্তু দোন্নারুম্মার পরীক্ষাই নিতে পারেনি তারা। তাতে রেয়ালের মাঠে দ্বিতীয় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সিটি।