গত ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ফুলের তোড়া নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছিলেন রিকশাচালক আজিজুর রহমান। গণপিটুনির শিকার রিকশাচালককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে এক বছর আগের হত্যাচেষ্টা মামলা দেওয়া হয়। আদালত অবশ্য পরে তাকে জামিন দিয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে একজন সাধারণ নাগরিককে গ্রেপ্তার ও মামলা দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশে চলমান মামলা, গ্রেপ্তার ও জামিন প্রক্রিয়ার একটি নজির এই ঘটনা। গত বছর পাঁচ আগস্টের পর থেকে বহু মানুষকে হত্যা মামলা কিংবা বিস্ফোরণ মামলায় আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে কেবল সাবেক মন্ত্রী-এমপি বা নির্বাহী ক্ষমতার ব্যাক্তিই নন বিচারপতি থেকে শুরু করে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন।
অভ্যুত্থানের পর কেবল রাজধানীতেই মামলা হয়েছে ৭০৭টি। আর গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫,০৭৯ জন। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। ব্যাক্তিগত রেষারেষির জেরে মামলার কথাও শোনা যায়। আসামি করার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি এবং নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানির অনেক ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
গ্রেপ্তার ও জামিনের ক্ষেত্রে ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ বা পছন্দ-অপছন্দের অভিযোগ উঠেছে। কোনো কোনো আসামীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, কাউকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। কেউ দ্রুত জামিন পাচ্ছেন, কেউ দীর্ঘদিন ধরে বিনা বিচারে আটক রয়েছেন। এটা কি আইনের শাসন? আগের ব্যবস্থা থেকে পরিবর্তনটা কী হলো?
পুলিশের পক্ষ থেকে এর আগে বলা হয়েছে, কাউকে গ্রেপ্তারের আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে এবং যথাযথ প্রমাণ হাজির করতে হবে। সিআরপিসি আইনের ধারা সংশোধন করা হয়েছে। তবে সুফল কতটা মিলেছে সেটা একটা প্রশ্ন।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে মামলা, গ্রেপ্তার এবং জামিনের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাব নয়, বরং তথ্য-প্রমাণ ও আইনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদেরকে কাজ করতে হবে। তাহলেই আজিজুরদের মতো সাধারণ মানুষ আশ্বস্ত হতে পারবেন যে, রাষ্ট্র তাদের পাশে আছে। সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ নীতি এবং মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ বন্ধ না হলে জনগণের আস্থা ফিরবে না। আইনের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রতিটি মামলা ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।