alt

সম্পাদকীয়

কড়াই বিলের গাছ কাটা প্রকৃতির প্রতি অবহেলা

: মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কড়াই বিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পরিবেশগত ভারসাম্যের এক অনন্য নিদর্শন। অতিথি পাখির কলকাকলি, ফলদ ও বনজ গাছের সবুজ ছায়া এবং পুকুরের জলরাশি এই বিলকে দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। কিন্তু সম্প্রতি ‘বিরল থানা মুক্তিযোদ্ধা হাঁস-মুরগি ও পশু পালন খামার সমবায় সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূতভাবে পাঁচ শতাধিক গাছ কাটার অভিযোগে এই সৌন্দর্য ম্লান হয়ে গেছে। গাছ কাটার ফলে কড়াই বিল তার জৌলুস হারিয়েছে, দর্শনার্থীরা মুখ ফিরিয়েছেন, এবং স্থানীয় পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ ঘটনা শুধু প্রকৃতির প্রতি অবহেলাই নয়, সরকারি সম্পত্তি ও আইনের প্রতি দায়িত্বহীনতারও একটি উদাহরণ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আগেও সমিতির দায়িত্বশীলরা ছোটখাটো গাছ কেটেছেন, কিন্তু এবারের মতো ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ আগে দেখা যায়নি। আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছ কাটার ফলে বিলের পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। অতিথি পাখির আগমন কমে গেছে, পুকুরের পাড় ভেঙে পড়েছে, এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাছ কাটার আগে তাদের অবহিত করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। উপজেলা প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, এই গাছগুলো খাস জমিতে অবস্থিত এবং কাটার জন্য কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। ফলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, গাছ জব্দ করা হয়েছে, এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সমিতির যুক্তি, গাছগুলো ১৫-২০ বছর ধরে ফল দিচ্ছিল না, তাই তারা লিচু বাগান করার জন্য এগুলো কেটেছে। কিন্তু এই যুক্তি দুর্বল। ফল না ধরলেও এই গাছগুলো পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলÑ ছায়া দিয়েছে, পাখিদের আশ্রয় দিয়েছে, এবং পুকুরের পাড়কে সুরক্ষিত রেখেছে।

নিয়ম অনুসরণ না করে গাছ কাটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া এমন কাজ শুধু আইন লঙ্ঘনই নয়, প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বহীনতার পরিচয়। তৃতীয়ত, গাছ কাটার পরিবর্তে বিকল্প উপায়Ñ যেমন গাছের যতœ নেয়া বা নতুন জাতের গাছ লাগানোÑ বিবেচনা করা যেত।

এই ঘটনা আমাদের সামনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ও ব্যবহারে আমরা কতটা সচেতন? স্থানীয় সমিতি বা সংগঠনগুলোর ওপর যখন এমন গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখন তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা কী? কড়াই বিলের মতো স্থানগুলো শুধু স্থানীয়দের জীবিকার উৎস নয়, এটি জাতীয় সম্পদও বটে। এর সৌন্দর্য ও পরিবেশগত গুরুত্ব ধরে রাখতে প্রশাসনের কঠোর তদারকি এবং স্থানীয়দের সচেতনতা অপরিহার্য।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় শিক্ষার্থী ও বাসিন্দাদের প্রতিবাদ এবং প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। তবে শুধু মামলা দায়ের বা গাছ জব্দ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। কড়াই বিলের হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজনÑ নতুন গাছ লাগানো, পুকুরের পাড় সংস্কার, এবং পরিবেশ সংরক্ষণে কঠোর নীতি প্রণয়ন। একই সঙ্গে, সমিতির সদস্যদের সচেতন করতে হবে যে প্রকৃতির ক্ষতি করে কোনো উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না।

সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে হবে

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায়

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাস্তবতা ও সম্ভাবনার দ্বন্দ্ব

অস্থির চালের বাজারে সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তা

রমজানের নামে নিগ্রহ : কারা এই ‘নৈতিকতার ঠিকাদার’?

সেতু নির্মাণে গাফিলতি : জনদুর্ভোগের শেষ কোথায়?

ধর্ষণ, মব ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা : শুধু যেন কথার কথা না হয়

নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি

গণরোষের নামে নৃশংসতা : কোথায় সমাধান?

গাছের জীবন রক্ষায় এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

প্রকাশ্যে ধূমপান, মবের সংস্কৃতি এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বয়ান

চট্টগ্রামে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংকট

লামায় শ্রমিক অপহরণ : প্রশ্নবিদ্ধ নিরাপত্তা

রেলওয়ের তেল চুরি ও কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা

মহাসড়কে নিরাপত্তাহীনতা ও পুলিশের দায়িত্বে শৈথিল্য

দেওয়ানগঞ্জ ডাম্পিং স্টেশন প্রকল্প : দায়িত্বহীনতার প্রতিচ্ছবি

রেলপথে নিরাপত্তাহীনতা : চুরি ও অব্যবস্থাপনার দুষ্টচক্র

সবজি সংরক্ষণে হিমাগার : কৃষকদের বাঁচানোর জরুরি পদক্ষেপ

অমর একুশে

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষায় উদাসীনতা কাম্য নয়

আইনশৃঙ্খলার অবনতি : নাগরিক নিরাপত্তা কোথায়?

