বয়স্ক ভাতা পেতে আর কত অপেক্ষা

জামালপুরের মাদারগঞ্জের প্রবীণ নারী আনোয়ারার বয়স ৭৮ বছর। ৪২ বছর আগে স্বামী হারিয়েছেন। একমাত্র মেয়েকেও হারিয়েছেন প্রায় দুই দশক আগে। এখন তিনি নিঃসঙ্গ, অসহায়। তার নেই কোনো জায়গা-জমি, নেই নিশ্চিত আশ্রয়। প্রান্তিক এই দরিদ্র নারী এখনো বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন না। এ নিয়ে সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

জামালপুরের এই প্রবীণ নারীর জীবনের গল্প নিছক একটি মানবিক দুর্ভোগ নয়, এটি দেশের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি বাস্তব চিত্র। তার মতো আরও অনেকেই আছেন যারা বয়স্ক ভাতার আওতায় আসেননি। গণমাধ্যমে এমন খবর প্রায়ই প্রকাশিত হয়।

দেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অন্যতম অংশ হলো বয়স্ক ভাতা। নারী হলে ৬২ বছর বয়সের পরই এই ভাতা পাওয়ার অধিকার থাকার কথা। কিন্তু আনোয়ারার মতো একজন বিধবা এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ নারী বছরের পর বছর সেই ন্যূনতম অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বহুবার ধরনা দিয়েও ফল পাননি।

স্থানীয় সমাজসেবা কর্মকর্তা ভাতার কার্ড না পাওয়ার কারণ হিসেবে আবেদনপত্রে মোবাইল নম্বর না থাকার কথা বলেছেন। এটি কতটা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। একজন দরিদ্র নারীর পক্ষে মোবাইল ফোন রাখা সম্ভব কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি তখনই অর্থবহ হয়, যখন তা সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ও উপেক্ষিত মানুষটির দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। আনোয়ারার মতো মানুষদের জন্য সেই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলে রাষ্ট্রীয় সহায়তার উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। প্রকৃত উপকারভোগীকে খুঁজে বের করে সক্রিয়ভাবে সহায়তা নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব।

দেশে সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোতে এখনো অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে। আনোয়ারার মতো আর কোনো বৃদ্ধাকে যেন জীবনের শেষ প্রান্তে এসে রাষ্ট্রের ভাতার আশায় মানবেতর দিন কাটাতে না হয়, তা নিশ্চিত করা জরুরি।

সম্প্রতি