নিরপেক্ষ ও নৈতিক সাংবাদিকতার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৫১ সালের ১৭ মে আত্মপ্রকাশ করেছিল ‘সংবাদ’। প্রথম সংখ্যার সম্পাদকীয়তে ঘোষিত হয়েছিল এক অনাড়ম্বর প্রত্যয়Ñ“নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। সকল অবস্থায় সত্য প্রকাশ করাই আমাদের আদর্শ।”
আজ, সেই যাত্রার ৭৪ বছর অতিক্রম করে সংবাদ পা রাখল পঁচাত্তরে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম ইতিহাসে এটি নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই দীর্ঘ পথচলায় সংবাদকে মোকাবিলা করতে হয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা ও সংকট। আমাদের দেশে সংবাদমাধ্যমের টিকে থাকা কখনোই সহজ ছিল নাÑআজও নয়। নানান চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়েই পত্রিকাগুলোকে এগিয়ে যেতে হয়, আর সংবাদ বরাবরই সেই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রামী মনোভাব নিয়ে পথ চলেছে।
প্রকাশের এক বছরের মাথায়, অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে ‘সংবাদ’ ১৯৫২ সালে মুসলিম লীগের হাতে চলে যায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়ের পর মালিকানা পরিবর্তন হলে সংবাদ নতুনভাবে প্রাণ ফিরে পায়, শুরু হয় পুনর্জন্মের ইতিহাস।
ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ‘সংবাদ’ শুরু থেকেই রেখেছে স্পষ্ট ও বলিষ্ঠ অবস্থান। ১৯৬৪ সালে সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংস হামলার সময়ে সংবাদ-এর শিরোনাম ছিলÑ“শান্তির স্বপক্ষে রুখিয়া দাঁড়াও”Ñযা শুধু সাহসী সাংবাদিকতার নিদর্শনই নয়, ছিল এক মানবিক প্রতিবাদ। এমনকি মুসলিম লীগের মালিকানাতেও সংবাদ অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানে একটুও ছাড় দেয়নি।
দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সংবাদ ছিল সরব ও সোচ্চার। বাঙালির মুক্তির প্রত্যাশা, যন্ত্রণার দিনলিপি এবং গণতন্ত্রের দাবি বারবার প্রতিধ্বনিত হয়েছে এই পত্রিকার পাতায়। ১৯৭১ সালের ৮ মার্চ সংবাদ-এর ব্যানারে ছাপা হয়েছিল ঐতিহাসিক ঘোষণাÑ“এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”।
এই নির্ভীক অবস্থানের মূল্যও দিতে হয়েছে সংবাদ-কে। একাত্তরের ২৮ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী সংবাদ অফিস জ্বালিয়ে দেয়। আগুনে প্রাণ হারান বরেণ্য সাংবাদিক শহীদ সাবের। বন্ধ হয়ে যায় পত্রিকার প্রকাশনা। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশেও সংবাদ-এর প্রকাশনায় বাধা এসেছে, কিন্তু প্রতিবারই পত্রিকাটি নতুনভাবে জেগে উঠেছে, ফিরে এসেছে দায়িত্ব ও দায়বোধের দীপ্ত অঙ্গীকার নিয়ে।
সাত দশকের অধিক সময় ধরে সংবাদ-এর অবিচল টিকে থাকা শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নয়, বরং এটি আমাদের গণমাধ্যম ও মুক্ত চিন্তার চর্চার ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধ, মানবতা, গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান, এবং দলনিরপেক্ষভাবে সংবাদ ও মত প্রকাশÑএই নীতিকে আমরা অতীতেও লালন করেছি, আজও করছি, আগামীতেও করব।
আমাদের লক্ষ্য এখনও একইÑদলনিরপেক্ষভাবে সংবাদ পরিবেশন করা। আর আদর্শÑসব পরিস্থিতিতেই সত্য প্রকাশ করা।
শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
নিরপেক্ষ ও নৈতিক সাংবাদিকতার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৫১ সালের ১৭ মে আত্মপ্রকাশ করেছিল ‘সংবাদ’। প্রথম সংখ্যার সম্পাদকীয়তে ঘোষিত হয়েছিল এক অনাড়ম্বর প্রত্যয়Ñ“নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। সকল অবস্থায় সত্য প্রকাশ করাই আমাদের আদর্শ।”
আজ, সেই যাত্রার ৭৪ বছর অতিক্রম করে সংবাদ পা রাখল পঁচাত্তরে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম ইতিহাসে এটি নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই দীর্ঘ পথচলায় সংবাদকে মোকাবিলা করতে হয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা ও সংকট। আমাদের দেশে সংবাদমাধ্যমের টিকে থাকা কখনোই সহজ ছিল নাÑআজও নয়। নানান চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়েই পত্রিকাগুলোকে এগিয়ে যেতে হয়, আর সংবাদ বরাবরই সেই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রামী মনোভাব নিয়ে পথ চলেছে।
প্রকাশের এক বছরের মাথায়, অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে ‘সংবাদ’ ১৯৫২ সালে মুসলিম লীগের হাতে চলে যায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়ের পর মালিকানা পরিবর্তন হলে সংবাদ নতুনভাবে প্রাণ ফিরে পায়, শুরু হয় পুনর্জন্মের ইতিহাস।
ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ‘সংবাদ’ শুরু থেকেই রেখেছে স্পষ্ট ও বলিষ্ঠ অবস্থান। ১৯৬৪ সালে সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংস হামলার সময়ে সংবাদ-এর শিরোনাম ছিলÑ“শান্তির স্বপক্ষে রুখিয়া দাঁড়াও”Ñযা শুধু সাহসী সাংবাদিকতার নিদর্শনই নয়, ছিল এক মানবিক প্রতিবাদ। এমনকি মুসলিম লীগের মালিকানাতেও সংবাদ অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানে একটুও ছাড় দেয়নি।
দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সংবাদ ছিল সরব ও সোচ্চার। বাঙালির মুক্তির প্রত্যাশা, যন্ত্রণার দিনলিপি এবং গণতন্ত্রের দাবি বারবার প্রতিধ্বনিত হয়েছে এই পত্রিকার পাতায়। ১৯৭১ সালের ৮ মার্চ সংবাদ-এর ব্যানারে ছাপা হয়েছিল ঐতিহাসিক ঘোষণাÑ“এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”।
এই নির্ভীক অবস্থানের মূল্যও দিতে হয়েছে সংবাদ-কে। একাত্তরের ২৮ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী সংবাদ অফিস জ্বালিয়ে দেয়। আগুনে প্রাণ হারান বরেণ্য সাংবাদিক শহীদ সাবের। বন্ধ হয়ে যায় পত্রিকার প্রকাশনা। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশেও সংবাদ-এর প্রকাশনায় বাধা এসেছে, কিন্তু প্রতিবারই পত্রিকাটি নতুনভাবে জেগে উঠেছে, ফিরে এসেছে দায়িত্ব ও দায়বোধের দীপ্ত অঙ্গীকার নিয়ে।
সাত দশকের অধিক সময় ধরে সংবাদ-এর অবিচল টিকে থাকা শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নয়, বরং এটি আমাদের গণমাধ্যম ও মুক্ত চিন্তার চর্চার ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধ, মানবতা, গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান, এবং দলনিরপেক্ষভাবে সংবাদ ও মত প্রকাশÑএই নীতিকে আমরা অতীতেও লালন করেছি, আজও করছি, আগামীতেও করব।
আমাদের লক্ষ্য এখনও একইÑদলনিরপেক্ষভাবে সংবাদ পরিবেশন করা। আর আদর্শÑসব পরিস্থিতিতেই সত্য প্রকাশ করা।