ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে হামলা : প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসনের ভূমিকা

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে যে ধরনের সহিংসতা, লুটপাট ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা শুধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নয় সমগ্র সমাজব্যবস্থার জন্য হুমকি। অভিযোগের তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই একটি সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। নারী ও শিশুসহ অনেকেই নিজ বাড়ি ছেড়ে নিরাপত্তার জন্য আত্মীয়দের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। এটি শুধু আইনশৃঙ্খলার ব্যর্থতা নয়, সামাজিক সহনশীলতারও সংকট।

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত কিশোরকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। এরপরও সংঘবদ্ধভাবে ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা কেন ঘটল সেটা একটা প্রশ্ন। হামলাকারীদের মধ্যে অনেকে মাইক ব্যবহার করে লোকজন জড়ো করেছে। বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত ছিল বলেই মনে হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও সহিংসতা প্রতিরোধে প্রাথমিকভাবে ব্যর্থতা দেখা গেছে।

প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘরবাড়ি মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, যারা এই সহিংসতায় অংশ নিয়েছে বা উসকানি দিয়েছে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি।

পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে পরম্পরা রয়েছে, তা যাতে ভেঙে না পড়ে, সেদিকে নজর দিতে হবে। অতীতে বিভিন্ন ঘটনায় দেখা গেছে, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ অনেক সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে সমাজ, প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আরও দায়িত্বশীল ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে হবে।

এই ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আগামীতে যেন কোনো অসতর্ক পোস্ট, গুজব বা উসকানির কারণে আর কোনো সম্প্রদায়কে আতঙ্কে থাকতে না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, গুজব প্রতিরোধ এবং সামাজিক ঐক্য রক্ষায় সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

সম্প্রতি