নোয়াখালী অঞ্চলে কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিপাত ও সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পৌরসভাসহ বিভিন্ন উপজেলায় পানি জমে গেছে, যা জনজীবনে দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষ করে হাতিয়ার মতো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এলাকায় জোয়ারের পানিতে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের প্লাবিত হওয়া উদ্বেগজনক। এতে সাধারণ মানুষ যেমন কষ্টে পড়েছে, তেমনি হুমকির মুখে পড়েছে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।
এই পরিস্থিতি আকস্মিক নয়। প্রতিবছর বর্ষাকালে এ ধরনের দুর্যোগ দেখা দেয়। কিন্তু প্রতিবারই তা যেন নতুন করে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয় প্রশাসনকে। জলাবদ্ধতা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির মতো বিষয়গুলো বর্ষার মৌসুমে নোয়াখালী ও উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় নিয়মিত ঘটছে। এতে ধারণা করা যায় যে, জলাবদ্ধতা নিরসনে টেকসই ও কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এখনও যথেষ্ট নয়।
সাধারণ মানুষ বছরের পর বছর ধরে একই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। পৌর এলাকায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা দুর্বল, ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনায় বর্ষা এলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে দ্বীপাঞ্চলে জোয়ার-ভাটার আগ্রাসন থেকে সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত বাঁধ, নালা বা বৃষ্টির পানি ব্যবস্থাপনা চোখে পড়ে না। প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কথা বললেও কার্যত তা দুর্যোগ-পরবর্তী ব্যবস্থাপনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
এই অবস্থার সমাধানে স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণ করা জরুরি। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি প্রয়োজন জলবায়ু সহনশীল নগর পরিকল্পনা। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে পানি প্রবাহ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আধুনিক ও বাস্তবসম্মতভাবে তৈরি না হলে, ভবিষ্যতে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়বে। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ অধিক কার্যকরÑএই নীতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অগ্রসর হতে হবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলেও এর প্রভাবকে সীমিত রাখা সম্ভব। তা করতে হলে উপকূলীয় এলাকার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। মানুষ যাতে বৃষ্টিকে আশীর্বাদ মনে করতে পারে, দুর্ভোগ নয়Ñএমন একটি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।