প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা প্রায় দেড় দশক পর আবার চালু হতে যাচ্ছে। তবে শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই-সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয় এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। অন্যান্য বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীদের এই পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। সংশ্লিষ্টরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।
দেশে প্রাথমিক শিক্ষার একটি বড় অংশ এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। শহরাঞ্চলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মান, অবকাঠামো ও পরিবেশ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অভিযোগ রয়েছে। এমন বাস্তবতায় অভিভাবকরা বিকল্প হিসেবে কিন্ডারগার্টেন বা কেজি স্কুলকে বেছে নিচ্ছেন। এই বিদ্যালয়গুলো সরকারি পাঠ্যসূচির আওতায় থাকলেও, শুধু প্রতিষ্ঠানগত শ্রেণীবিন্যাসের কারণে শিক্ষার্থীদের একটি জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন।
সরকার বলছে, অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন এখনো নিবন্ধনবিহীন হওয়ায় তাদের শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তবে অনেক কিন্ডারগার্টেন ইতোমধ্যেই সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী নিবন্ধিত ও অনুমোদিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কেন একইভাবে বাদ দেয়া হবেÑসে প্রশ্নের সদুত্তর এখনো মেলেনি।
অভিযোগ উঠেছে যে, প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হয়েছে। কেন দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না সেটার কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা।
আমরা বলতে চাই, সরকারের সিদ্ধান্তের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবও বিবেচনায় আনা জরুরি। লাখ লাখ শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক এবং শিক্ষকরা বর্তমানে হতাশ, ক্ষুব্ধ এবং আন্দোলনমুখী। বিষয়টি সামাল দিতে সরকারকে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা শিশুদের জীবনের ভিত্তি। সেই ভিত্তিতে বৈষম্যের বীজ রোপণ করে সুষ্ঠু ও ন্যায্য সমাজ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সরকার চাইলে এখনই প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে পারে এবং আগামীর জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক শিক্ষানীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।