লোকালয়ে এসে হাতিগুলোকে মারা পড়তে হচ্ছে কেন

শেরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একটি হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। গারো পাহাড়ের সংরক্ষিত বন থেকে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে এসে হাতিটি দলছুট হয়ে পড়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ নিয়ে গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

বনে থাকলে না খেয়ে মরতে হয়। আর লোকালয়ে এলে মানুষের অমানবিক কর্মকান্ডের শিকার হতে হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বন ছেড়ে হাতি বা অন্য প্রাণীকে লোকালয়ে আসতে হয় কেন। বন ছাড়ার পেছনেও মানুষের নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা দায়ী। নির্বিচারে মানুষ বন ধ্বংস করে চলছে।

গণমাধ্যমে প্রকশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গারো পাহাড়ে মানুষ অবৈধভাবে বসতি গড়ে তুলে সবজি ও ফসল চাষ করছে। সেখানে হাতি এলে তারা বিষপ্রয়োগ করে অথবা বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে মেরে ফেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাতির আক্রমণ ঠেকাতে স্থানীয় বাসিন্দারা অবৈধভাবে জিআই তারের ঘের দিয়ে জেনারেটরের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়। ফলে হাতি সেখানে গেলেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। গত শনিবার একইভাবে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার আজগর শাহারা এলাকায় একটি বন্যহাতির মৃত্যু হয়। তাছাড়া গত মঙ্গলবার ভোরে কক্সবাজারের চকরিয়ায় সংরক্ষিত বনে গুলি করে একটি হাতিকে মেরে ফেলা হয়।

শুধু হাতি নয় বানরসহ অন্যান্য প্রাণীর অস্তিত্বও বিপন্ন হয়ে পড়েছে। প্রায়ই তারা বন ছেড়ে লোকালয়ে এসে মানুষের নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে। আবার বন্যহাতির কারণে মানুষও ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে। শেরপুর বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত হাতির আক্রমণে ২৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এ সময় গারো পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ২৫টি হাতি মারা গেছে। শেরপুর ছাড়াও ময়মনসিংহ, জামালপুর এবং কক্সবাজারসহ তিন পার্বত্য জেলায় বন্যহাতি বছরের বিভিন্ন সময় লোকালয়ে চলে আসে। বন্যহাতির কারণে গত ১০ বছরে এসব এলাকায় প্রায় অর্ধশত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, ফল-ফসল ও বসতভিটার ক্ষতি তো হয়েছেই।

মানুষ ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর নানা চেষ্টা করে। তবে এমন কোন চেষ্টাকে কিছুতেই সমর্থন করা যায় না যার ফলে হাতি মারা পড়ে। বন বিভাগকে এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে হাতি বা অন্য কোন বন্যপ্রাণীর লোকালয়ে আসার প্রয়োজন না হয়। বনে খাদ্যের জোগান নিশ্চিত হলে তাদের লোকালয়ে আসার প্রয়োজন পড়বে না। এজন্য নির্বিচারে বন ধবংস বন্ধ করা জরুরি। বন্যপ্রাণীর জন্য আর কিছু করতে হবে না, মানুষ যেন বন ধ্বংস না করে সেটা নিশ্চিত করলেই চলবে। তাহলে খাবারের জন্য হাতিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের আর লোকালয়ে আসতে হবে না। বনই তাদের খাবারের জোগান দেবে।

‘সম্পাদকীয়’ : আরও খবর

» গোবিন্দগঞ্জে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি দখলের অভিযোগ আমলে নিন

» আত্রাই নদীর বালু লুট বন্ধ করুন

» ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মানুষ হত্যা: কঠোর ব্যবস্থা নিন

» অবৈধ ইটভাটা: প্রশাসনের দুর্বলতা ও পরিবেশের সংকট

» ফসলি জমি রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিন

» শেষ না হওয়া সেতু, শেষ না হওয়া ভোগান্তি

» সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে হামলা: আদি ও অকৃত্রিম ফ্যাসিবাদের জঘন্য রূপ

» পাহাড় কেটে কেন পানের বরজ?

» মতপ্রকাশের জন্য গ্রেপ্তার: গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়

» সাহাগোলা রেলওয়ে স্টেশনে জনবল সংকট দূর করুন

» চাঁদপুর সেচ প্রকল্প রক্ষায় ব্যবস্থা নিন

সম্প্রতি