খাগড়াছড়িতে সহিংসতা কি এড়ানো যেত না

খাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় আবারও আমরা দেখতে পেলাম, পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও আস্থাহীনতা কত সহজে উত্তেজনায় রূপ নিতে পারে। এক পাহাড়ি কিশোরীর ওপর নৃশংস দলবদ্ধ ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের বিচারের দাবিতে শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এক পর্যায়ে সংঘাতে রূপ নেয়। এর জের ধরেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জনজীবন অচল হয়ে পড়ায় প্রশাসন খাগড়াছড়ি সদর ও পৌরসভা এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে।

গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিটি নাগরিকের ন্যায়বিচার চাওয়া ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, খাগড়াছড়িতে প্রতিবাদ কর্মসূচি সহিংসতায় রূপ নিল কেন। এই সহিংসতা কি এড়ানো যেত না? সেখানে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোনো কাজে কি এমন কোনো বার্তা পৌঁছায় যে, বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখানো হচ্ছে। কারও কাজে কি মনে হয় যে, কোনো একটি জনগোষ্ঠীর দাবি-দাওয়া বা অধিকার উপেক্ষিত হচ্ছে?

ভিকটিম যেই হোক না কেন তার ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। অপরাধী যেই হোক না কেন তার আইনানুগ বিচার করতে হবে। জাতিগোষ্ঠী ভেদে কারও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার ক্ষুন্ন হতে পারে না। আবার কেউ অন্যায়-অপরাধ করে পার পেতে পারে না। সেটা হলে জাতিগত বিভাজন তৈরি হয়। সৃষ্টি হয় পারস্পরিক অবিশ্বাস-অনাস্থা।

অভিযোগ রয়েছে, পাহাড়ি-বাঙালি বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে কোনো কোনো গোষ্ঠী পাহাড়ে বারবার পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করে। আর এর খেসারত দিতে হয় সাধারণ মানুষকে।

আমরা মনে করি, যে কোনো অপরাধের বিচার চাইতে হবে আইন ও আদালতের মাধ্যমে। আবার প্রশাসনেরও দায়িত্ব, কোনো অপরাধের ঘটনায় দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করা, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা। খাগড়াছড়িতে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্য অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

১৪৪ ধারা জারি করে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্বকে সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে, যাতে কোনো পক্ষই অবিচারের শিকার না হয়। স্থানীয় জনসাধারণকে আস্থায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে কাজ করতে হবে।

সম্প্রতি