পাঠ্যবই সংকটের পুরোনো রোগ

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে আর কয়েক দিন বাকি। অথচ মাধ্যমিক স্তরের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এখনো সব পাঠ্যবই হাতে পাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবারও সময়মতো মাধ্যমিকের সব বই সরবরাহ করতে পারেনি। তথ্য অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের অনেক বই এখনো মাঠপর্যায়ে পৌঁছায়নি। সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই। এ নিয়ে সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

যথাসময়ে পাঠ্যবই না পৌঁছানো নতুন কোনো সমস্যা নয়। গত বছরও শিক্ষাবর্ষ শুরুর পর কয়েক মাস লেগেছিল সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছাতে। তখন বলা হয়েছিল, অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আগেভাগেই প্রস্তুতি নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। দরপত্র বাতিল, নতুন করে দরপত্র আহ্বান, অনুমোদনে দেরি-সব মিলিয়ে আবারও একই ধরনের জটিলতা দেখা দিয়েছে।

ভালো খবর হচ্ছে, প্রাথমিক স্তরে শতভাগ বই সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা নতুন বছরের শুরুতেই অসম অবস্থানে পড়ছে। কারও হাতে কিছু বই থাকবে, কারও হাতে থাকবে না। এতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পুরো জানুয়ারি মাস, এমনকি ফেব্রুয়ারিও অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এনসিটিবি অনলাইন সংস্করণে পাঠ্যবইয়ের পিডিএফ সংস্করণ প্রকাশ করছে। এটি ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে দেশের বাস্তবতায় সব শিক্ষার্থীর জন্য এটি কার্যকর সমাধান নয়। অনেক শিক্ষার্থীরই ইন্টারনেট সুবিধা নেই। আবার অনলাইনে বই পড়া সবার জন্য সহজও নয়। বিনা মূল্যের বই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই হলো-সব শিক্ষার্থীকে সমান সুযোগ দেওয়া।

এই সংকটের পেছনে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা রয়েছে। নিয়মিত চেয়ারম্যান না থাকা, দরপত্র প্রক্রিয়ায় দেরি এবং সময়মতো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। আর এর কুফল ভোগ করছে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হয় এমন কোনো ব্যবস্থাপনা আর গ্রহণযোগ্য নয়। ভবিষ্যতে যেন প্রতিবছর একই সংকট ফিরে না আসে, সে জন্য এনসিটিবির পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও দায়িত্বশীলতা ও সময়ানুবর্তিতা প্রয়োজন।

সম্প্রতি