সুন্দরবনের বাঘ : সাফল্যের পরিসংখ্যান, চ্যালেঞ্জের বাস্তবতা

২০২৪ সালের জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি। সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৫ সালের তুলনায় বাঘের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি।

সরকারের দাবি অনুযায়ী, বাঘ সংরক্ষণ কার্যক্রমে ক্যামেরা ট্র্যাপ, স্মার্ট প্যাট্রোলিং, ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম, নাইলন বেড়া কিংবা উঁচু কেল্লা নির্মাণ প্রভৃতি পদক্ষেপ কার্যকর হয়েছে। একই সঙ্গে বনজ সম্পদ আহরণে নিষেধাজ্ঞা, মানুষ-বাঘ দ্বন্দ্ব নিরসনে ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা এবং চোরাশিকার দমন প্রচেষ্টাও উল্লেখযোগ্য।

কিন্তু এই অগ্রগতির মধ্যেও কিছু উদ্বেগের বিষয় রয়েছে। চোরাশিকার এখনও নির্মূল হয়নি। আন্তর্জাতিক পাচারচক্র সক্রিয় রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রকে ক্রমাগত দুর্বল করে তুলছে। বনের অনেক জলাশায় শুকিয়ে যাওয়া, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বাঘের আবাস ও খাদ্যশৃঙ্খলা হুমকির মুখে পড়ছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিযোগ, সুন্দরবনে মানুষের অনুপ্রবেশ এবং বনভিত্তিক জীবিকার ওপর নির্ভরতা বাঘ ও মানুষের মধ্যে সংঘাত বাড়িয়ে তুলছে।

কারও কারও মতে, বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান এবং বর্তমান সংরক্ষণ কর্মসূচির কাঠামো যথেষ্ট সুপরিকল্পিত হলেও এর বাস্তবায়ন আরও সুসংগঠিত, জবাবদিহিমূলক ও বিজ্ঞানভিত্তিক হতে হবে।

বাঘ রক্ষায় স্থানীয় জনগণকে অংশীজন হিসেবে সম্পৃক্ত করা এখন সময়ের দাবি। শুধু সরকারি পদক্ষেপ নয়, পরিবেশবিষয়ক শিক্ষার প্রসার, বিকল্প জীবিকার সুযোগ তৈরি এবং নাগরিক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিই পারে দীর্ঘমেয়াদে এ সাফল্যকে স্থায়ী করতে।

স্মরণে রাখা উচিত, একটি সুস্থ সুন্দরবন মানেই দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের টেকসই উন্নয়ন। আর সেই সুন্দরবনের প্রাণ হলো বাঘ। কাজেই বাঘ সংরক্ষণ শুধু প্রকৃতি রক্ষার বিষয় নয়Ñ এটি আমাদের অর্থনীতি, সমাজ ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। পরিসংখ্যানের বাইরেও এ সত্যকে নীতি-নির্ধারকদের মনে রাখতে হবে।

সম্প্রতি