উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বহু শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে জাতীয় জীবনের এক গভীর শোকাবহ দিন। কিন্তু দুর্ঘটনার পরপরই রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা যে রকম হওয়া উচিত ছিল, বাস্তবে তার বিপরীত চিত্রই উঠে এসেছে। উদ্ধার তৎপরতা, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা এবং নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণÑসব জায়গাতেই সরকারের পরিকল্পনার অভাব ও সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে।
দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার তৎপরতা শুরু হলেও তা ছিল অব্যবস্থাপনায় ভরা। উৎসুক জনতার বাঁধভাঙা ভিড়ে পেশাদার উদ্ধারকর্মীরা বাধাগ্রস্ত হয়েছেন বারবার। হাসপাতালের পথে বা ভেতরে আহতদের আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে এমন জট তৈরি হয়েছিল, যা সরাসরি রোগীর চিকিৎসা বিলম্বিত করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি বুঝেও ভিড় নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
হাসপাতালে আহতদের শয্যার পাশে রাজনৈতিক নেতাদের ভিড় ছিল অনভিপ্রেত, অনুচিত এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন। চিকিৎসকরা বলেন, অগ্নিদগ্ধ রোগীদের সংক্রমণের ঝুঁকি খুব বেশি। এই বাস্তবতা জেনেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা দলবল নিয়ে হাসপাতালে ঢুকে পড়েন। তাদের এই ‘দেখানোর’ রাজনীতি শুধু হাসপাতালের সেবাব্যবস্থাকে দুর্বল করেনি, আক্রান্তদের জীবনকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।
এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্তেও সরকারের সমন্বয়হীনতা প্রকাশ পেয়েছে। এটাও শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত আসে মধ্যরাতে। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীরা সকালে ঘুম থেকে উঠে বা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে জেনেছে।
বিষয়টি শুধু অব্যবস্থাপনার বহিঃপ্রকাশ নয়, এটি শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থাকেও অবজ্ঞা করার নামান্তর। যে শিক্ষার্থীরা সহপাঠীর মৃত্যু দেখেছে, যারা হাসপাতালের সামনে কাঁদতে কাঁদতে দাঁড়িয়ে থেকেছে, তাদের কাছ থেকে পরদিন সকালে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার প্রত্যাশা করা চরম অমানবিক। সরকারের এই অব্যবস্থাপনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করেছে।
দুর্যোগ কখনো কখনো এড়ানো অসম্ভব হতে পারে। কিন্তু দুর্যোগ পরবর্তী ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্র যদি দায়িত্বপূর্ণ না হয়, তাহলে সেই ব্যর্থতা আরেকটি বিপর্যয়ের জন্ম দেয়। মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য কার্যকর নীতিমালা ও দুর্যোগ-পরবর্তী ব্যবস্থাপনায় দৃশ্যমান সংস্কার আনতে হবে।