দেশের পূর্বাঞ্চলের এক অনুপম প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্ট আজ নিঃশব্দে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এই সংরক্ষিত বনাঞ্চল একসময় ১,১৫২ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত ছিল, বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৩৫ বর্গকিলোমিটারে।
পাথারিয়ার চিরসবুজ অরণ্য শুধু বনজ সম্পদের আধার নয়, এটি ছিল এশিয়ার অন্যতম জীববৈচিত্র্য হটস্পট ইন্দো-বার্মা অঞ্চলের অংশ। এখানে বাস করত বাঘ, গ-ার, বুনো মোষ, এশীয় হাতি, সজারু, উল্লুক, ফেরেট ব্যাজার, বাঁশ ভাল্লুকসহ বহু বিপন্ন প্রাণী। আজ তাদের অধিকাংশই বিলুপ্তির মুখে। খাদ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের অভাবে যে কয়টি প্রাণী এখনও টিকে আছে, তারাও ক্রমাগত লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।
বনের ক্ষয়ের কারণ সুস্পষ্টÑ মানুষের আগ্রাসন, প্রভাবশালী মহলের দখলদারিত্ব, বনজ সম্পদের লুণ্ঠন, এবং বন বিভাগের গাফিলতি। হাজার হাজার একর বনভূমি দখল, আগুন দিয়ে বন ধ্বংস, সরকারি গাছপালা সাবাড়ের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠলেও কার্যকর কোনো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা দেখা যায়নি।
পাথারিয়া পাহাড়ে বিগত দশকগুলোতে বন বিভাগ যে কৃত্রিম বনায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রাণীদের জন্য বিপরীত ফল বয়ে এনেছে। স্থানীয় প্রাকৃতিক গাছ ও ফলজ উদ্ভিদ কেটে ফেলার ফলে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে, আবাস হারিয়ে প্রাণীরা আরও গভীর সংকটে পড়েছে। আবার সীমান্তবর্তী বনাঞ্চলে শিকারিদের অনুপ্রবেশ এবং বন বিভাগের নীরবতা প্রশ্ন তোলে তাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে।
পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্টকে সম্পূর্ণভাবে মানুষ ও দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে। অবশিষ্ট প্রাকৃতিক বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করতে হবে। বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সুরক্ষায় বনের ভেতর কৃত্রিম বনায়নের পরিবর্তে স্থানীয় প্রজাতির উদ্ভিদ রোপণ ও প্রাকৃতিক পুনর্জীবনের ব্যবস্থা করতে হবে। ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় সীমানা পর্যবেক্ষণ বাড়িয়ে শিকার প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বন রক্ষায় প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছা। দখলদারদের আইনের আওতায় এনে বন দখলকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পাথারিয়া পাহাড় শুধু বড়লেখা কিংবা মৌলভীবাজারের নয়, এটি আমাদের জাতীয় পরিবেশ ঐতিহ্যের অংশ।
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
দেশের পূর্বাঞ্চলের এক অনুপম প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্ট আজ নিঃশব্দে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এই সংরক্ষিত বনাঞ্চল একসময় ১,১৫২ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত ছিল, বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৩৫ বর্গকিলোমিটারে।
পাথারিয়ার চিরসবুজ অরণ্য শুধু বনজ সম্পদের আধার নয়, এটি ছিল এশিয়ার অন্যতম জীববৈচিত্র্য হটস্পট ইন্দো-বার্মা অঞ্চলের অংশ। এখানে বাস করত বাঘ, গ-ার, বুনো মোষ, এশীয় হাতি, সজারু, উল্লুক, ফেরেট ব্যাজার, বাঁশ ভাল্লুকসহ বহু বিপন্ন প্রাণী। আজ তাদের অধিকাংশই বিলুপ্তির মুখে। খাদ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের অভাবে যে কয়টি প্রাণী এখনও টিকে আছে, তারাও ক্রমাগত লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।
বনের ক্ষয়ের কারণ সুস্পষ্টÑ মানুষের আগ্রাসন, প্রভাবশালী মহলের দখলদারিত্ব, বনজ সম্পদের লুণ্ঠন, এবং বন বিভাগের গাফিলতি। হাজার হাজার একর বনভূমি দখল, আগুন দিয়ে বন ধ্বংস, সরকারি গাছপালা সাবাড়ের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠলেও কার্যকর কোনো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা দেখা যায়নি।
পাথারিয়া পাহাড়ে বিগত দশকগুলোতে বন বিভাগ যে কৃত্রিম বনায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রাণীদের জন্য বিপরীত ফল বয়ে এনেছে। স্থানীয় প্রাকৃতিক গাছ ও ফলজ উদ্ভিদ কেটে ফেলার ফলে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে, আবাস হারিয়ে প্রাণীরা আরও গভীর সংকটে পড়েছে। আবার সীমান্তবর্তী বনাঞ্চলে শিকারিদের অনুপ্রবেশ এবং বন বিভাগের নীরবতা প্রশ্ন তোলে তাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে।
পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্টকে সম্পূর্ণভাবে মানুষ ও দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে। অবশিষ্ট প্রাকৃতিক বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করতে হবে। বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সুরক্ষায় বনের ভেতর কৃত্রিম বনায়নের পরিবর্তে স্থানীয় প্রজাতির উদ্ভিদ রোপণ ও প্রাকৃতিক পুনর্জীবনের ব্যবস্থা করতে হবে। ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় সীমানা পর্যবেক্ষণ বাড়িয়ে শিকার প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বন রক্ষায় প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছা। দখলদারদের আইনের আওতায় এনে বন দখলকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পাথারিয়া পাহাড় শুধু বড়লেখা কিংবা মৌলভীবাজারের নয়, এটি আমাদের জাতীয় পরিবেশ ঐতিহ্যের অংশ।