ফসলি জমিতে কেন চালকল

প্রাণ-প্রকৃতিকে বিপর্যস্ত করে, পরিবেশ-প্রতিবেশের তোয়াক্কা না করে দেশের অনেক স্থানেই শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে ন্যূনতম আইনও মানা হয় না। পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই বিভিন্ন কলকারখানা স্থাপন করা হয়।

পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে টাঙ্গাইলে জনবসতিঘেঁষে ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে ৪১১টি ছোটবড় চালকল। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে মাত্র ৬৩টির। কিন্তু চালকলের শ্রেণী উল্লেখ না করে শুধু পরিবেশের ছাড়পত্র দেয়া সংখ্যার উল্লেখ করা হয়েছে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় চালকল স্থাপনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নতুন চালকলে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগও দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিতহয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তদারকি না থাকায় চালকলগুলোতে ইটিপি প্লান্ট স্থাপন করা হয় নাই। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইটিপি প্লান্ট স্থাপনের জন্য কোন নির্দেশনাও দেয়া হয়নি। যত্রতত্র গড়ে ওঠা স্বয়ংক্রিয় চালকলের কোন বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ইটিপি প্ল্যান্ট নেই। তাই কারখানার দূষিত বর্জ্য গিয়ে মিশছে ফসলি জমিতেÑ পাশের নদীর পানিও বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে। এর ফলে কারখানার গরম পানি, ছাই ও অপসারিত বর্জ্য ফটিকজানি নদীতে ফেলার কারণে আবাদি জমি ও নদীর জলজপ্রাণী ও মাছ মরে গেছে। বেশ কয়েকটি কারখানা হতে সরাসরি গরম পানি ও বর্জ্য ফটিকজানি নদীতে পরে। নতুন কারখানাগুলো ঘনবসতিপূর্ণ ও ফসলি জমিঘেঁষে স্থাপন করায় জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। চালকলের ধোঁয়া ও ছাইয়ে গাছপালার পাতা পর্যন্ত কালো হয়ে গেছেÑ গাছে ফল ধরে না। এলাকার অনেক বাসিন্দাই বিশেষকরে প্রবীণ ও শিশুরা শ্বাসকষ্টে ভুগছে।

আইন অনুযায়ী জনবসতিঘেঁষে ফসলি জমিতে চালকল স্থাপনে পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স পাওয়ার সুযোগ নেই। ইতোপূর্বে যেসব চালকলের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে সেগুলো পুনরায় যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। সরকার কর্তৃক একটি সুনির্দিষ্ট এলাকা শিল্পাঞ্চল ঘোষণা করে যত্রতত্র গড়ে ওঠা ছোট-বড় চালকলগুলোকে স্থানান্তর করতে হবে। এছাড়া যেগুলোর লাইসেন্স নেইÑ সেগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে। যেগুলো এরই মধ্যে যেসব চালকল স্থাপন করা হয়ে গেছে সেগুলো পরিবেশ আইন অনুযায়ী নিয়ম-নীতি মেনে চলছে কিনা তা তদারকি আর কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। যাদি তা না করে তাহলে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

সম্প্রতি