দাদনের ফাঁদে আটকে পড়া জেলে সমাজ

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকা নির্ভরশীল জেলে পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে এক অমানবিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আবর্তে আটকে আছেÑযা ‘দাদন’ নামে পরিচিত। এ ব্যবস্থায় তারা চড়া সুদে অর্থ ধার নিয়ে মাছ ধরতে নদীতে যান। তবে তাদের কঠিন পরিশ্রমের ফল অনেক সময় তাদের হাতে পৌঁছায় না। দাদনের টাকা শোধ হতে না হতেই আবার ঋণ করতে বাধ্য হন। ফলে দারিদ্র্যের চক্র থেকে মুক্তি পাওয়ার আর কোনো পথ খোলা থাকে না।

মাছ ধরার পর আড়তদারদের গদিতে মাছ জমা দিতে হয়, যেখানে মৌখিক নিলামে মাছ বিক্রি হয়। জেলেদের অভিযোগ অনুযায়ী, নিলামের আগেই মাছের একটি অংশ সরিয়ে ফেলা হয় এবং পরে তা আবার নিলামে তোলা হয়। আয় হিসাব করার আগেই ঋণ কেটে নেয়া হয়। আর যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ নিয়ে সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

দাদন ব্যবসায়ীরা এ অবস্থাকে ‘চাহিদা অনুযায়ী অর্থ সহায়তা’ হিসেবে ব্যাখ্যা করলেও বাস্তবে এটি জেলেদের ওপর একটি অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। তারা দাদনের প্রয়োজনের কথা স্বীকার করলেও সুদহার ও বিক্রয় প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেই। ফলে এ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ জেলেদের হাতে নেই বললেই চলে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ জরুরি। জেলেদের জন্য সরকারিভাবে সুদবিহীন ঋণ চালু করা গেলে তারা দাদনের বিকল্প পেতে পারে। একই সঙ্গে মাছ বিক্রির ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিলাম ব্যবস্থার প্রবর্তন দরকার, যাতে আড়তদারদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ভেঙে জেলেরা ন্যায্য মূল্য পায়। স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তরের সক্রিয় নজরদারি ছাড়া এ অবস্থা পাল্টানো কঠিন।

সম্প্রতি