অস্ট্রেলিয়া সিরিজ জিতে যাওয়ার পরেও গতকাল মেলবোর্নে ‘বক্সিং ডে’ টেস্টের প্রথম দিন ৯৩,৪৪২ জন দর্শক খেলা দেখলেন। অ্যাশেজের ইতিহাসে কোনো টেস্টে এক দিন এত দর্শক খেলা দেখতে আসেননি। প্রায় লাখো দর্শকের সামনে দাপট দেখালেন দু’দলের বোলারেরা। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ১৫২ রানে অল আউট হয় । স্বাগতিকদের বাগে পেয়েও সুবিধা করতে পারলো না ইংল্যান্ড। ব্যাটিং ব্যর্থতায় তারাও ১১০ রানে অল আউট। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া মাত্র এক ওভার ব্যাট করে ৪ রান তোলে। প্রথম দিনে শেষে ইংল্যান্ডের থেকে ৪৬ রানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম দিনের খেলা দেখে আলোচনা শুরু হয়েছে যে, এই টেস্টও না দু’দিনে শেষ হয়ে যায়।
পার্থে চলতি অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন পার্থে দু’দল মিলিয়ে ১৯ উইকেট পড়েছিল। মেলবোর্নে পড়ল ২০ উইকেট। দু’দলই অল আউট হলো। এর আগে ১৯০৯ সালে অ্যাশেজে এ মেলবোর্নেই এক দিনে ২০ উইকেট পড়েছিল। ১১৬ বছর পর আবার নজির হলো সেই মাঠেই।
গতকাল মেলবোর্নে টস জিতে প্রথমে বল করেন ইংরেজ অধিনায়ক বেন স্টোকস। তার সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত করেন বোলাররা। এই সিরিজে ইংল্যান্ডকে বার বার সমস্যায় ফেলা ট্রেভিস হেড আউট হন ১২ রানে। প্রথম চার ব্যাটারের কেউ রান পাননি। পঞ্চম উইকেটে উসমান খাজা ও অ্যালেক্স ক্যারেও বড় রান করতে পারেননি। খাজা ২৯ ও ক্যারে ২০ রান করেন। অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিন আরও একটি ম্যাচে ব্যর্থ। ১৭ রান করেন তিনি। পেসার মাইকেল নেসের সর্বাধিক ৩৫ রান করেন। তার ব্যাটে দেড়শো পার হয় অস্ট্রেলিয়ার। শেষ পর্যন্ত ৪৫.২ ওভারে ১৫২ রানে অল আউট হয়ে যান স্টিভ স্মিথেরা।
ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল জশ টং। ৪৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিলেন তিনি। গাস অ্যাটকিনসন নিলেন ২ উইকেট। ব্রাইডন কার্স ও অধিনায়ক স্টোকসের ঝুলিতে ১ করে উইকেট।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, ইংল্যান্ডেরও খেলতে সমস্যা হবে। শুরুতেই মিচেল স্টার্ক বুঝিয়ে দিলেন, ইংল্যান্ডের পেসারেরা যে কাজটা করেছেন, সেটা আরও ভালো ভাবে করতে পারেন তারা। বেন ডাকেটকে (২) আউট করে প্রথম ধাক্কা দেন তিনি। তার পর থেকে টপ অর্ডারের আসা-যাওয়া। জ্যাক ক্রলি (৫), জ্যাকব বেথেল (১) ও জো রুট (০) ব্যর্থ। ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটি নিজেদের মাঠে এত ভালো খেলে। রুট একের পর এক শতরান করেন। কিন্তু বিদেশের মাঠে তাদের ব্যাটিং অনেক প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। ঘরের মাঠে ফ্ল্যাট উইকেট বানিয়ে রানের পাহাড় গড়ে কি নিজেদেরই ক্ষতি করেছে তারা? চলতি অ্যাশেজ সিরিজ তো সেটাই দেখিয়ে দিচ্ছে।
