alt

মতামত » সম্পাদকীয়

আবারও সাম্প্রদায়িক হামলা

: শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর ২০২১

আবারও ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি করা হলো। আর তাকে কেন্দ্র করে উস্কানি দিয়ে কয়েকটি জায়গায় মন্দিরে হামলা হলো। এই ঘটনা ঘটলো বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সময়। এতে এই উৎসবের সময় ওই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আর এই সাম্প্রদায়িক হামলায় কয়েকটি প্রাণও ঝরলো।

ঘটনার সূত্রপাত কুমিল্লার নানুয়ারদীঘির একটি পূজামন্ডপে প্রতিমার পায়ের কাছে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরআন পাওয়া গেছে এমন খবরে। ভোরবেলা এই দৃশ্য দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয়েছে। এবং তারা এসে ব্যবস্থাও নিয়েছেন। কিন্তু তারপরেই সেই ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়া হলো। আর এরপরই চাঁদপুর, কক্সবাজার, গাজীপুর, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে লক্ষ্মীনারায়ণ জিওর আখড়া মন্দিরে হামলার ঘটনায় হামলাকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে। সেই ঘটনায় চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। হাজীগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

কক্সবাজারের পেকুয়ায় একটি মিছিল থেকে মন্দিরে হামলার চেষ্টা চালানো হলে পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সে সময় হামলাকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশের ২২ জেলায় বিজিবি নামানো হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকজন মন্ত্রী বলেছেন, কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্য- স্বার্থান্বেষী মহলের উদ্দেশ্যমূলক কাজ এটি।

তবে এই ব্যাপারটা তো এমন নয় যে, এরকম উস্কানি দিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা এবারই প্রথম ঘটলো। রামু, ভোলা, সুনামগঞ্জ- এসব তো খুব দূর অতীতের ঘটনা নয়। কিন্তু ওই সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোর পরে কী হয়েছে? অপরাধীদের চিহ্নিত করে কি বিচার করা হয়েছে? নাকি ভুক্তভোগীরাই বরং ভুগেছেন।

অতীতের মতো এবারও ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু আগের ঘটনাগুলোর তদন্তে গঠিত কমিটিগুলোর ভূমিকা কী ছিল সেই প্রশ্ন উঠেছে। গত ডিসেম্বরে কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনায় কারা জড়িত ছিল সেটা কি জানা গেছে? সেই হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সেটা জানা জরুরি।

অভিযোগ রয়েছে, সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অনেককেই আসামি করা হয় না। মামলার তদন্ত নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। কোন কোন ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হলেও তারা কিছুদিনের মধ্যেই জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। বরং নিরপরাধ অনেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। আর গ্রেপ্তার করা হয় সুনামগঞ্জের ঝুমন দাশের মতো মানুষদের। আর রামুর উত্তম বড়ুয়াদের খোঁজ মেলে না। ঘটনার সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা যায় না।

সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা জরুরি। কিন্তু করবেটা কে? এ দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সরকারের। তারা কি সেই দায়িত্ব পালন করছে?

প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া হয় না। বছরের পর বছর এসব সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় করা মামলা যদি ঝুলিয়ে রাখা হয়, তাহলে এরকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে, আর ঝুমন দাশরা বলির পাঁঠা হবেন এবং উত্তম বড়ুয়ারা হারিয়ে যাবেন।

এই বিচারহীনতাই সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ করা ও টেকসই সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শারদীয় দুর্গোৎসব দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় ওই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এখন তাদের আতঙ্ক দূর করা ও নির্বিঘ্নে ধর্ম পালনের অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের তথা সরকারের।

শ্রীপুরের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ব্যবস্থা নিন

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে ক্লাস, পদক্ষেপ জরুরি

শিশু ধর্ষণচেষ্টা: সালিসের নামে প্রহসন কাম্য নয়

বিশুদ্ধ পানির প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ আমলে নিন

সুপেয় পানির জন্য মোরেলগঞ্জের মানুষের অপেক্ষার অবসান হবে কবে

কেন একজন নিরপরাধ মানুষকে কিসের আগুনে পুড়ে মরতে হলো

জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ সুরাহা করুন

রাজধানীতে প্রকাশ্যে হত্যা: আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ

নলবিলা খাল খনন করুন

অগ্নি-নিরাপত্তায় উদাসীনতা কাম্য নয়

কারেন্ট পোকা দমনে কৃষককে সহায়তা দিন

আলুর বাজারে নীরব বিপর্যয়

বিদ্যালয়ের মাঠ দখলমুক্ত করুন

টিলায় পাথর লুট : কার্যকর ব্যবস্থা নিন

ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবন সংস্কারে দ্রুত পদক্ষেপ দরকার

ডেঙ্গু মোকাবিলায় দায়িত্বহীনতা আর নয়

সার সংকট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ দরকার

নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন

প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা যেন অবহেলার শিকার না হয়

প্রাথমিকে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিল : একটি ভুল বার্তা

ঘিওর ভেটেরিনারি হাসপাতালের সংকট দূর করুন

ভূমি অফিসে সেবাপ্রার্থীদের দুর্ভোগ

একটি পাকা সেতুর জন্য অপেক্ষা

নদী থেকে অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধ করুন

ইছামতী নদীকে রক্ষা করুন

সন্দেহবশত পিটিয়ে হত্যা: দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিন

জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ে দুর্ভোগের অবসান হোক

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কেন থামছে না?

