একটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অনেকটাই নির্ভর করে তার কৃষি জমির ওপর। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ, আবাসন প্রকল্প, ইটভাটা ও বালু মহাল খননের মতো কার্যক্রম কৃষি জমির উপর থাবা বসাচ্ছে। এসব অবৈধ কর্মকা-ের কারণে দেশে ফসলি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
সম্প্রতি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা ইউনিয়নের হাতুরাকান্দি এলাকায় কৃষি জমির উপরিভাগ থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটা নিয়ে চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। জানা যায়, রাতভর কৃষি জমির উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাটি কাটার এই প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে কৃষকের ওপর চরম আর্থিক চাপ তৈরি করবে এবং উৎপাদনশীলতা আরও কমিয়ে দেবে।
কারণ জমির উপরিভাগের মাটি, যা টপ সয়েল নামে পরিচিত, তা কেটে ফেলা হলে, জমির পুষ্টিগুণ কমে যায়। এই স্তরের মাটি ছাড়া অন্যান্য স্তর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া কঠিন এবং কৃষকদের অতিরিক্ত সার ব্যবহার করতে হবে, যা তাদের জন্য অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
এই অবৈধ কর্মকা- কেবল কৃষকদেরই নয়, পরিবেশের ভারসাম্যও বিপন্ন করছে। প্রকৃতিতে স্বাভাবিক মাটির পুনরুদ্ধারে ২৫ থেকে ৩০ বছর সময় প্রয়োজন। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় একটি সংকট তৈরি করবে।
টপ সয়েল কাটা বন্ধ করা জরুরি। শুধু আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে এসব বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে সুষ্ঠু প্রশাসনিক মনিটরিং ও স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। যারা এ অনিয়মে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কেবলমাত্র শাস্তির ভয় নয়, সচেতনতা ও জনসচেতনতা গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পেতে পারি।
ফসলি জমির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে সরকার এবং স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কৃষি জমি রক্ষা না হলে দেশের কৃষি উন্নয়ন এক ভয়াবহ সংকটে পড়বে, যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক।