এক পাশে উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগের সোনালি ট্রফির উন্মোচন অনুষ্ঠান। টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাওয়া ১২ দলের অধিনায়করা হাসিমুখে অংশ নিচ্ছেন ফটোসেশনে। একটু দূরেই পরিস্থিতি ঠিক উল্টো। একরাশ অনিশ্চয়তা, হতাশা নিয়ে অপেক্ষা করছেন তাদেরই কিছু সতীর্থ। বিসিবির সঙ্গে ক্লাবের দ্বন্দ্বে খেলার সুযোগ না পাওয়া ক্রিকেটাররা এসেছেন কিছু দাবি নিয়ে।
বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলামের অনুপস্থিতিতে সহ-সভাপতি বরাবর চারটি দাবিতে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগ বর্জন করা ক্লাবগুলোর ক্রিকেটাররা। তাদের সঙ্গে ছিলেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগে খেলা ক্রিকেটাররাও।
মিরপুরে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমি ভবনের সামনের বিপরীতমুখী এ চিত্রে পরিষ্কার ফুটে উঠলো বিসিবি নির্বাচনকে ঘিরে বর্তমান পরিচালনা পরিষদের সঙ্গে ঢাকার ক্লাব সংগঠকদের একটা অংশের চলমান দ্বন্দ্বের প্রভাব কতটা গভীর। ট্রফি উন্মোচনের আগেই বিসিবি প্রাঙ্গণে জড়ো হন প্রায় শতেক ক্রিকেটার। হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘ঢাকা লীগ বন্ধ কেন’, ‘মৌসুম যায় ক্রিকেট কই’, ‘৮৮০ জন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার কই।’ বিসিবি ভবনে প্রবেশের সময় বাধার মুখে পড়েন তারা। পরে ছোট একটা প্রতিনিধিদল ভেতরে যাওয়ার অনুমতি পায়। তারা প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরি ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীনের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি জমা দেন।
পরে সাংবাদিকদের সামনে লিখিত দাবিগুলো পড়ে শোনান গত মৌসুমে খেলাঘরের হয়ে খেলা ক্রিকেটার আসাদুজ্জামান প্রিন্স। স্মারকলিপিতে চারটি মূল দাবি তুলে ধরেন তিনি। ঢাকা (প্রথম বিভাগ ক্রিকেট) লীগের জন্য একটি চূড়ান্ত, স্থির ও পরিবর্তনহীন সময়সূচি ঘোষণা। ক্লাব ও বিসিবির মধ্যে চলমান সমস্যার দ্রুত সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া।
ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লীগ পরিচালনায় একটি স্থিতিশীল ও পেশাদার কাঠামো বজায় রাখা। একই সঙ্গে ২০ দল নিয়ে লীগ আয়োজন সম্ভব না হলে, ২০ দলের সব খেলোয়াড়কে অন্তর্ভুক্ত করে পর্যাপ্ত আর্থিক ব্যবস্থাপনায় একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট চালু এবং প্রতি বছর সেটি আয়োজন করা।
জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ক্রিকেটে ম্যাচ ফি ‘খুবই নিম্নমানের।’ তাই ম্যাচ ফি ও প্রাত্যহিক ভাতা বাড়ানোর অনুরোধ করেন ক্রিকেটাররা। এই সময়ে বিসিবিতেই ছিলেন ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভাপতি মোহাম্মদ মিঠুন ও সদস্য শামসুর রহমান শুভ। বাইরে থেকে পুরো ঘটনা দেখলেও তারা একবারের জন্যও সামনে আসেননি। প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগের ক্রিকেটারদের এই আন্দোলনে কোয়াব সরাসরি কোনো ভূমিকা এখন পর্যন্ত নেয়নি।
কোয়াবের নীরব ভূমিকায় আসাদুজ্জামান হতাশা প্রকাশ করলেন।
‘কোয়াব হয়তো বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলা ছাড়াই বিষয়গুলো কীভাবে শেষ করা যায়, সেই পথটাই বারবার বেছে নিতে চেয়েছে। কিন্তু আমরা এখানে এসেছি দৃঢ় অবস্থান নিয়ে।’
‘ক্রিকেটারদের স্বার্থ রক্ষায় কোয়াব কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারায়, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের ক্রিকেটারদের জন্য নতুন একটি সংগঠন গঠনের বিষয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।’
এই পরিস্থিতির মধ্যেই রোববার,(১৪ ডিসেম্বর ২০২৫) লীগ শুরুর কথা জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিসিবি। লীগ কমিটি (সিসিডিএম)-এর সভাপতি আদনান রহমান দীপন জানিয়েছেন, অংশ নিতে না চাওয়া ক্লাবগুলোর জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন তারা।