image

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে বাংলাদেশি বোলারদের দাপট

মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

বিশ্বের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের যে কজন ক্রিকেটার খেলছেন, তাদের সবাই বিশেষজ্ঞ বোলার। ব্যাটারদের সেখানে উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এই চিত্রই যেন বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রকৃত বাস্তবতাকে তুলে ধরছে।

অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লীগে (বিবিএল) অভিষেক মৌসুমে হোবার্ট হারিকেনসের হয়ে নজর কাড়ছেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত আইএলটি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দুই প্রধান পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ খেলছেন যথাক্রমে দুবাই ক্যাপিটালস ও শারজাহ ওয়ারিয়র্সের হয়ে। জাতীয় দলের বর্তমান সেটআপে না থাকলেও আইএলটি-টোয়েন্টিতে এমআই এমিরেটসের হয়ে খেলছেন সাকিব আল হাসান। তবে ৩৮ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারের ব্যাটিং সামর্র্থ্য সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটাই কমে যাওয়ায়, তাকে মূলত বোলার হিসেবেই ব্যবহার করছে তার দল।

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা ঐতিহাসিকভাবে খুব একটা চাহিদাসম্পন্ন ছিলেন না। সাকিব ও মোস্তাফিজ ছাড়া অন্যদের প্রতি বড় লীগগুলোর আগ্রহ খুবই সীমিত ছিল। তবে একই সময়ে একাধিক লীগে তিনজন বাংলাদেশি বোলারের উপস্থিতি অন্তত বোলিং বিভাগে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

পারফরম্যান্সের দিক থেকেও তারা আশাব্যঞ্জক। এর আগে পিএসএলে লাহোর কালান্দার্সের হয়ে খেলা রিশাদ বিবিএলে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচে তিন উইকেট নিয়েছেন ৭.২০ ইকোনমি রেটে। তাসকিন চার ম্যাচে শিকার করেছেন ছয় উইকেট। আর মোস্তাফিজ সাত ইনিংসে ১৪ উইকেট নিয়ে আইএলটি-টোয়েন্টির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।

গত রোববার গালফ জায়ান্টসের বিপক্ষে ৩৪ রানে তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন মোস্তাফিজ। একই দিনে ডেজার্ট ভাইপার্সের বিপক্ষে কম রান হওয়া ম্যাচে ১/১৪ বোলিংয়ের সঙ্গে অপরাজিত ১৭ রান করে ম্যাচসেরা হন সাকিব।

এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ আইপিএলেও বাংলাদেশি বোলারদের প্রতি আগ্রহ দেখা গেছে। সাম্প্রতিক আইপিএল মিনি নিলামের চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা পেয়েছিলেন সাতজন বাংলাদেশি ক্রিকেটার, সবাই ছিলেন বিশেষজ্ঞ বোলার। তবে দল পেয়েছেন কেবল মোস্তাফিজুর রহমান, যিনি দরযুদ্ধে ৯.২০ কোটি রুপিতে কলকাতা নাইট রাইডার্সে যোগ দেন।

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে বাংলাদেশি বোলারদের প্রতি বাড়তি আগ্রহ আর ব্যাটারদের প্রতি অনাগ্রহ কাকতালীয় নয়। বরং এটি দেশের বর্তমান ক্রিকেট কাঠামোরই প্রতিফলন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ বেশ ভঙ্গুর, কোনো পজিশনেই স্থায়িত্ব দেখা যাচ্ছে না। বিপরীতে বোলিং বিভাগে সীমাবদ্ধতা থাকলেও পারফরম্যান্স তুলনামূলকভাবে ধারাবাহিক।

বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলো নিয়মিতভাবেই প্রতিভার সন্ধানে থাকে, টেস্ট খেলুড়ে দেশ থেকে শুরু করে সহযোগী দেশ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে শুরু করে ঘরোয়া অঙ্গন পর্যন্ত। সেখানে জাতীয় পরিচয়ের চেয়ে দক্ষতাই মুখ্য। ফলে বড় লীগে সুযোগ পাওয়া মানেই সংক্ষিপ্ত সংস্করণে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগে বোলারদের এই উত্থান একদিকে যেমন শক্তিশালী বোলিং ইউনিটের স্বীকৃতি, অন্যদিকে ব্যাটারদের জন্য তা স্পষ্ট বার্তা, বিশ্বমানের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে ব্যাটিং বিভাগে দ্রুত ও গভীর সংস্কার জরুরি।

সম্প্রতি