বাগাতিপাড়ার বিদ্যালয়গুলোর শৌচাগার সংকট দূর করুন

হাসপাতালগুলোতে জনবল সংকট দূর করুন

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষায় উদাসীনতা কাম্য নয়

নতুন পাঠ্যবই বিতরণে ধীরগতি : শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে

সরকারি জমি রক্ষায় উদাসীনতা কাম্য নয়

সার বিপণনে অনিয়মের অভিযোগ, ব্যবস্থা নিন

জলাবদ্ধতার অভিশাপ : পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন ও দুর্ভোগ

সেতুর জন্য আর কত অপেক্ষা

শবে বরাত: আত্মশুদ্ধির এক মহিমান্বিত রাত

অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই সংকট : ব্যর্থতার দায় কার?

মাদারীপুর পৌরসভায় ডাম্পিং স্টেশন কবে হবে

বায়ুদূষণ : আর উপেক্ষা করা যায় না

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাঁকড়া শিকার : সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে

যৌতুকের বলি : বৈশাখীর নির্মম পরিণতি ও আমাদের করণীয়

tab

সম্পাদকীয়

কড়াই বিলের গাছ কাটা প্রকৃতির প্রতি অবহেলা

মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কড়াই বিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পরিবেশগত ভারসাম্যের এক অনন্য নিদর্শন। অতিথি পাখির কলকাকলি, ফলদ ও বনজ গাছের সবুজ ছায়া এবং পুকুরের জলরাশি এই বিলকে দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। কিন্তু সম্প্রতি ‘বিরল থানা মুক্তিযোদ্ধা হাঁস-মুরগি ও পশু পালন খামার সমবায় সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূতভাবে পাঁচ শতাধিক গাছ কাটার অভিযোগে এই সৌন্দর্য ম্লান হয়ে গেছে। গাছ কাটার ফলে কড়াই বিল তার জৌলুস হারিয়েছে, দর্শনার্থীরা মুখ ফিরিয়েছেন, এবং স্থানীয় পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ ঘটনা শুধু প্রকৃতির প্রতি অবহেলাই নয়, সরকারি সম্পত্তি ও আইনের প্রতি দায়িত্বহীনতারও একটি উদাহরণ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আগেও সমিতির দায়িত্বশীলরা ছোটখাটো গাছ কেটেছেন, কিন্তু এবারের মতো ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ আগে দেখা যায়নি। আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছ কাটার ফলে বিলের পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। অতিথি পাখির আগমন কমে গেছে, পুকুরের পাড় ভেঙে পড়েছে, এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাছ কাটার আগে তাদের অবহিত করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। উপজেলা প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, এই গাছগুলো খাস জমিতে অবস্থিত এবং কাটার জন্য কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। ফলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, গাছ জব্দ করা হয়েছে, এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সমিতির যুক্তি, গাছগুলো ১৫-২০ বছর ধরে ফল দিচ্ছিল না, তাই তারা লিচু বাগান করার জন্য এগুলো কেটেছে। কিন্তু এই যুক্তি দুর্বল। ফল না ধরলেও এই গাছগুলো পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলÑ ছায়া দিয়েছে, পাখিদের আশ্রয় দিয়েছে, এবং পুকুরের পাড়কে সুরক্ষিত রেখেছে।

নিয়ম অনুসরণ না করে গাছ কাটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া এমন কাজ শুধু আইন লঙ্ঘনই নয়, প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বহীনতার পরিচয়। তৃতীয়ত, গাছ কাটার পরিবর্তে বিকল্প উপায়Ñ যেমন গাছের যতœ নেয়া বা নতুন জাতের গাছ লাগানোÑ বিবেচনা করা যেত।

এই ঘটনা আমাদের সামনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ও ব্যবহারে আমরা কতটা সচেতন? স্থানীয় সমিতি বা সংগঠনগুলোর ওপর যখন এমন গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখন তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা কী? কড়াই বিলের মতো স্থানগুলো শুধু স্থানীয়দের জীবিকার উৎস নয়, এটি জাতীয় সম্পদও বটে। এর সৌন্দর্য ও পরিবেশগত গুরুত্ব ধরে রাখতে প্রশাসনের কঠোর তদারকি এবং স্থানীয়দের সচেতনতা অপরিহার্য।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় শিক্ষার্থী ও বাসিন্দাদের প্রতিবাদ এবং প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। তবে শুধু মামলা দায়ের বা গাছ জব্দ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। কড়াই বিলের হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজনÑ নতুন গাছ লাগানো, পুকুরের পাড় সংস্কার, এবং পরিবেশ সংরক্ষণে কঠোর নীতি প্রণয়ন। একই সঙ্গে, সমিতির সদস্যদের সচেতন করতে হবে যে প্রকৃতির ক্ষতি করে কোনো উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না।

back to top