image
ম্যাচ জয়ের পর ইংল্যান্ডের অপরাজিত দুই ব্যাটার হ্যারি ব্রুক ও জেমি স্মিথের শুভেচ্ছা বিনিময়

১৫ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাঠে টেস্ট জিতলো ইংল্যান্ড!

শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ স্পোর্টস ডেস্ক

১৫ বছরে ১৮ ম্যাচ পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জিতলো ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। শনিবার,(২৭ ডিসেম্বর ২০২৫) অ্যাশেজ সিরিজের চতুর্থ টেস্টের দ্বিতীয় দিন ইংল্যান্ড ৪ উইকেটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে।

২০১০-১১ সফরে শেষবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জিতেছিল ইংল্যান্ড। পরের তিন সফরে ১৫ টেস্টের মধ্যে ১৩টি হেরেছিল তারা। বাকি দুটি টেস্ট ড্র হয়েছিল।

চলতি সিরিজ আগেই হেরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। আশঙ্কা ছিল হোয়াইটওয়াশের। সেই লজ্জা থেকে মুক্তি পেলেন বেন স্টোকসরা। মেলবোর্নে দুদিনে অস্ট্রেলিয়াকে হারালেন তারা। ১৫ বছর পর আবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জিতলো ইংল্যান্ড। ১৮ টেস্ট শেষে এলো জয়।

মেলবোর্নের পিচে ১০ মিলিমিটার ঘাস রেখেছিল অস্ট্রেলিয়া। পরিকল্পনা ছিল মিচেল স্টার্কদের পেস আক্রমণ দিয়ে ইংল্যান্ডকে শেষ করে দেয়া। নিজেদের পাতা ফাঁদে নিজেরাই পা দিলেন স্টিভ স্মিথেরা। দুদিন মিলিয়ে পড়লো মোট ৩৬ উইকেট। তার মধ্যে প্রথম দিনই ২০ উইকেট পড়লো, যা গত ১১৬ বছরের অ্যাশেজ ইতিহাসে রেকর্ড। দুদিন চার ইনিংস মিলিয়ে রান হলো মোট ৫৭২। র্পা?থে প্রথম দিন ১৯ উইকেট পড়েছিল। কিন্তু সেই মাঠের থেকেও এই মাঠে ব্যাটারদের খেলতে বেশি সমস্যা হলো। দুদিন ধরে পেসারদের বল সুইং করলো। চতুর্থ ইনিংসে ইংরেজ ব্যাটাররা সাহসী ব্যাটিং করলেন। তারই ফসল পেল ইংল্যান্ড।

টস জিতে প্রথমে বোলিং করে ইংরেজ অধিনায়ক বেন স্টোকস। তার সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত করেন বোলাররা। এই সিরিজে ইংল্যান্ডকে বার বার সমস্যায় ফেলা ট্রেভিস হেড আউট হন ১২ রানে। প্রথম চার ব্যাটারের কেউ রান পাননি। পঞ্চম উইকেটে উসমান খাজা ও অ্যালেক্স ক্যারে ছোট জুটি বাঁধেন। কিন্তু তারাও বড় রান করতে পারেননি। খোয়াজা ২৯ ও ক্যারে ২০ রান করেন।

অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিন আরও একটি ম্যাচে ব্যর্থ। ১৭ রান করেন তিনি। পেসার মাইকেল নেসের দলের হয়ে সর্বাধিক ৩৫ রান করেন। তার ব্যাটে দেড়শ’ পার হয় অস্ট্রেলিয়ার। শেষ পর্যন্ত ৪৫.২ ওভারে ১৫২ রানে অল আউট হয়ে যান স্টিভ স্মিথরা।

ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল জশ টং। ৪৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন তিনি। অ্যাটকিনসন নেন ২ উইকেট। ব্রাইডন কার্স ও অধিনায়ক স্টোকসের ঝুলিতে ১ করে উইকেট।

অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, ইংল্যান্ডেরও খেলতে সমস্যা হবে। তার পরেও আশায় বুক বেঁধেছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু শুরুতেই মিচেল স্টার্ক বুঝিয়ে দিলেন, ইংল্যান্ডের পেসাররা যে কাজটা করেছেন, সেটা আরও ভালোভাবে করতে পারেন তারা। বেন ডাকেটকে (২) আউট করে প্রথম ধাক্কা দেন তিনি। তার পর থেকে টপ অর্ডারের আয়ারাম-গয়ারাম দশা। জ্যাক ক্রলি (৫), জেকব বেথেল (১) ও জো রুট (০) ব্যর্থ। ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটি ঘরের মাঠে এত ভালো খেলে। রুট একের পর এক শতরান করেন। কিন্তু বিদেশের মাঠে তাদের ব্যাটিং অনেক প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। ঘরের মাঠে পাটা উইকেট বানিয়ে রানের পাহাড় গড়ে কি আখেরে নিজেদেরই ক্ষতি করেছে তারা? চলতি অ্যাশেজ সিরিজ তো সেটাই দেখিয়ে দিচ্ছে।

১৬ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটেন হ্যারি ব্রুক। উইকেটে পড়ে থাকার চেষ্টা না করে বড় শট খেলা শুরু করেন তিনি। স্টার্ক হোন বা স্কট বোলান্ড, কাউকে রেয়াত করছিলেন না। কিন্তু কতক্ষণ টানবেন তিনি। ৪১ রান করে বোলান্ডের বলে আউট হয়ে ফেরেন ব্রুক। অধিনায়ক স্টোকস ১৬ রান করে নেসেরের শিকার হন। গাস অ্যাটকিনসন না থাকলে ইংল্যান্ড ১০০ রানও করতে পারত না। ন’নম্বরে নেমে ২৮ রান করেন তিনি। ফলে শেষ পর্যন্ত ১০০-র গ-ি টপকায় দল। মাত্র ২৯.৫ ওভারে ১১০ রানে অল আউট হয়ে গেল ইংল্যান্ড। প্রশ্ন উঠছিল, ৩০ ওভারও যদি একটা দল খেলতে না পারে, তা হলে তারা টেস্ট জিতবে কীভাবে? তা-ও আবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে? কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার খারাপ ব্যাটিং ইংল্যান্ডকে বাঁচিয়ে দিলো।

দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩২ রানে অলআউট হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। তাদের ইনিংস ৩৪.৩ ওভার টিকলো। এই ১৩২ রানের মধ্যে ৪৬ রান ওপেনার হেডের। বাকিদের মধ্যে অধিনায়ক স্মিথ ২৪ ও গ্রিন ১৯ রান করেন। আর কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছোতে পারেননি। তার মাঝেই মার্নাশ লাবুশেনের উইকেট ঘিরে বিতর্ক হয়। তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি তিনি। ইংরেজ বোলারদের মধ্যে ব্রাইডন কার্স ৪ উইকেট নেন। স্টোকস ৩, টং ২ ও অ্যাটকিনসন ১ উইকেট নেন।

ইংল্যান্ডের সামনে জয়ের লক্ষ্য ছিল ১৭৫ রান। তবে প্রথম ইনিংসে তারা যেভাবে ব্যাট করেছিল, তাতে এই রান স্টোকসরা তাড়া করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। সেই সন্দেহ কাটিয়ে দিলেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার। চলতি সিরিজে প্রথমবার ভালো দেখালো ক্রলি ও ডাকেটকে। বিশেষ করে ডাকেট যেভাবে আক্রমণাত্মক খেললেন, তাতে শুরুতেই পিছিয়ে পড়লো অস্ট্রেলিয়া। যে স্টার্কের বলে তিনি বার বার আউট হয়েছেন, সেই স্টার্ককেই শুরু থেকে আক্রমণ করলেন ইংরেজ ওপেনার। ২৬ বলে ৩৪ রান করে অবশ্য স্টার্কের বলেই ফিরলেন তিনি।

অন্য ওপেনার ক্রলি করলেন ৩৭ রান। এই টেস্টে ওলি পোপের বদলে খেলা জেকব বেথেলও রান পেলেন। অস্ট্রেলিয়া সব রকম চেষ্টা করল। বোলিং বদলে, ফিল্ডিং বদলে, পরিকল্পনা বদলেও লাভ হলো না। অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা ১৯ রান অতিরিক্ত দিলেন। তারও খেসারত দিতে হলো। বেথেল ৪০ রান করে আউট হলেন। রুট ১৫ রান করলেন। শেষ দিকে উইকেট পড়লেও ততক্ষণে ইংল্যান্ড জয়ের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। স্টোকসও রান পেলেন না। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন ব্রুক (১৮)।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্টে তারা শেষ জিতেছিল ২০১০-১১ সফরে সিডনিতে। সে বার শুধু টেস্ট নয়, সিরিজও জিতেছিল ইংল্যান্ড। সেই সিরিজেই মেলবোর্নে পেয়েছিল জয়। পরের তিন অস্ট্রেলিয়া সফরে ১৫ টেস্টের মধ্যে ১৩টি হেরেছিল ইংল্যান্ড।

এই সফরেও প্রথম তিন টেস্টে হারের পর ধবল ধোলাইয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। সেই আশঙ্কা কাটালেন স্টোকসরা। অস্ট্রেলিয়াকে ৪ উইকেটে হারিয়ে সমর্থকদের মুখে একটু হলেও হাসি ফেরালেন তারা। খেলা শেষে স্টোকসদের নামে জয়ধ্বনি দিলেন ইংরেজ দর্শকরা। অস্ট্রেলিয়ার হোয়াইটওয়াশের স্বপ্ন অধরা থেকে গেল। ২০১৩-১৪ সিরিজে তারা যা করেছিল, তার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারলেন না স্মিথরা।

আগামী ৪ জানুয়ারি থেকে সিডনিতে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্ট খেলতে নামবে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড।

স্কোর: অস্ট্রেলিয়া ১৫২ ও ১৩২; ইংল্যান্ড ১১০ ও ১৭৮/৬।

ফল: ইংল্যান্ড ৪ উইকেটে জয়ী

সম্প্রতি