সারের সংকট আর কত

সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ করুন

কক্সবাজার সৈকত রক্ষা করুন

ঐকমত্য কমিশনের উদ্দেশ্য কী?

সড়ক দখলমুক্ত করা জরুরি

কৃষকদের পাশে থাকুন

প্রাথমিক শিক্ষায় সংকট

অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণে ধীরগতি: ঝুঁকিতে মানুষ ও গবাদিপশু

tab

মতামত » সম্পাদকীয়

আবারও সাম্প্রদায়িক হামলা

শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর ২০২১

আবারও ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি করা হলো। আর তাকে কেন্দ্র করে উস্কানি দিয়ে কয়েকটি জায়গায় মন্দিরে হামলা হলো। এই ঘটনা ঘটলো বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সময়। এতে এই উৎসবের সময় ওই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আর এই সাম্প্রদায়িক হামলায় কয়েকটি প্রাণও ঝরলো।

ঘটনার সূত্রপাত কুমিল্লার নানুয়ারদীঘির একটি পূজামন্ডপে প্রতিমার পায়ের কাছে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরআন পাওয়া গেছে এমন খবরে। ভোরবেলা এই দৃশ্য দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয়েছে। এবং তারা এসে ব্যবস্থাও নিয়েছেন। কিন্তু তারপরেই সেই ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়া হলো। আর এরপরই চাঁদপুর, কক্সবাজার, গাজীপুর, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে লক্ষ্মীনারায়ণ জিওর আখড়া মন্দিরে হামলার ঘটনায় হামলাকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে। সেই ঘটনায় চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। হাজীগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

কক্সবাজারের পেকুয়ায় একটি মিছিল থেকে মন্দিরে হামলার চেষ্টা চালানো হলে পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সে সময় হামলাকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশের ২২ জেলায় বিজিবি নামানো হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকজন মন্ত্রী বলেছেন, কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্য- স্বার্থান্বেষী মহলের উদ্দেশ্যমূলক কাজ এটি।

তবে এই ব্যাপারটা তো এমন নয় যে, এরকম উস্কানি দিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা এবারই প্রথম ঘটলো। রামু, ভোলা, সুনামগঞ্জ- এসব তো খুব দূর অতীতের ঘটনা নয়। কিন্তু ওই সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোর পরে কী হয়েছে? অপরাধীদের চিহ্নিত করে কি বিচার করা হয়েছে? নাকি ভুক্তভোগীরাই বরং ভুগেছেন।

অতীতের মতো এবারও ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু আগের ঘটনাগুলোর তদন্তে গঠিত কমিটিগুলোর ভূমিকা কী ছিল সেই প্রশ্ন উঠেছে। গত ডিসেম্বরে কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনায় কারা জড়িত ছিল সেটা কি জানা গেছে? সেই হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সেটা জানা জরুরি।

অভিযোগ রয়েছে, সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অনেককেই আসামি করা হয় না। মামলার তদন্ত নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। কোন কোন ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হলেও তারা কিছুদিনের মধ্যেই জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। বরং নিরপরাধ অনেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। আর গ্রেপ্তার করা হয় সুনামগঞ্জের ঝুমন দাশের মতো মানুষদের। আর রামুর উত্তম বড়ুয়াদের খোঁজ মেলে না। ঘটনার সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা যায় না।

সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা জরুরি। কিন্তু করবেটা কে? এ দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সরকারের। তারা কি সেই দায়িত্ব পালন করছে?

প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া হয় না। বছরের পর বছর এসব সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় করা মামলা যদি ঝুলিয়ে রাখা হয়, তাহলে এরকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে, আর ঝুমন দাশরা বলির পাঁঠা হবেন এবং উত্তম বড়ুয়ারা হারিয়ে যাবেন।

এই বিচারহীনতাই সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ করা ও টেকসই সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শারদীয় দুর্গোৎসব দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় ওই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এখন তাদের আতঙ্ক দূর করা ও নির্বিঘ্নে ধর্ম পালনের অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের তথা সরকারের।

back to top