১৬ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটেন হ্যারি ব্রুক। উইকেটে পড়ে থাকার চেষ্টা না করে বড় শট খেলা শুরু করেন তিনি। স্টার্ক হোক বা স্কট বোলান্ড, কাউকে রেহাই পাচ্ছিলেন না। কিন্তু কতক্ষণ টানবেন । ৪১ রান করে বোলান্ডের বলে আউট হয়ে ফেরেন ব্রুক। অধিনায়ক স্টোকস ১৬ রান করে নেসেরের শিকার হন।
অ্যাটকিনসন না থাকলে ইংল্যান্ডের ১০০ রানও হতো না। ন’নম্বরে নেমে ২৮ রান করেন তিনি। ফলে শেষ পর্যন্ত ১০০-র গণ্ডি টপকায় দল। মাত্র ২৯.৫ ওভারে ১১০ রানে অল আউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। ৩০ ওভারও যদি একটা দল খেলতে না পারে, তা হলে তারা টেস্ট জিতবে কী ভাবে? তা-ও আবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে? এই ইনিংস অধিনায়ক স্টোকস ও কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের উপর চাপ আরও বাড়িয়ে দিল।
অস্ট্রেলিয়ার পেসারেরাও নিজেদের মধ্যে ১০ উইকেট ভাগ কওে নেন। নেসের ৪, বোলান্ড ৩, স্টার্ক ২ ও ক্রিন ১ উইকেট নিলেন।
মেলবোর্নে নিয়মরক্ষার টেস্টেও ৯৩,৪৪২ দর্শক!
সিরিজের ফয়সালা আগেই হয়ে গিয়েছে। দুই টেস্ট বাকি থাকতেই অ্যাশেজ সিরিজ জিতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ফলে বাকি দুই টেস্ট নিয়মরক্ষার। কিন্তু সেই নিয়মরক্ষার টেস্টেই ভিড় জমালেন দর্শকরা। মেলবোর্নে ‘বক্সিং ডে’ টেস্টের প্রথম দিন রেকর্ড দর্শক খেলা দেখতে এলেন।
গতকাল মেলবোর্নে খেলা দেখতে এসেছিলেন ৯৩,৪৪২ জন দর্শক। খেলার শেষ দিকে জায়ান্ট স্ক্রিনে সেই সংখ্যা দেখাতেই উল্লাস শুরু করেন দর্শকেরা। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের রেকর্ড ভেঙে গিয়েছে। সেই ম্যাচ মেলবোর্নে বসে দেখেছিলেন ৯৩,০১৩ দর্শক। তার চেয়ে ৪০০-র বেশি দর্শক এ দিন এসেছিলেন মাঠে।
কেন এত দর্শক এসেছেন নিয়মরক্ষার ম্যাচ দেখতে? ধারাভাষ্যকাররা এই নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তাদের মতে, এই সিরিজ দেখে মনে হয়েছে ইংল্যান্ডকে চুনকাম করবে অস্ট্রেলিয়া। ঘরের মাঠে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এ ভাবে হার দেখতেই মাঠে এসেছেন তারা। অ্যাশেজের ইতিহাসে কোনো টেস্টে এত ভিড় হয়নি। এর আগে ২০১৩ সালে মেলবোর্নেই এক দিনে ৯১,১১২ দর্শক খেলা দেখতে এসেছিলেন। সেই রেকর্ড এ দিন ভেঙে গিয়েছে।
অপরাধ ও দুর্নীতি: লক্ষ্মীপুর নির্বাচন অফিসে আগুন লাগানোর ঘটনায় যুবক গ্রেপ্তার
অপরাধ ও দুর্নীতি: হাদি হত্যা: ফয়সালকে ভারতে পালাতে সহায়তাকারীসহ দুইজন কারাগারে
অর্থ-বাণিজ্য: শীতের সবজির দাম কমলেও বাড়তি মাছের দাম